মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “এই দিনটি আমাদের দুই দেশের ইতিহাস ও ত্যাগের দলিল। যা আমাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত তৈরি করেছে।” বাংলাদেশের (1971 Liberation War) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে এ কথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। ইউনূসকে লেখা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সব সময় আমাদের সম্পর্কের পথপ্রদর্শক আলো। আমরা এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
উপেক্ষিত মুজিব (PM Modi)
বুধবার, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করে বাংলাদেশ। এদিন ইউনূস সরকার স্বাধীনতা ঘোষণার কথা উল্লেখ করে। যদিও কার অবদানে দেশ স্বাধীনতা পেল, কীভাবেই বা স্বাধীন হল দেশ, প্রেক্ষিতই বা কী – এসবের কোনও উল্লেখই ছিল না রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে। অথচ, পাকিস্তানে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আলোকবর্তিকা করে স্বাধীনতার লড়াই শুরু করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ন’মাসের প্রাণপণ লড়াই শেষে আসে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের এই মুক্তিযুদ্ধে যে ভারতের বিরাট অবদান ছিল, তা ইতিহাস স্বীকৃত। হাসিনা-উত্তর জমানায় বাংলাদেশবাসীকে সেই ইতিহাসও ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ। একইভাবে, অত্যন্ত সচেতনভাবে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করার চেষ্টাও চলছে বলে অভিযোগ।
মোদির শুভেচ্ছা-বার্তায় মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখ
দেশের স্বাধীনতা দিবসে মুজিবের নামোল্লেখ না থাকায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ বাংলাদেশবাসীর একাংশ। এদিনই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে চিঠি লিখে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই চিঠিটিই প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে ভারতের হাই-কমিশন। তার পরেই প্রকাশ্যে আসে সেদিন ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ঠিক কী লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউনূসকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন একাত্তরের ওই লড়াইয়ে ভারতের অবদানের কথা। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিনকেও স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।
সরানো হল মুজিবের ছবি
এদিকে, দেশে তো বটেই, বিদেশি কূটনৈতিক ভবনগুলি থেকেও সরিয়ে ফেলা হয় মুজিবের ছবি। কলকাতা উপ-দূতাবাস ও নানা দেশের যে সব কূটনৈতিক ভবনে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য রয়েছে, বেশ কিছুদিন আগেই সেগুলি কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। এদিন প্রায় সব দূতাবাসে স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং বিদেশ উপদেষ্টার লিখিত ভাষণ পাঠ করা হয়। পরে হয় আলোচনা সভা। সেখানেও ব্রাত্যই ছিলেন মুজিব। অবশ্য পাকিস্তানের নামোল্লেখ করা হয়নি। তার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ‘দখলদার’ শব্দটি (PM Modi)।
স্বাধীনতা দিবসে ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’র ছবি!
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর। আধ ঘণ্টার ওই তথ্যচিত্রটি সব কূটনৈতিক ভবনে দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউরোপের একটি দেশের বাংলাদেশি কূটনীতিক জানান, ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ শীর্ষক এই তথ্যচিত্রটিতে একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনের কথাই নেই। পুরোটাই শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানের কাহিনি। তিনি বলেন, এই তথ্যচিত্র দেখিয়ে দিয়েছে, ইউনূস সরকার এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছে একাত্তর নয়, জুলাই আন্দোলনই স্বাধীনতা আন্দোলন। তিনি জানান, সরকারি তথ্যচিত্রটিতে সেন্সরের সাধারণ নিয়মটুকুও মেনে চলা হয়নি। অবাধে দেখানো হয়েছে হিংসা, রক্ত, রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তাক্ত দেহের ক্লোজ আপ এবং ছিন্নভিন্ন দেহাংশও। এর সবগুলিই দর্শককে আতঙ্কিত করে তোলে। কলকাতার উপ-দূতাবাস ও আগরতলার সহকারি দূতাবাসেও মুজিব এবং ইন্দিরা গান্ধীর ছবিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই দুই জায়গায়ই দেখানো হয়েছে ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’।
মোদির চিঠি
বাংলাদেশে অবস্থিত (1971 Liberation War) ভারতীয় হাইকমিশনের শেয়ার করা এক বার্তায় বাংলাদেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী (PM Modi) লিখেছেন, “এই দিনটি আমাদের দুই দেশের ইতিহাস ও ত্যাগের দলিল। যা আমাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত তৈরি করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সম্পর্ককে পরিচালিত করে চলেছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ হয়েছে এবং আমাদের জনগণের জন্য সুনির্দিষ্ট সুবিধা দিয়েছে। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের অভিন্ন আকাঙ্খা এবং একে অপরের স্বার্থ ও উদ্বেগের প্রতি পারস্পরিক সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমরা এই অংশীদারিত্বকে আরও বিকশিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) জনগণকে সামরিক, কূটনৈতিক ও মানবিক সাহায্য দিয়েছিল। পাক সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ভারতীয় সেনা। যার ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পরাজয় ঘটে পাকিস্তানের (1971 Liberation War)। ‘দখলদার’ মুক্ত হয় বাংলাদেশ (PM Modi)।
Leave a Reply