মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফের সুদ কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআই (RBI)। শুক্রবার, ৬ জুন নয়া রেপো রেট (Repo Rate) ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এ দিন তাতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বা ০.৫০ শতাংশ কমানোর কথা বলেছেন আরবিআইয়ের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্র। তার জেরে ৬ শতাংশ থেকে ওই সূচক নেমে এসেছে ৫.৫০ শতাংশে। এই নিয়ে চলতি বছরে তৃতীয়বারের জন্য কমে গেল রেপো রেট। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলে ২৫ করে মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
আরবিআইয়ের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক (RBI)
৪ জুন তিন দিনের বৈঠকে বসে আরবিআইয়ের মুদ্রানীতি কমিটি। সেখানেই রেপো রেট কমানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তা ঘোষণা করেন গভর্নর। আরবিআই যে সুদের হারে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ককে ঋণ দিয়ে থাকে, তাকেই বলে রেপো রেট। এই রেট কমলে এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বহিরাগত বেঞ্চমার্ক ঋণে সুদের হার কমে যায়। এই হার কমার অর্থ ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে কম সুদে টাকা ধার নিতে পারবে। ব্যাঙ্ক যদি কম সুদের হারে টাকা ধার পায়, তাহলে গ্রাহকদের ঋণেও সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা থাকে। সুদের হার কমলে লগ্নির জন্য টাকা ধার নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এর জেরে ব্যবসা বৃদ্ধি, বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ বাড়ানো সহজ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনীতি চাঙা করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ (Repo Rate) কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত হয় (RBI)।
কতটা সুরাহা মিলবে মধ্যবিত্তের?
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমানোয় রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের ঋণ গ্রহণকারীদের স্বস্তি মিলবে। যেহেতু তাঁদের মাসিক কিস্তির টাকা কমবে, তাই স্বস্তি পাবেন তাঁরা। তাই যেসব গ্রাহক গৃহঋণ বা গাড়ির ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের সুদ বাবদ গুণতে হবে কম টাকা। এক কথায় গাড়ি, বাড়ি ও ব্যক্তিগত ঋণে কমে যাবে সুদের হার। ফলে, কমবে মাসিক কিস্তির অঙ্কের বোঝা। উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যাক (Repo Rate)। কোনও একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে কেউ তিরিশ বছরের মেয়াদে ৫০ লাখ গৃহঋণ নিল ৮.৭০ শতাংশ সুদে। বর্তমানে তাঁকে ইএমআই দিতে হয় ৩৯,১৩৬ টাকা। সুদের হার কমে যাওয়ায় এখন তাঁকে ইএমআই দিতে হবে ৩৭,৩৪৬ টাকা। প্রতি মাসে সাশ্রয় হবে ১,৭৯০ টাকা। কেউ যদি ১২ শতাংশ সুদে ৫ বছরের মেয়াদের ৫ লাখ টাকা পার্সোনাল লোন নেয়, বর্তমানে তাঁকে ইএমআই দিতে হবে ১১,১২২ টাকা (RBI)। রেপো রেট কমে যাওয়ায় তাঁকে এখন ইএমআই দিতে হবে ১০,৯৬৩ টাকা। প্রতি মাসে সাশ্রয় হবে ১৫৯ টাকা (Repo Rate)।
চলতি বছরেই রেপো রেট কমল ১ শতাংশ
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মে মাসের পর আর সুদ কমায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। ২০২৫ সালে গভর্নর পদ থেকে শক্তিকান্ত দাস অবসর নেওয়ার পর সেই পদে আসীন হন সঞ্জয় মালহোত্র। এসেই তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার ০.২৫ শতাংশ রেপো রেট কমান। পাঁচ বছরে সেই প্রথম রেপো রেট কমায় দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ওই সময় ৬.৫০ শতাংশ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার নামিয়ে এনেছিল ৬.২৫ শতাংশে। এপ্রিলে সেটা আরও কমে ছ’শতাংশে চলে আসে। এবার কমল আরও ০.৫ শতাংশ। এর জেরে চলতি বছর রেপো রেট কমল ১০০ বেসিস পয়েন্ট বা ১ শতাংশ। সুদের হারে বড়সড় ছাড় মেলায় ঋণ গ্রহীতাদের মুখে যে হাসি ফুটল, তা বলাই বাহুল্য। এদিন রেপো রেট (Repo Rate) কমানোর ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর বলেন, “ভারতের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে আমরা সব রকমের চেষ্টা করছি এই সমৃদ্ধিকে আরও বাড়ানোর জন্য।”
কী বললেন আরবিআইয়ের গভর্নর
সঞ্জয় বলেন, “খুচরো মুদ্রাস্ফীতি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে প্রত্যাশার চেয়ে আরও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং এপ্রিল মাসে তা প্রায় ছ’বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩.১৬ শতাংশে নেমেছে। খুচরো মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে আরবিআইয়ের মাঝারি মেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা ৪ শতাংশ ছিল। এর থেকে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি অনেকটাই নীচে। ভারতের অর্থনীতি স্থিতিস্থাপক হয়েছে।” জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “২০২৫-’২৬ সালের জন্য প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিকে ৬.৫ শতাংশ, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৬.৭ শতাংশ, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৬.৬ শতাংশ এবং চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ৬.৪ শতাংশ হারে বাড়তে পারে জিডিপি।”
Leave a Reply