Anti Waqf Protests: ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই কি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানো হয়েছে অশান্তির আগুন?

Anti Waqf Protests hindu outrage west bengal

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে (Anti Waqf Protests) কার্যত জ্বলছে বাংলার (West Bengal) একটা অংশ। বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে হিন্দুদের ওপর বেনজির আক্রমণ চালানো হচ্ছে। অভিযোগ, এতে ইন্ধন জুগিয়েছে রাজ্যের এক মন্ত্রীর বক্তব্য এবং খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়! তার জেরেই অশান্ত হয়ে উঠেছে মুসলিম অধ্যুষিত ওই এলাকাগুলি। অথচ, মুসলিম অধ্যুষিত কেরল, তেলঙ্গানা কিংবা বিহারের বিভিন্ন অংশে কিন্তু এভাবে প্রতিবাদের নামে আগুন জ্বালানো হয়নি। বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি মিটিং-মিছিল হয়েছে, কিন্তু এভাবে বাংলাদেশি কায়দায় হিন্দুদের খুন করা হয়নি, ঘরছাড়াও করা হয়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এভাবে হিংসার আগুন ছড়িয়ে দিয়ে জনতা-জনার্দনের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। নিয়োগ কেলেঙ্কারির কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি খুইয়েছেন এ রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার মানুষ। ওই একই কারণে চাকরি খোয়াতে পারেন আরও প্রায় ৬০ হাজার জন। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যখন বিরোধীরা হাতে অস্ত্র পেয়ে গেলেন, চাকরিহারারা যখন পথে নামলেন তখনই ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের একাংশে জ্বালিয়ে দেওয়া হল অশান্তির আগুন! ব্যস, জনতার দৃষ্টি গেল ঘুরে! ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এটা চলতেই থাকবে। কারণ ক্ষমতার চিটে গুড়ে যে পা আটকে গিয়েছে শাসকের!

হিংসায় মদত শাসকের! (Anti Waqf Protests)

ফেরা যাক খবরে। জানা গিয়েছে, (সু)পরিকল্পিত এই হিংসায় মদত জুগিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ। রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী দিন কয়েক আগে বলেছিলেন, “জেলাগুলি ফিক্স করার পর মুসলিমরা কলকাতার প্রধান সড়কগুলি অবরোধ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘেরাও করবে।” জমিয়ত উলেমা-ই হিন্দের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লার এই বক্তব্যের পরেই হিন্দুদের ওপর হিংসার ঘটনা শুরু হয় বলে অভিযোগ। অন্যান্য কয়েকজন মুসলিম ধর্মীয় নেতাও উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশ করেন, যা মুসলিমদের হিন্দুদের ওপর নৃশংস হামলা চালাতে উদ্বুদ্ধ করে। অভিযোগ, তার পরেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির-বিগ্রহ। হিংসা কবলিত এলাকাগুলির স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হিন্দু মহিলাদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটেছে। প্রাণ ভয়ে রাতের অন্ধকারে জেলা ছেড়ে ভিন জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন হিন্দুরা। আক্ষরিক অর্থেই, নিজভূমে পরবাসী হয়েছেন তাঁরা।

ইসলামিস্টদের তাণ্ডব

মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জের জাফরাবাদে শুক্রবার সন্ধে (West Bengal) থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত তাণ্ডব চালায় ইসলামিস্টরা। কুপিয়ে খুন করা হয় (Anti Waqf Protests) প্রতিমাশিল্পী হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর পুত্র চন্দনকে। মুর্শিদাবাদেরই ধুলিয়ানেও ছড়িয়ে পড়ে হিংসার আগুন। শতাধিক হিন্দু বাড়ি ও দোকান আক্রমণ ও ধ্বংস করা হয়। শতাধিক হিন্দু পরিবার নৌকায় করে গঙ্গা পার হয়ে পড়শি জেলা মালদায় আশ্রয় নেয়। রাজ্যের অন্যান্য অংশেও হিন্দুদের ওপর হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পূর্বপরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে, ইসলামিস্ট জনতা অন্যান্য কিছু জেলার মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলেও হিন্দুদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে বলে খবর। পুলিশ প্রথমে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। তারপর বোধহয় ওপরতলার নির্দেশে নড়েচড়ে বসে। এর পর ইসলামিস্টরা রেয়াত করেনি পুলিশকেও। পুলিশ কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়, তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে কয়েকজন পুলিশকর্মীকে মসজিদেও আশ্রয় নিতে হয়েছে বলে খবর।

কাঠগড়ায় তোষণের রাজনীতি

যে পুলিশ সুপরিকল্পিত হিংসা হচ্ছে দেখেও, ঢাল-তরোয়াল নিয়ে বসেছিল, সেই পুলিশই চাকরিহারাদের মিছিলে লাঠি চালিয়েছিল। সদ্য চাকরি খোয়ানো এক শিক্ষককে লাথিও মারতে দেখা গিয়েছে এক পুলিশ কর্মীকে (West Bengal)। এর পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ধেয়ে আসে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুষ্টিকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে একের পর এক ট্যুইট-বাণ। নেটিজেনদের সিংহভাগের বক্তব্যের নির্যাস, এই সব ঘটনার জন্য দায়ী মমতার তোষণমূলক রাজনীতি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তো বলেই দিয়েছেন, “এই শক্তি প্রদর্শন তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের জোরদারকরণ এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের ঘোষণা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুসলিম তোষণের ফলে মুসলিমরা আইনের কব্জা থেকে রেহাই পেয়েছে বলে মনে করছে (Anti Waqf Protests), আর হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”

কী বলছেন দিলীপ ঘোষ

বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার বলেন, “মুসলিম গোষ্ঠীর হিংসা, হিন্দু ও পুলিশের ওপর তাদের হামলা, এবং মুসলিমদের দ্বারা উস্কানি মূলক স্লোগান—এই সবকিছু পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের থেকে আলাদা করা কঠিন করে তুলেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুসলিম আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা উৎসাহিত হয়েছে, যার ফলস্বরূপ হিন্দুরা বাংলায় নিরাপদ নয়। এটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলি থেকে হিন্দুদের তাড়ানোর পরিকল্পনারই অংশ।” তিনি আরও বলেন, “গত সপ্তাহান্তে মুসলিমদের দ্বারা হিন্দুদের ওপর হামলা হিন্দুদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। যদি বাংলার হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ না হয়, তবে যে কোনও দিন বাংলা বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাবে। সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নেই। তখন হিন্দুদের আর বাংলায় কোনও জায়গাই থাকবে না (Anti Waqf Protests)।”

রাহুল সিনহার বক্তব্য

বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। মুসলিমরা দায়মুক্তি নিয়ে হিন্দুদের আক্রমণ ও হত্যা করছে। তারা পুলিশকে আক্রমণ করছে, থানা ও যানবাহনে আগুন দিচ্ছে, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম ভোটারদের হারাতে চান না বলে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে মুসলিম সমাজের অপরাধী ও মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলি সাহস পেয়েছে (West Bengal)।”

দিলীপের কটাক্ষ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি “শান্তি বজায় রাখার” নরম আবেদনকে কটাক্ষ করে দিলীপ ঘোষ বলেন, “রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু ও পুলিশের ওপর হামলা, সম্পত্তি ধ্বংস এবং দাঙ্গা চালানো মুসলিমদের বিরুদ্ধে কঠোর ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে এবং বাংলা হিন্দুদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হবে।” তিনি বলেন, “কিন্তু এটাও ঠিক, এবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কঠোর ব্যবস্থা নেবেন না। কারণ তিনি জানেন, তা করলে তাঁর সরকার পড়ে যাবে। তিনি তো প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন যে মুসলিম সমর্থনের জোরেই তিনি ক্ষমতায় আছেন। তিনি মুসলিমদের কাছে ঋণী (Anti Waqf Protests)।”

সেলিমের ধরি মাছ না ছুঁই পানি!

কংগ্রেস হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক মহাম্মদ সেলিম বিতর্কের মুখে পড়েছেন এই অভিযোগে যে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়েই দাঙ্গার জন্য দায়ী। তাঁর দাবি, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতারের, যাঁকে তিনি “দাঙ্গার মস্তিষ্ক” বলে উল্লেখ করেছেন। শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবি জানালেও, সেলিম সাহেব সিদ্দিকুল্লার মন্তব্য নিয়ে অদ্ভুতভাবে নীরব! হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় সরব হয়েছেন কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী। হিংসার জন্য তিনি দায়ী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে, সুপ্রিম কোর্টের ২৬,০০০ সরকারি স্কুল কর্মী বরখাস্তের আদেশ সৃষ্ট সঙ্কট থেকে মনোযোগ সরাতে হামলা উস্কে দেওয়ার জন্য। তবে তিনি একবারও হিন্দুদের আক্রমণকারী মুসলিমদের নাম নেননি।

শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য

এহেন আবহে হিন্দুদের আশ্বস্ত করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “আমরা হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং হিন্দুদের রাজনৈতিকভাবে সংহত করতে আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করব। বাংলার হিন্দুদের এটা বোঝাতে হবে যে সম্প্রদায়টি একটি গুরুতর অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, এবং হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ না হলে বাংলা আর একটি বাংলাদেশে পরিণত হবে। বাঙালি হিন্দুরা পড়ে থাকবে (West Bengal) কোনও স্বদেশ ছাড়াই! তাই হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট বিভাজন রুখতে হবে (Anti Waqf Protests)।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share