NISAR: সহজ হবে দুর্যোগ মোকাবিলা! ভারত-মার্কিন যৌথ উদ্যোগে শ্রীহরিকোটা থেকে সফল উৎক্ষেপণ নাইসার-এর

nisar us india nasa isro satelite mission takes to the sky successfully

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহাকাশে পাড়ি দিল নাইসার (NISAR)। বুধবার, বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে, শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে জিএসএলভি-এমকে-২ (GSLV-MkII) রকেটের সাহায্যে এই শক্তিশালী স্যাটেলাইট মহাকাশে পাড়ি দিল। নাসা-ইসরো সিন্থেটিক অ্যাপারেচার রেডার (Nasa Isro Synthetic Aperture Radar) মহাকাশে ভারতের নয়া মাইলফলক। নিসার বিশ্বের প্রথম ডুয়াল-ফ্রিকোয়েন্সি সিন্থেটিক অ্যাপারেচার রেডার স্যাটেলাইট। এতে নাসার এল-ব্যান্ড রেডার (L-band radar) এবং ইসরোর এস-ব্যান্ড রেডার (S-band radar) দু’টো একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। পৃথিবী থেকে ৭৪৩ কিমি দূরে সান-সিনক্রোনাস অরবিটে (এসএসও) ৯৮.৪০ ডিগ্রি কোণে প্রতিস্থাপন করা হয় জিএসএলভি-এফ১৬ (GSLV-F16) রকেট ৷ নাইসার-এর ওজন ২হাজার ৩৯৩ কেজি ৷

প্রথম ৯০ কাজ করবে না নিসার

ইসরো সূত্রে খবর, উৎক্ষেপণের পর প্রথম ৯০ দিন নাইসার (NISAR) তার কাঙ্ক্ষিত বৈজ্ঞানিক কাজ শুরু করবে না। এই সময়টিকে বলা হয় ‘কমিশনিং’ বা ইন-অরবিট চেকআউট (IOC) পর্ব, যেখানে স্যাটেলাইট এবং এর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিকে পূর্ণ প্রস্তুতির জন্য পরীক্ষা ও ক্যালিব্রেশন করা হয়। নাসা ও ইসরোর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের পর তিন মাসব্যাপী কমিশনিং পর্বে থাকবে। এই সময় স্যাটেলাইটটি বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত চেক ও টেস্টের মধ্য দিয়ে যাবে, যাতে তা নিখুঁতভাবে কাজের উপযোগী হয়ে ওঠে। এই ৯০ দিনের মধ্যে নিসার কক্ষপথে নিজেকে স্থিতিশীল করবে, সমস্ত যন্ত্রপাতি ধাপে ধাপে সক্রিয় করা হবে এবং বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালিব্রেশন শেষ করা হবে। এরপরই এটি কাজ শুরু করবে। এই ধৈর্যশীল প্রস্তুতি পর্বই নাইসারকে তার নির্ভুল বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।

কীভাবে কাজ করবে নিসার

নাইসার (NISAR) থেকে পাওয়া সমস্ত তথ্য ওপেন-সোর্স হবে। গবেষক, বিজ্ঞানী, জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা সহজেই সমস্ত তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এই উপগ্রহ প্রতি ৯৭ মিনিটে একবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে। এই প্রদক্ষিণের মধ্যে দিয়ে মাত্র ১২ দিনে নাইসার পুরো পৃথিবীর স্থলভাগ ও বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চলের একটি ম্যাপ তৈরি করে ফেলতে পারবে। যা বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণায় কাজে আসবে। নাইসার ব্যবহার করে পৃথিবীর পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র, বায়ুমণ্ডল, বনজঙ্গল, হিমবাহ, ভূকম্পন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ করবে। ভূপৃষ্ঠে কয়েক মিলিমিটারের পরিবর্তনও ধরা পড়বে এই কৃত্রিম উপগ্রহে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বছরের যে কোনও মরসুমে, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা কিংবা দিন-রাত নির্বিশেষে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর উচ্চমানের ছবি তুলতে পারবে এই কৃত্রিম উপগ্রহ। আর সে কারণেই বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ, কৃষি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ‘নাইসার’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ভারতের জন্য লাভজনক

ইসরোর এই পদক্ষেপে ফের ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিক উন্মোচন করল। এই মিশনের জন্য মোট খরচ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার)। এর মধ্যে ভারতের অংশ ৭৮৮ কোটি টাকা (প্রায় ৯৬ মিলিয়ন ডলার)। এর ফলে ভারতে দুর্যোগ মোকাবিলার কাজ সহজ হবে। এ ছাড়াও হিমালয়ের হিমবাহ কত দ্রুত গলছে, কৃষিতে জলের সঠিক ব্যবহার কী ভাবে করা যাবে, তা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে। নাইসার-এর প্রাপ্ত তথ্য ভারতকে আগে থেকে বন্যা, ভূমিকম্প ও ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, ‘‘এটিই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এবং নাসা-র তরফে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণের প্রথম যৌথ উদ্যোগ। তাই এই অভিযানকে ভারতের আন্তর্জাতিক স্তরে বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসাবে দেখা হচ্ছে।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেন, এই অভিযান কেবল একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণই নয়, বরং বিজ্ঞান এবং বিশ্বকল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দু’টি দেশ যৌথ ভাবে কী কী করে দেখাতে পারে তার প্রতীক।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share