মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নেপালে (Nepal) প্রবল ছাত্র-যুব আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত পিছু হটল সরকার। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সোমবার গভীর রাতে ঘোষণা করে, সমাজ মাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। মাত্র তিন দিন আগে সরকার ফেসবুক, এক্স-সহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল (Nepal Government)। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত এবং ৩০০-র বেশি আহত হয়েছেন।
নেপালের গণ আন্দোলন
প্রথমে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল অনলাইনে, কিন্তু অচিরেই তা রূপ নেয় বৃহত্তর গণ আন্দোলনে (Nepal)। রাজধানী কাঠমান্ডুর সংসদ ভবনের সামনে থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নামে, অনেকেই স্কুল-কলেজের পোশাকেই। পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। বিক্ষোভকারীরা এদিন স্লোগান তোলে— “দুর্নীতি বন্ধ করো, আমাদের কণ্ঠস্বর দমন কোরো না।”
চাপের মুখে পিছু হঠে নেপাল সরকার
প্রধানমন্ত্রী অলি শুরুতে কড়া সুরে বলেন, আন্দোলনের চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করবেন না। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। চাপে পড়ে জরুরি বৈঠক ডাকে নেপালের মন্ত্রিসভা। বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক নৈতিক দায় স্বীকার করে ইস্তফা দেন। বৈঠকের পর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং জানান, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেন (Nepal Government)।
কাঠমান্ডু-সহ একাধিক শহরে কার্ফু জারি করা হয়
এই আবহে কাঠমান্ডু-সহ একাধিক শহরে কার্ফু জারি করা হয়। ভারত সীমান্তবর্তী ভৈরহাওয়া শহরেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতেও সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। যদিও এই আন্দোলনকে (Nepal) অনেকেই নেপালের তরুণ প্রজন্মের বিদ্রোহ বলে আখ্যা দিয়েছেন, তবে শুধু তরুণ নয়, মধ্যবয়সি থেকে প্রবীণ নাগরিকরাও এতে যোগ দেন। অনেকের মতে, এটি কেবল সমাজ মাধ্যমের পুনরায় চালুর আন্দেলন নয়, বরং দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে এক বৃহত্তর গণ আন্দোলন।
১৫ দিনের মধ্যে হিংসা ও হত্যার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করা হয়েছে
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অগাস্ট নেপাল সরকার জানায়, সব সমাজ মাধ্যমকে সাত দিনের মধ্যে সরকারের খাতায় নথিভুক্ত হতে হবে। ৩ সেপ্টেম্বর সেই সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। অধিকাংশ মাধ্যমই নির্দেশ মানেনি। ফলে ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুক, এক্স, হোয়াটসঅ্যাপ-সহ মোট ২৬টি অ্যাপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ইতিমধ্যেই নেপালের নানা অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। তবে টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সেই প্ল্যাটফর্ম দিয়েই প্রতিবাদকারীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে দাবি করা হয়েছে, এক্স সমাজমাধ্যমে এমন কিছু মন্তব্য উঠে এসেছিল যা জাতীয় সার্বভৌমত্বকে অসম্মান করে। জানা গিয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে হিংসা ও হত্যার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
Leave a Reply