Shubhanshu Shukla: আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে প্রথম কোনও ভারতীয়, ইতিহাস গড়তে চলেছেন শুভাংশু

shubhanshu shukla's journey to space in may is more than a flight said science minister jitendra singh after meeting with isro

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ৪০ বছরের অপেক্ষার অবসান। ভারত আবারও মহাকাশের অন্ধকার গভীরে সোনালী ইতিহাস লেখার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফের মহাকাশযাত্রা করতে চলেছেন ভারতীয় মহাকাশচারী। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সহযোগিতায়, ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu Shukla) আগামী মে মাসে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হবেন। ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার পর এবার এই তালিকায় নাম জুড়তে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশুর।

দেশের সর্বকনিষ্ঠ নভোচর

৪০ বছরের শুভাংশুই দেশের মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ নভশ্চর, যিনি মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কেন্দ্রের তরফে মহাকাশ ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, আগামী মে মাসে স্পেস এক্সের মহাকাশযানে চড়ে গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু পাড়ি দেবেন মহাশূন্যে। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সহকর্মীরা। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, ‘ভারত পরবর্তী মহাকাশ অভিযানের জন্য তৈরি। চার দশক পর শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu Shukla) আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পা রাখতে চলেছেন। তাঁর যাত্রা দেশের মহাকাশ গবেষণায় নতুন অধ্যায় রচনা করবে।’

কে এই শুভাংশু শুক্লা?

১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের লখনউতে জন্ম নেন শুক্লা (Shubhanshu Shukla)। পড়াশোনা করেছেন পুনের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে (এনডিএ)। ২০০৬ সালের জুন মাসে তিনি ভারতীয় বায়ুসেনার (আইএএফ) ফাইটার উইংয়ে যোগদান করেন। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতিও পান। ২০০০ ঘণ্টারও বেশি বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শুক্লা নানা ধরনের বিমান উড়িয়েছেন। ২০১৯ সালে, ইসরো শুক্লাকে মহাকাশচারী প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করে। মস্কোর স্টার সিটিতে অবস্থিত ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, তাঁকে ২০২৬ সালের জন্য পরিকল্পিত ভারতের প্রথম মানব মহাকাশযান কর্মসূচি, ইসরো’র গগনযান মিশনের জন্য প্রধান মহাকাশচারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

ড্রাগন ক্যাপসুলে মহাকাশে পাড়ি

সব ঠিক থাকলে মে মাসে আমেরিকার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেক স্পেস এক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে মহাকাশে পাড়ি দেবেন শুভাংশু-সহ ৪ জন। মহাকাশযানের পাইলট হিসেবে শুভাংশুর (Shubhanshu Shukla) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তার প্রস্তুতি ভালোভাবেই সেরেছেন তিনি। জানা যাচ্ছে, গগনযান প্রকল্পে অংশ নিতে গত ৮ মাস ধরে নাসা এবং বেসরকারি সংস্থা অ্যাক্সিয়ম স্পেসের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। এর জন্য ভারতের খরচ হয়েছে ৬০ মিলিয়ন ডলার বা ৫১২ কোটি টাকার বেশি। অ্যাক্সিয়ম স্পেস ফোরের এই সফরে নেতৃত্ব দেবেন নাসার প্রাক্তন জনপ্রিয় মহিলা নভশ্চর পেগি হুইটসন। নাসা থেকে অবসরের পর তিনি এখন বেসরকারি সংস্থা অ্যাক্সিয়মের হয়ে কাজ করেন। পেগি ছাড়া শুভাংশুর দুই সহযাত্রী পোল্যান্ডের স্লাউজস উজনানস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবোর কাপু। আইএসএস-এ যাওয়া চারজনের এই দলটি স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে বসবে। এটি স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই মিশনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উড়বে।

ওয়াটার বেয়ার বা জল-ভালুকের কথা

আগামী মিশনে মহাকাশ গবেষণাকেও অন্য আঙ্গিকে নিয়ে যেতে চলেছে ইসরো। জানা যাচ্ছে, অক্সিয়ম-৪ মিশনে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হবে ওয়াটার বেয়ার। আণুবিক্ষণিক ওই চারপেয়ে জীব পৃথিবীর প্রায় সব স্থানেই রয়েছে। জানা যাচ্ছে, পৃথিবীর যেকোনও আবহাওয়ার সঙ্গেই ওই ওয়াটার বেয়ার নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে তারা বংশবৃদ্ধিতেও সক্ষম। এবার ১৪ দিনের মিশনে তারা স্পেস স্টেশনে থাকবে। মহাকাশের বিরূপ আবহাওয়ায় তারা কীভাবে লড়াই করছে তা নিয়েই গবেষণা চালাবে ইসরো। ফলে ভবিষ্যতে মহাকাশের বিরূপ তাপমাত্রায় মহাকাশচারীরা কীভাবে বেশিদিন থাকতে পারেন, সে ব্যাপারে নয়া তথ্য মিলবে।

গগনযান মিশনের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিশন

শুক্রবার নয়াদিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাবেন, সেটা মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। মহাকাশযানে করে তিনি যে মহাশূন্যে পাড়ি দেবেন, তা বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকার মতো বিষয়ের সঙ্গে ধাতস্থ হয়ে উঠবেন শুভাংশু। যা ভারতের গগনযান মিশনের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

একগুচ্ছ প্রকল্প ইসরোর

গগনযান ছাড়াও শুক্রবার নয়াদিল্লির বৈঠকে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মিশনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীদিনে ইসরোর বিভিন্ন মিশনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়েছেন ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ইসরোর যে বড়-বড় মিশন আছে, তার মধ্যে অন্যতম হল পিএসএলভি-সি৬১ মিশন। যে রকেটের পিঠে চাপিয়ে ইওএস-০৯ স্যাটেলাইট পাঠানো হবে।ইসরোর চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, গগনযান মিশনের দিকে টেস্ট ভেহিকেল-ডি২ মিশনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই মিশনের মাধ্যমে গগনযানের প্রস্তুতি ঝালাই করে নেওয়া হবে। ক্রু মডিউলকে কীভাবে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হবে, সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে। আবার জুনে জিএসএলভি-এফ১৬ রকেটের পিঠে চাপিয়ে নিসার স্যাটেলাইট পাঠানো হবে। জুলইয়ে আবার এলভিএম৩-এম৫ মিশন আছে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share