Murshidabad Violence: ‘‘এই ভয়ের মধ্যে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না’’, মুর্শিদাবাদ হিংসায় আক্রান্তদের কথা শুনে বললেন রাজ্যপাল

murshidabad violence nhrc team governor cv ananda bose visited camp of people who fled away from their house due to waqf protest

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় (Murshidabad Violence) সপ্তাহব্যাপী উত্তেজনা ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ানের মতো এলাকায়। দক্ষিণ মালদা লোকসভার অন্তর্গত এবং মুর্শিদাবাদ জেলার ওই এলাকাগুলির পরিস্থিতি বুঝতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা জানতে একই দিনে সেখানে হাজির হয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল। শুক্রবার, ওই দিনে মালদায় যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘সমাজের একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায় এখানে আক্রান্ত হয়েছে। এক দল মারবে, আর এক দল আক্রান্ত হবে, এটা কখনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হতে পারে না।’’

এর মধ্যে বাঁচা যায় না

মুর্শিদাবাদের (Murshidabad Violence) অশান্তিতে ঘরছাড়াদের একাংশকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজভবনে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ অন্যেরা। রাজ্যপালের কাছে তাঁরা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। শামসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে গিয়ে পরিস্থিতি দেখার অনুরোধ করেন। সুকান্তের দাবি, সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েই রাজ্যপাল মালদা-মুর্শিদাবাদ সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাজ্যপাল বোসকে সামনে পেয়েই নিজেদের ওপর হওয়া অত্যাচারের কথা শোনান ধুলিয়ানের মহিলারা। রাজ্যপালের দাবি, মহিলারা তাঁকে জানান যে, তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। শুধু তাই নয়, তাঁদের লাঞ্ছিত ও নির্যাতনও করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এই ক্যাম্পে বসবাসকারী পরিবারগুলোর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি তাঁদের সমস্যার কথা বিস্তারিতভাবে শুনেছি এবং তাঁদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করেছি। মহিলারা জানান যে দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাড়িতে ঢুকে গালিগালাজ করে, মারধরও করে। তাঁরা কী চায়, সেই বিষয়ে আমাকে বলেছেন। এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ করা হবে। এখানে যে অশান্তি হয়েছে, তা কোনও সুস্থ মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি এখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেছি, এখানে ভয়ের পরিস্থিতি রয়েছে। এই ভয়ের মধ্যে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না।’’

ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে

মুর্শিদাবাদে হিংসার (Murshidabad Violence) ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করে জাতীয় মহিলা কমিশন। এদিন কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সার্কিট হাউসে আসেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। সেখান থেকে আসেন মালদার বৈষ্ণবনগরে। সেখানে একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। পরে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনবিজয়া রাহাতকর বলেন, “তাঁদের সঙ্গে কী হয়েছে, সেসব মহিলারা জানিয়েছেন। মহিলারা যা বললেন, তা কল্পনার বাইরে। যৌন নিপীড়নও হয়েছে। আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। আরও কথা বলতে হবে। মহিলাদের সঙ্গে কীভাবে এসব হতে পারে।” জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বলেন, “মহিলারা বলছেন, আমরা শুধু সেন্ট্রাল ফোর্স চাই। আমরা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। মেয়েদের বলেছে, এই বাড়িতে থাকলে ধর্ষণ হয়ে যাবি। চলে যা। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা যা যা করার করব।” অন্যদিকে, আক্রান্ত মহিলারা জানান, তাঁদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেসব জানিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যদের। আজ, শনিবার মুর্শিদাবাদের হিংসা কবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করবেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা।

হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ

ওয়াকফ ইস্যুতে অশান্তি (Waqf Bill Protest) শুরু হওয়ার পর মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলা থেকে প্রচুর মানুষ মালদায় চলে এসেছেন। প্রাণ বাঁচাতে তাঁদের কেউ কেউ খোলা মাঠে থাকতে শুরু করেছিলেন। পরে ঘরছাড়াদের জন্য আশ্রয় শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়। রাজ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) প্রতিনিধিরা এসে সেই আশ্রয়স্থলেই যান ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করতে। বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা, শোনেন অভাব-অভিযোগ। ওয়াকফের প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি। হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। সেই ভয়ে অনেকেই ঘর থেকে পালিয়ে যান এবং আশ্রয় নেন পাশের জেলা মালদায়। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বস্তুত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে শুরু হওয়া গোলমালের জেরে গত শুক্রবার বিকেল থেকে নৌকায় গঙ্গা পেরিয়ে ধুলিয়ানের বেতবোনা, বাজারপাড়া ও হাতিচিত্রা এলাকার কমপক্ষে ৪০০ জন আশ্রয় নেন পারলালপুর হাই স্কুলে। এলাকায় শান্তি ফেরাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বিএসএফ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share