মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “কার টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে – সেটা ডলার হোক কিংবা পাউন্ড, কালো টাকা হোক বা সাদা – তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কিন্তু সেই টাকায় যে উৎপাদন হবে, তার ঘাম যেন আমার দেশের মানুষের হয়।” এমনই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। দেশবাসীকে স্বদেশি পণ্য কিনতে আগেও উদ্বুদ্ধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার ফের একবার গুজরাটের আমেদাবাদে প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরতার চেতনার (US Tariffs) আহ্বান জানিয়ে নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের দেশীয় পণ্য কেনার আহ্বান জানান। এদিন হানসালপুরে মারুতি সুজুকির প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি ই-ভিটারা উদ্বোধনের পর বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিশ্ব এখন এমন বৈদ্যুতিক গাড়ি চালাবে, যেগুলি তৈরি হবে ভারতে।” দেশবাসীকে স্বদেশি পণ্য কেনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিনিয়োগ কারা করছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আসল বিষয় হল, যে পরিশ্রম করে পণ্যটি তৈরি হচ্ছে, তা যেন ভারতীয়দের হয়।” এভাবে মারুতি সুজুকিও একটি স্বদেশি কোম্পানি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুজুকি মোটরসের প্রতিশ্রুতি (PM Modi)
সুজুকি মোটরস আগামী পাঁচ থেকে ছ’বছরে ভারতে ৭০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রতিনিধি পরিচালক ও প্রেসিডেন্ট তোশিহিরো সুজুকি। তিনি বলেন, “গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুজুকি ভারতের চলাচলের যাত্রায় গর্বের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ভারতের টেকসই সবুজ পরিবহণের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করতে এবং বিকশিত ভারত (Viksit Bharat) নির্মাণে অবদান রাখতে।” এর ঠিক একদিন আগে সোমবার এই আমেদাবাদেই একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প উদ্বোধনের পর এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সবার উচিত মেড ইন্ডিয়া পণ্য কেনার মন্ত্র অনুসরণ করা।” তিনি (PM Modi) বলেন, “ব্যবসায়ীদের উচিত তাঁদের দোকান বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বড় বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া, যেখানে লেখা থাকবে যে তাঁরা শুধু স্বদেশি পণ্যই বিক্রি করেন।” এই অনুষ্ঠানে কংগ্রেসকেও নিশানা করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের আমলে দেশকে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল করে তোলা হয়েছিল শুধুমাত্র আমদানি কেলেঙ্কারিতে লিপ্ত হওয়ার জন্য (US Tariffs)।”
মার্কিন শুল্কহারের চোখ রাঙানি
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এহেন মন্তব্য এল এমন একটা সময়ে, যখন আমেরিকা ভারতীয় পণ্যের ওপর দু’দফায় মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, রাশিয়ান তেলের অব্যাহত আমদানির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানাও আরোপ করা হয়েছে, যা বুধবার ২৭ অগাস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (PM Modi) দুই দেশের মধ্যে আলোচনা বাস্তবায়িত না হওয়ার একটি কারণ হল, আমেরিকান দুগ্ধজাত পণ্য এবং জেনেটিক্যালি মডিফায়েড ফসল আমদানিকে ঘিরে দুই দেশের মতভেদ। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর কাছে কৃষকদের স্বার্থই সর্বাগ্রে। তিনি বলেন, “মোদির কাছে কৃষক, পশুপালক এবং ক্ষুদ্র শিল্পের স্বার্থই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ওপর চাপ বাড়তে পারে, কিন্তু আমরা সবটাই সহ্য করব (US Tariffs)।”
অপারেশন সিঁদুর
অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে (এই অভিযানে ভারত পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের নটি ঘাঁটিতে আঘাত হানে) প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত আর জঙ্গি ও তাদের প্রভুদের ছেড়ে কথা বলে না। অপারেশন সিঁদুর আমাদের সেনাদের বীরত্ব এবং সুদর্শন চক্রধারী মোহনের ভারতের দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। আজ আমরা জঙ্গি এবং তাদের প্রভুদের ছেড়ে দিই না, সে তারা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন।”
উন্নয়ন যজ্ঞ
এদিন প্রধানমন্ত্রী (PM Modi) আমেদাবাদে ৫,৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন। গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে মহেসানা–পালানপুর রেলপথ ডাবল লাইন, কালোল–কাড়ি–কাটোশন এবং বেচরাজি–রানুজ রেলপথের গেজ পরিবর্তন, এবং কাটোশন রোড থেকে সবরমতী পর্যন্ত নতুন যাত্রিবাহী ট্রেন চালুর সূচনা। তিনি রামাপীর নো টেকরোয় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় বস্তি পুনর্নির্মাণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন এবং গান্ধীনগরে রাজ্য-স্তরের ডেটা স্টোরেজ সেন্টার প্রতিষ্ঠা ও সারদার প্যাটেল রিং রোড প্রশস্তকরণের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন (US Tariffs)।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে দিল্লির কুর্সিতে বসেই প্রধানমন্ত্রী ডাক দিয়েছিলেন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’র। প্রধানমন্ত্রীর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নানা প্রোডাক্ট উৎপাদন করছে ভারত থেকে। ফলে ক্রমেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রোডাক্টের। মঙ্গলবার মারুতি সুজুকির ই-ভিটার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘মেড ফর ওয়ার্ল্ডে’র স্লোগানও দেন প্রধানমন্ত্রী (PM Modi)।
Leave a Reply