মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার (Pahalgam Terror Attack) পর থেকে জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে তল্লাশি অভিযানে নেমেছে নিরাপত্তাবাহিনী। জঙ্গিদের তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। গুঁড়িয়েও দেওয়া হচ্ছে তাদের বাড়ি। প্রশাসন সূত্রে খবর, শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের ঘর ধ্বংসে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিনামাইট ও প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ। তল্লাশি অভিযানে জঙ্গিদের একটি বাঙ্কারেরও হদিস পেয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী।
কাদের বাড়ি ধ্বংস করা হল
দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলার ওয়ানডিনা গ্রামে আদনান শফির বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে গত বছর সন্ত্রাসবাদী দলে যোগ দিয়েছিল। একইভাবে পুলওয়ামা জেলায় উড়িয়ে দেওয়া হয় আরেক সক্রিয় জঙ্গি আমির নাজিরের বাড়ি। উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায় ধ্বংস করা হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে সক্রিয় লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি জামিল আহমদ শেরগোজরির বাড়ি। শুক্রবার ধ্বংস করা হয়েছিল পুলওয়ামার কচিপোরা এলাকার হারিস আহমদের (সক্রিয় ২০২৩ সাল থেকে), শোপিয়ানের চোটিপোরা গ্রামের শাহিদ আহমদ কুটাই (সন্ত্রাসবাদে যোগ দেয় মার্চ ২০২৩), এবং পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি ফারুক তিদওয়ার বাড়ি।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা
প্রশাসনের মতে, দক্ষিণ কাশ্মীরের চার জেলা থেকে বহু জঙ্গি সমর্থকদের আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাহির আহমদ কুমার ও শবির আহমেদ গনাই-কে জননিরাপত্তা আইনের (PSA) অধীনে আটক করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, “এই দুজন সক্রিয়ভাবে জঙ্গি কার্যকলাপে সহায়তা করছিল — যেমন চলাফেরা, আশ্রয়, লজিস্টিক সহায়তা। এদের কাজই ছিল তরুণদের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা।” সূত্রের খবর, পহেলগাঁও এবং পুলওয়ামাকাণ্ডের সঙ্গে যে সব স্থানীয় জঙ্গির নাম উঠে এসেছে, সে রকম ১৪ জঙ্গির একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ বার সেই জঙ্গিদের খুঁজে বার করে খতম করার কাজ শুরু করে দিয়েছে সেনা।
সেই তালিকায় রয়েছে—
১। আদিল রহমান দেন্তু: জম্মু-কাশ্মীরের সপোরের লস্কর কমান্ডার। ২০২১ সাল থেকে সক্রিয়। আদিলের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী।
২। আসিফ আহমেদ শেখ: জইশ জঙ্গি। অবন্তীপুরার জেলা কমান্ডার। ২০২২ সাল থেকে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত।
৩। এহসান আহমেদ শেখ: পুলওয়ামার লস্কর জঙ্গি।
৪। হরিশ নাজির: পুলওয়ামার বাসিন্দা। লস্কর জঙ্গি।
৫। আমির নাজির ওয়ানি: জইশ জঙ্গি। পুলওয়ামায় সক্রিয়।
৬। ইয়াবর আহমদ ভট্ট: জইশ জঙ্গি। পুলওয়ামায় সক্রিয়।
৭। আসিফ আহমেদ কন্ডে: সোপিয়ানের বাসিন্দা। ২০১৫ থেকে হিজবুল জঙ্গিগোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছে। পাক জঙ্গিদের মদতদাতা।
৮। নাসির আহমেদ ওয়ানি: লস্করের সক্রিয় সদস্য। সোপিয়ানের বাসিন্দা।
৯। শাহিদ আহমেদ কুটে: লস্কর আর টিআরএফের সঙ্গে যুক্ত। সোপিয়ানে সক্রিয়।
১০। আমির আহমেদ দার: লস্কর আর টিআরএফের সক্রিয় সদস্য।
১১। আদনান সফি দার: ২০২৪ সালে লস্কর আর টিআরএফ-এ যোগ দিয়েছে। পাক জঙ্গিদের মদতদাতা।
১২। জুবেইর আহমেদ ওয়ানি: হিজবুল জঙ্গি। অনন্তনাগে হিজবুলের অপারেশনাল কমান্ডার।
১৩। হারুন রশিদ গনি: হিজবুল জঙ্গি। অনন্তনাগে সক্রিয়। পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে সম্প্রতি।
১৪। জুবেইর আহমেদ গনি: লস্কর জঙ্গি। কুলগামে সক্রিয়।
উদ্ধার প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র
গত ২২ তারিখ পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন হিন্দু পর্যটককে হত্যা করে জঙ্গিরা। ধর্ম জেনে বেছে বেছে খুন করা হয় বলে সেখানে উপস্থিত নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান। এরপর থেকেই উপত্যকাজুড়ে চিরুনি তল্লাশিতে নেমেছে সেনা। চলছে অভিযান। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়ার পরেই উপত্যকার সেদোরি নালা মুস্তাকাবাদ মছিলের জঙ্গলে সম্প্রতি অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকেই জঙ্গিদের বাঙ্কারের হদিসও মিলেছে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ। সেগুলির মধ্যে রয়েছে পাঁচটি একে-৪৭ রাইফেল, আটটি একে-৪৭ ম্যাগাজিন, একটি পিস্তল, একটি পিস্তল ম্যাগাজিন, একে-৪৭-এর ৬৬০টি কার্তুজ এবং এম৪ বন্দুকের ৫০টি কার্তুজ। পহেলগাঁও জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার অন্তর্গত। গোটা জেলা জুড়ে তল্লাশি অভিযানে এখনও পর্যন্ত আটক হয়েছেন ১৭৫ জন। নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে খবর, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জঙ্গিদের গ্রেফতারই লক্ষ্য
পহেলগাওয়ে জঙ্গি হামলার (Pahalgam Terror Attack) পর সন্ত্রাস দমনে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। গত কয়েক দিনে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে জম্মু কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে সুরক্ষা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, জঙ্গিদের কাউকে রেয়াত করা হবে না। এ বার সেই কাজই শুরু হয়ে গেল জম্মু-কাশ্মীরে। তবে সেনার তরফে এও জানানো হয়েছে, শুধু জঙ্গিদের বাড়ি ধ্বংস করা নয়, তাদের গ্রেফতার করাটাই মূল উদ্দেশ্য। কুলগামের কাইমো এলাকার ঠোকরপোরা থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা জঙ্গিদের সহযোগী ছিল বলে সেনার অনুমান।
Leave a Reply