West Bengal Assembly Election: রাজ্যে বহুতলগুলিতে পৃথক ভোটকেন্দ্র! আপত্তি কেন তৃণমূলের? কীসের ভয়?

west bengal assembly election tmc was not interested over polling booths in the city high rises directed by commission

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষত শহরাঞ্চলে আবাসনগুলিতে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করেছে কমিশন। বলা হয়েছিল, ২৫০টি পরিবার অথবা ৫০০ জন ভোটার রয়েছেন, এমন বহুতল ভবন, গ্রুপ হাউজিং সোসাইটি, কলোনি, বস্তি এলাকায় ভোটকেন্দ্র তৈরির বিষয়ে সমীক্ষা করতে হবে ডিইও-দের। প্রস্তাবিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের তালিকা কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। গত সোমবার সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাত্র দু’টি রিপোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা পড়ে। এতে কমিশন অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং নতুন করে ডিইও-দের সমীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত না পসন্দ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের। কিন্তু বহুতলের ভিতর ভোট কেন্দ্র হলে তাতে তৃণমূলের কীসের অসুবিধা? কেনই বা বাধা দিচ্ছে তারা? নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরে। তারই উত্তর খুঁজতে মাধ্যম গিয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাশাপাশি সমসাময়িক ভারতীয় রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান এবং দলিত-আদিবাসী রাজনীতির এক তীক্ষ্ণ বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত ঝন্টু বারাইকের কাছে।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের বহুতলগুলিতে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরি করতে আগ্রহী নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলের আপত্তি কেন?

উত্তর: বহুতলে ভোটকেন্দ্র হলে লুট করতে পারবে না তৃণমূল। হাই–রাইজ বিল্ডিংগুলিতে বুথকেন্দ্র খোলার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাজে তৃণমূল তাতে বাধা দিচ্ছে। কারণ অতীতে দেখা গিয়েছে ভোটের দিন তৃণমূলের গুন্ডারা বহুতলগুলির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। যাতে কেউ ভোট দিতে যেতে না পারে। বহুতলের বাসিন্দারা ভোট দিতে বেরোলেই তাঁদের উপর হামলা করা হয়। ২০২১–এও এমন হয়েছিল। গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বাইক বাহিনী বহুতলগুলির ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে হুমকি দিয়েছিল। এই আবাসনগুলির বাসিন্দারা ভোট দিতে না গেলে সেই ভোট বুথে গিয়ে ব-কলমে তৃণমূলের খাতায় দেওয়া হয়। কিন্তু বহুতলের ভিতরে ভোট কেন্দ্র হলে এ ধরনের জালিয়াতি বা কারচুপি করা প্রায় অসম্ভব।

প্রশ্ন: কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, আর কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে না। জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা কি ঠিক?

উত্তর: একদমই ঠিক পদক্ষেপ। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এ বিষয়ে বিভিন্ন দলের অবস্থান বিভিন্ন রকম। তাই আর আলোচনার পথে না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: বহুতলে ভোটকেন্দ্র নিয়ে ডিইও-দের বিরুদ্ধে উদাসীন মনোভাবের অভিযোগ তুলেছিল কমিশন। কেন এই আচরণ?

উত্তর: কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে অভিজাত বহুতল আবাসনের সংখ্যা গত দু’দশকে চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতার ক্ষেত্রে এই বহুতলবাসীরা মোট ভোটের ৮-১০ শতাংশ। কিন্তু এখানকার ভোটারেরা অনেকেই নিরাপত্তাজনিত কারণে ভোটকেন্দ্রে যান না। তাঁদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে আবাসনের ভিতরেই ভোটকেন্দ্র তৈরির কথা ভেবেছে কমিশন। ওই সমস্ত ভোটকেন্দ্রে বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। পৃথক নিরাপত্তার বন্দোবস্তও থাকবে। বাম জমানা থেকে পশ্চিমবঙ্গের ভোট–সংস্কৃতি হলো বিভিন্ন বহুতলের দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া। যিনি ঝুপড়িতে থাকেন তাঁরও যেমন ভোটাধিকার আছে, তেমনই যাঁরা বহুতলে থাকেন তাঁদেরও ভোটাধিকার আছে। এই অধিকারকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যেই বহুতলগুলিতে পৃথক ভোট–গ্রহণ কেন্দ্র খোলার কথা ভাবছে কমিশন। তাতে তৃণমূলের অসুবিধা হচ্ছে। রাজ্যে যেখানে যত বহুতল আছে তার ভিতরে বুথ হলে আমার বিশ্বাস বহুতলের বাসিন্দারা এ বার নির্বিঘ্নে নিজের ক্যাম্পাসের মধ্যে ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু রাজ্য সরকার যেহেতু এ বিষে উদাসীন তাই রাজ্যের কর্মীরাও উদাসীন।

প্রশ্ন: প্রাইভেসি নষ্ট! বহুতলবাসীরা চাইছেন না ‘দুয়ারে ভোটকেন্দ্র’, এ নিয়ে কী বলবেন?

উত্তর: কমিশনের যুক্তি, আবাসনের বাসিন্দাদের ‘দুয়ারে পোলিং স্টেশন’ চালু করলে বহুতলের ভোটের হার আরও বাড়বে। এতদিন এই আবাসনগুলির লাগোয়া স্কুল বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন আবাসনগুলির ভিতরেই কমিউনিটি হল বা স্পোর্টস সেন্টারে পোলিং স্টেশন খুলতে চাইছে। কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ভোটারদের সুবিধাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, তাই প্রয়োজনে অতিরিক্ত বুথ তৈরি করতেই হবে। বহু আবাসনের বাসিন্দারা এতে আগ্রহী, আর যাঁরা বুঝতে পারছেন না, তাঁদেরকে বোঝাতে হবে। তবে আবাসনের মানুষ যে কী চাইছে তা যেন রাজ্যের শাসকদল ঠিক না করে দেয়।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share