India-Britain Relation: ‘উগ্রপন্থার কোনও স্থান নেই’, খালিস্তানি ইস্যুতে স্টার্মারকে স্পষ্ট বার্তা প্রধানমন্ত্রী মোদির

starmer modi meet uk pm hails ‘breakthrough’ moment in india britain relation pm modi flags khalistani extremism issue

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: খালিস্তানি চরমপন্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের (Keir Starmer) সঙ্গে বৈঠকে মোদি জোর দিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজে উগ্রপন্থা ও সহিংসতা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁরা জিরো টলারেন্স নীতির ওপর জোর দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স্তরে একসঙ্গে লড়াই করা জরুরি। এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

খালিস্তান প্রসঙ্গে কঠোর বার্তা

ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর, বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের জানান, “খালিস্তানি চরমপন্থা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট করে বলেন, সমাজে যে স্বাধীনতা ও অধিকার রয়েছে, তা কোনওভাবেই সহিংস উগ্রপন্থার হাতিয়ার হতে পারে না। এই ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দুই দেশকেই তাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।” প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্প্রতি ম্যানচেস্টারে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানান। ওই ঘটনায় একটি গাড়ি নিয়ে পথচারীদের উপর হামলা করা হয়, যাতে দুই জন প্রাণ হারান।

সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পাশাপাশি

বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টার্মারের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তথ্য আদান-প্রদান, আইনি সহযোগিতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দুই দেশ আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাসী অর্থায়ন, সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিদের চলাচল, প্রযুক্তির অপব্যবহার, ও নতুন নিয়োগে রাশ টানতে একসঙ্গে পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলারও তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।

ভারতীয় অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা

ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার (Keir Starmer)। জানান ভারতে ক্যাম্পাস খুলবে ব্রিটেনের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi)সঙ্গে মুম্বইয়ে দেখা করেন স্টার্মার। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এটি স্টার্মারের প্রথম ভারত সফর। দু’দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করার বার্তা দিয়েছেন দুই রাষ্ট্রনেতাই। বৈঠকে মূলত প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য বিষয়েই জোর দেওয়া হয়। বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ভারত এবং ব্রিটেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু। দু’দেশেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন রয়েছে। ভারত এবং ব্রিটেন একে অপরের উন্নতি এবং বিভিন্ন স্তরে অগ্রগ্রতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

আরও মজবুত ভারত (India)-ব্রিটেন সম্পর্ক

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মোদি ও স্টার্মারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে ২০৩৫ সালের রোডম্যাপকে সামনে রেখে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ খোঁজা হয়। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এই বৈঠকের ফলে দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে। পাশাপাশি, সবুজ শক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা ও স্টার্ট-আপ খাতে যৌথ বিনিয়োগের বিষয়ও আলোচনায় এসেছে।

স্টার্মারের সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টার্মারের সফরের রাজনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে অবস্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে ভারত (India) এখন ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় অংশীদার। অন্যদিকে, মোদি সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ উদ্যোগে ব্রিটিশ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আগ্রহী নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক মহলের ধারণা, এই সফরের মাধ্যমে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে, যা আগামী দশকে দুই দেশের অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষায় গভীর প্রভাব ফেলবে।

শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ

বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে স্টার্মার জানান, ভারতে ক্যাম্পাস খুলবে ব্রিটেনের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সেই তালিকায় কোন কোন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে, তা এখনও জানা যায়নি। শিক্ষা খাতে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার কথাও বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ভারতের তরুণ প্রজন্মই ২০৪৭ সালের লক্ষ্য পূরণে নেতৃত্ব দেবে।” গত জুলাইয়ে ভারত-ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হয়। সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এই প্রথম বৈঠক করলেন দুই রাষ্ট্রনেতা মোদি ও স্টার্মার। প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ভারত ও ব্রিটেনকে ‘বিশ্বনেতা’ হিসেবে বর্ণনা করে স্টারমার বলেন, “আমরা প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা খাতে আমাদের সহযোগিতা আরও গভীর করছি—এআই, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছি।” তিনি আরও জানান, বলিউডকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনে চলচ্চিত্র নির্মাণের এক নতুন চুক্তির ঘোষণা করা হবে। উল্লেখ্য, স্টার্মার বৃহস্পতিবার ইয়াশরাজ ফিল্ম স্টুডিও পরিদর্শন করেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে স্টার্মার বলেন, ‘‘ভারতের উন্নতির রেখাচিত্র অসাধারণ।’’ ভারত-ব্রিটেন ফ্রি-ট্রেড ডিল, সামরিক প্রশিক্ষণেও একে অপরকে সাহায্য করবে দু’দেশ বলেও জানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে আধুনিক উন্নত অংশিদারিত্ব করতে চলেছে দুই দেশ।’’ দু’দিনের সফরে মুম্বইয়ে এসেছেন স্টার্মার। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সেখানকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, নেতা, উদ্যোক্তা, শিক্ষাবিদদের ১২৫ জনের একটি দল।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share