মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফের এক মাইলফলক স্পর্শ করল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) উপস্থিতিতে দেশের প্রথম সম্পূর্ণ দেশিয় মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor) ‘বিক্রম ৩২০১’ (Vikram 3201) লঞ্চ করল ইসরো (ISRO)। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মাইক্রোচিপকে ‘ডিজিটাল হিরে’ আখ্যা দিলেন। তিনি বলেন, “যদি বিগত শতক তেলের দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে, তবে এই শতক গঠিত হবে মাইক্রোচিপ দ্বারা।”
প্রধানমন্ত্রীকে চিপ উপহার
মঙ্গলবার ‘সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে দেশের প্রথম ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ তুলে দেন। অশ্বিনী জানান, “ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন চালুর পর থেকে গোটা বিশ্বের আস্থা ভারতের প্রতি বেড়েছে। বর্তমানে দেশে পাঁচটি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।” তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দেশের প্রথম ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ উপহারও দেন। মন্ত্রী আরও জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দুটি নতুন উৎপাদন ইউনিট চালু হতে চলেছে।
সেমিকন্ডাক্টর চিপ এখন ‘ডিজিটাল হিরে’
‘সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫’ (Semicon India 2025) সম্মেলনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “গত শতক গড়ে উঠেছিল তেলের উপর। আর বর্তমান যুগ দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট একটি চিপের উপর (Oil Was Black Gold, Chips Are Digital Diamonds)।” তিনি বলেন, তেলকে যেমন একসময় ‘কালো সোনা’ (Black Gold) বলা হত, তেমনই সেমিকন্ডাক্টর চিপ এখন ‘ডিজিটাল হিরে’ (Digital Diamond)। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বিশ্ব আজ ভারতের উপর আস্থা রাখছে, বিশ্বাস রাখছে। ইতিমধ্যেই ২০২১ সালের পর থেকে ১০টি সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্পে প্রায় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। “ভারতই গড়ে তুলবে ভবিষ্যতের সেমিকন্ডাক্টর দুনিয়া,” জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫ সম্মেলন আগামী তিন দিন ধরে চলবে এবং দেশের সেমিকন্ডাক্টর খাতকে গতি দিতে গবেষণা, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং নীতিনির্ধারণী দিক থেকে এক নতুন দিশা দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতে তৈরি ক্ষুদ্রতম চিপ বদলাবে দুনিয়া
মোদি আরও জানান, কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশনের পরবর্তী ধাপে কাজ শুরু করেছে। নতুন ‘ডিজাইন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (DLI)’ প্রকল্পকে বাস্তব রূপ দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। তাঁর কথায়, “দূরে নয় সেই দিন, যেদিন ভারতে তৈরি ক্ষুদ্রতম চিপ বদলে দেবে গোটা দুনিয়া।” শুধু চিপ উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়, সেমিকন্ডাক্টরকে ঘিরে গোটা এক ইকোসিস্টেম তৈরি করছে ভারত। এমনটাই দাবি প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর মতে, এই উদ্যোগ ভারতের শিল্পকে করবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক এবং আত্মনির্ভরশীল। তিনি আরও বলেন, দেশের চাহিদা মেটাতে এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত প্রয়োজনে উপযুক্ত খনিজ পদার্থের জোগান নিশ্চিত করতে ভারত ‘ক্রিটিক্যাল মিনারেলস মিশন’-এর উপর কাজ করছে।
মাইক্রোচিপ ‘বিক্রম’ আদতে কী?
‘বিক্রম-৩২০১’ একটি ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর, যার নিজস্ব ইনস্ট্রাকশন সেট আর্কিটেকচার রয়েছে। এটি একসঙ্গে ৩২ বিট ডেটা প্রসেস করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের নির্দেশ পালন করতে সক্ষম। প্রসেসরটি বিশেষভাবে সমর্থন করে এডিএ প্রোগ্রামিং ভাষাকে—যা উপগ্রহ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, লঞ্চ ভেহিকলসহ উচ্চ-নির্ভরযোগ্য সিস্টেমে বহুল ব্যবহৃত। কঠিন পরিবেশ মাথায় রেখেই এটি তৈরি হয়েছে। মাইনাস ৫৫ থেকে ১২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে এটি। এর ফলে মহাকাশ মিশনের খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
আত্মনির্ভরতার পথে এক ধাপ
শুধু তাই নয়, এই অগ্রগতি বেসামরিক খাতেও দেশিয় চিপ তৈরির পথ প্রশস্ত করবে। স্থানীয়ভাবে উচ্চমানের চিপ পাওয়া গেলে বিদেশি ইলেকট্রনিকস ও অটোমোবাইল জায়ান্টরা ভারতেই উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে উৎসাহিত হবে। ফলে এটিকে প্রযুক্তির দুনিয়ায় ভারতের এক বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা যেতে পারে। সেই সঙ্গে এটি আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রেও এটি দেশকে এগিয়ে রাখবে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বাজার ছিল প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবর্ষে তা বেড়ে ৪৫-৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাজার আরও দ্বিগুণ হয়ে ১০০-১১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের (PMO) তরফে জানানো হয়েছে, ‘সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫’ (Semicon India 2025) এই মহাসম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ২০,৭৫০ জন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৪৮টি দেশের ২,৫০০-র বেশি প্রতিনিধি। বক্তব্য রাখছেন ১৫০-রও বেশি বক্তা, তার মধ্যে ৫০ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পনেতা। প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে প্রায় ৩৫০ প্রতিষ্ঠান।
Leave a Reply