Pahalgam Terror Attack: নিরীহ হিন্দু নাগরিকদের বেছে বেছে নিশানা! গত আড়াই দশকে বার বার ইসলামিক সন্ত্রাসের শিকার কাশ্মীর

Pakistan opens fire along LoC India Three days after the Pahalgam attack

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “কাশ্মীরী পণ্ডিতোঁ, কাশ্মীর ছোড়ো”  ভূস্বর্গ কাশ্মীরে সন্ত্রাসের একটাই ধর্ম, সন্ত্রাসীদের একটাই ধর্ম। ইসলামিক সন্ত্রাসীদের একটাই স্বর “জেহাদি হও, না হয় মরো, নইলে কাশ্মীর ছাড়ো।” কখনও এলোপাথাড়ি গুলি, কখনও গ্রেনেড, আবার কখনও গাড়িবোমা! শুধু পহেলগাঁও নয়, গত ২৫ বছরে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে ভূস্বর্গ (Jammu Kashmir)। মঙ্গলবার ফের এক ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার সাক্ষী থাকল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও (Pahalgam Terror Attack)। যেখানে সবুজে ঘেরা বৈসরণ উপত্যকায় সাধারণ পর্যটকদের লক্ষ্য করে নির্দ্বিধায় এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করল জঙ্গিরা৷ বেছে বেছে নিশানা করা হল নিরীহ হিন্দু নাগরিকদের৷ এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান।

গত সিকি শতকে বারবার রক্তাক্ত ভূস্বর্গ

কাশ্মীর (Jammu Kashmir) উপত্যকায় বারবার সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন হিন্দু তথা অমুসলিমরা। সাধারণ মানুষ, তীর্থযাত্রী, নিরাপত্তা কর্মী, শ্রমিক—সবাইকে একত্রে ক্ষতবিক্ষত করেছে ইসলামিক জঙ্গিরা। গত দুই দশকের নৃশংস হামলাগুলো প্রমাণ করে, এই সহিংসতার প্রকৃতি নিছক নিষ্ঠুরতা, ভয় দেখানো, আতঙ্ক সৃষ্টি।

শিখদের উপর হামলা

২০০০ সালের ২১ মার্চ, অনন্তনাগের ছত্তিসিংপোড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। হামলা চালানো হয় সংখ্যালঘু শিখদের উপর। মারা যান ৩৬ জন মানুষ। ওই বছরের অগাস্টে নুনওয়ান বেসক্যাম্পের কাছে হামলা হয়। ঘটনায় ২৪ জন অমরনাথ তীর্থযাত্রী সহ মোট ৩২ জন মারা যান।

বিধানসভা ভবনে আত্মঘাতী হামলা

২০০১ সালের ১ অক্টোবর, শ্রীনগরে জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu Kashmir) রাজ্য বিধানসভা ভবনে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারান ৩৬ জন, যার মধ্যে ছিলেন নিরাপত্তা কর্মী এবং নিরীহ সাধারণ নাগরিক। রাজনৈতিক পরিকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুকে লক্ষ্য করে এই হামলা ছিল নজিরবিহীন। ওই বছরই অনন্তনাগের শেশনাগ বেসক্যাম্পে ফের অমরনাথ যাত্রীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এবার প্রাণ হারান ১৩জন।

অমরনাথ যাত্রীদের উপর হামলা

এর ঠিক এক বছর পরে, ২০০২ সালে, চন্দনওয়ারি বেস ক্যাম্পে অমরনাথ যাত্রার সময় এক জঙ্গি হামলায় নিহত হন ১১ জন তীর্থযাত্রী। ধর্মীয় আস্থার জায়গাকেও রেহাই দেয়নি জঙ্গিরা। ২০০২ সালেরই ২৩ নভেম্বর, দক্ষিণ কাশ্মীরের লোয়ার মুন্ডায় জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়েতে একটি শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণে প্রাণ যায় ১৯ জনের। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৯ জন নিরাপত্তা কর্মী, ৩ জন নারী ও ২ জন শিশু।

কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর হামলা

২০০৩ সালের মার্চ মাসে পুলওয়ামার নন্দিমার্গ গ্রামে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের বর্বর হামলায় নিহত হন ২৪ জন কাশ্মীরি পণ্ডিত, যাদের মধ্যে ১১ জন নারী ও ২ জন শিশু ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ড কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের উপত্যকা ছাড়ার প্রক্রিয়াকে আরও গতি দেয়।

পুলওয়ামার এক জনবহুল বাজারে হামলা

২০০৫ সালের ১৩ জুন পুলওয়ামার এক জনবহুল বাজারে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি বিস্ফোরিত হলে প্রাণ যায় ১৩ জনের। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ২ জন স্কুল পড়ুয়া ও ৩ জন সিআরপিএফ জওয়ান। আহত হন ১০০-র বেশি মানুষ।

পর্যটক বোঝাই বাসে হামলা

২০০৬ সালের ২৬ মে, শ্রীনগরের উপকণ্ঠে জাকুরার বাটাপোরা এলাকায় সন্ত্রাসীবাদীরা একটি পর্যটক বোঝাই বাসে গ্রেনেড ছুড়লে চার জন পর্যটক নিহত এবং ছ’জন আহত হয়েছিলেন। নিহতেরা ছিলেন গুজরাটের বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে, সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সে বছরেরই ১১ জুলাই শ্রীনগরেরই লালচকে পর্যটক বোঝাই বাসে ফের গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক জন। সে দিন শ্রীনগরের বিভিন্ন প্রান্তে পাঁচটি হামলায় মোট আট জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৬ সালেরই জুনে কুলগামে ৯ জন বিহারী ও নেপালি শ্রমিককে হত্যা করে জঙ্গিরা, স্পষ্ট করে দেয়, এই সন্ত্রাস কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং সমাজ-অর্থনীতিক কাঠামোকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা।

মানবিকতা নেই, নেই কোনও ধর্মীয় বোধ

২০১৭ সালের ১০ জুলাই, কুলগামে ফের অমরনাথ যাত্রার বাসে হামলা হয়। নিহত হন ৮ জন তীর্থযাত্রী। দক্ষিণ কাশ্মীরের বোয়েতাং অঞ্চলে ঘটে এই ঘটনা। বছর গড়ালেও হুমকি কাটেনি। বারবার রক্তাক্ত হয়েছে ভূস্বর্গ (Jammu Kashmir)। ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকেরা খুন হয়েছেন হামেশাই। অমরনাথ, বৈষ্ণোদেবী বা অন্যান্য ধর্মস্থানে আগত পুণ্যার্থীরাও বার বার হামলার শিকার হয়েছেন। প্রায় দু’দশকের ব্যবধানে কাশ্মীর উপত্যকার ফের মঙ্গলবার এত বড় হামলার (Pahalgam Terror Attack) শিকার হলেন পর্যটকেরা। এই ধারাবাহিক হামলাগুলোর দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়, সন্ত্রাসবাদের কোনও মানবিকতা নেই, নেই কোনও ধর্মীয় বোধ। ধর্মের নামে যারা হত্যা চালায়, তারা মানবতা থেকেই বিচ্যুত। তারা কাশ্মীরের ভালো চায় না। কাশ্মীরীদের রুজি-রুটি পর্যটন সেখানেই ধাক্কা দিল জঙ্গিরা। আসলে সন্ত্রাসের লক্ষ্যই হল জন্নত-এ-কাশ্মীরকে জাহান্নামে পরিণত করা।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share