মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শর্মিষ্ঠা পানোলি মামলায় (Sharmistha Panoli Case) নয়া মোড়। তাঁর বিরুদ্ধে যিনি মামলা করেছিলেন সেই ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এই দাবি করলেন তাঁর বাবা। উল্লেখ্য, শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন ওয়াজাহাত খান (Wazahat Khan) নামের এক ব্যক্তি। ওয়াজাহাত খানের বাবা সাদাত খানের দাবি রবিবার রাত থেকে তাঁর ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শর্মিষ্ঠা পানোলি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁর পরিবার একের পর এক হুমকি ফোন পাচ্ছেন বলেও দাবি করেন তিনি। শর্মিষ্ঠা পানোলি কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন গত শুক্রবার গভীর রাতে। ঘটনাটি ঘটে গুরগাঁওয়ে। এরপর তাঁকে কলকাতায় আনা হয় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পেশ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। পানোলির গ্রেফতারিকে ঘিরে রবিবার রাজনৈতিক মহলে প্রবল বিতর্ক ছড়ায়। বিজেপি-র একাধিক নেতা তাঁর মুক্তির দাবি তোলেন। অন্যদিকে, ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধেও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। সনাতন ধর্মের প্রতি অবমাননার জন্য ওয়াজাহাতের বিরুদ্ধে দিল্লি ও অসমে অভিযোগ দায়ের হয়। এরপরই ওয়াজাহাতের পরিবার জানায়, তিনি নিখোঁজ।
নিখোঁজ ওয়াজাহাত
গুরুগ্রাম থেকে গ্রেফতার হওয়া আইন ছাত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার শর্মিষ্ঠা পানোলির (Sharmistha Panoli Case) বিরুদ্ধে যিনি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, সেই ওয়াজাহাত খান এখন নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন তাঁর বাবা সাদাত খান। রবিবার রাত থেকে ছেলের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, শর্মিষ্ঠার গ্রেফতারের পর থেকেই তাঁদের পরিবার ক্রমাগত হুমকির ফোন পাচ্ছে। এক সাংবাদিক যখন সাদাত খানকে প্রশ্ন করেন, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে হিন্দুধর্মকে অপমান করার অভিযোগ উঠেছে, তখন তিনি জানান, ওয়াজাহাতের প্রোফাইল হয়তো হ্যাক হয়েছে। তাঁর দাবি, ছেলের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিনে বহু কুৎসিত এবং হুমকিসূচক ফোন এসেছে। এসব ফোনে বলা হয়েছে, ও নাকি পানোলির জীবন নষ্ট করেছে। সাদাত খান নিজেও একই ধরনের ফোন পেয়েছেন এবং গালিগালাজের শিকার হয়েছেন।
ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে শ্রী রাম স্বাভিমান পরিষদ নামে একটি সংগঠন। সোমবার অভিযোগটি জমা পড়েছে গার্ডেনরিচ থানায়। ওই সংগঠনের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে অবমাননাকর এবং উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন ওয়াজাহাত খান। ২ জুনের তারিখে লেখা ওই চিঠিতে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৯৬(১)(এ), ২৯৯, ৩৫২, ৩৫৩(১)(সি) ধারায় এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ও ৬৭ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, খান হিন্দুদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও তিনি অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে ধর্মীয় উৎসব নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। এই অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সাদাত খান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কনটেন্ট ছড়াচ্ছেন। এর ফলে জনশান্তি ব্যাহত হচ্ছে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির মধ্যে শত্রুতা বাড়ছে। অতএব, যাতে আর কোনও বিশৃঙ্খলা না ছড়ায়, তার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে। শ্রী রাম স্বাভিমান পরিষদের তরফ থেকে গার্ডেনরিচ থানায় ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু দেব-দেবীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন ওয়াজাহাত। অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে— “রেপিস্ট কালচার”, “মূত্রপানকারী” প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে হিন্দু সমাজ ও ধর্মকে অপমান করা হয়েছে।
অসমেও অভিযোগ দায়ের
হিন্দু ধর্মবিশ্বাস ও দেব-দেবীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে অসমে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ইতিপূর্বে সমাজমাধ্যমে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত খান, এবার মা কামাখ্যা ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করে ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। অসম পুলিশের এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, খান একজন অভ্যাসগত অপরাধী, যিনি আগেও একাধিকবার সনাতন ধর্ম ও হিন্দু দেব-দেবীদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর বক্তব্য রেখেছেন। এই ঘটনার জেরে রাজ্যজুড়ে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই প্রসঙ্গে বলেন, “মা কামাখ্যার বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অসম পুলিশ মামলা রুজু করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অসমে এনে আইনি ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহায়তা চাইব।” মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, অসম সরকার ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর এবং যারা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে অশান্তি ছড়াতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদিও এরপরই ওয়াজাহাতের বাবা সাদাত খান জানায়, তাঁর ছেলে নিখোঁজ। নানা মহলে জল্পনা, গ্রেফতারি এড়াতেই হয়তো কোথাও চলে গিয়েছেন ওয়াজাহাত।
Leave a Reply