মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরও এক বার উত্তপ্ত হয়ে উঠল মণিপুর (Manipur Violence)। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি বিতর্কিত নোটিশ নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই নোটিশে কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের এক অজ্ঞাতনামা বৈঠকে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে অংশ নেবে কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিও। এই নোটিশটি কুকি-প্রধান এলাকার এক স্থানীয় গ্রাম উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে, সামসাও নামে পরিচিত একটি কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক আয়োজিত হবে। এই সংগঠনটিকে সাধারণত কুকি ন্যাশনাল ফ্রন্ট (KNF)-এর গুপ্ত বাহিনী হিসেবে ধরা হয়। গ্রামপ্রধানরা যেন নিশ্চিত করেন, এই বৈঠকে ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন (IRB), মণিপুর রাইফেলস এবং মণিপুর পুলিশের কুকি সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
কেন এই নোটিশ ঘিরে আতঙ্ক
২০২৩ সাল থেকেই কুকি ও মেইতেইদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অশান্ত মণিপুর (Manipur Violence)। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর পরিস্থিতি খানিক নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও বিক্ষিপ্ত অশান্তি চলছে রাজ্য জুড়ে। চলতি মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘অবাধ চলাচল’ নির্দেশের প্রতিবাদে মণিপুরের কুকি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। গত ১৩ মার্চ বন্ধ প্রত্যাহার করা হলেও কুকিরা জানিয়ে দিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ তাঁরা মানবেন না৷ কুকিদের দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ‘অবাধ চলাচল’-এর বিরোধিতা করে যাবেন। এমন এক সংবেদনশীল সময়ে, এই ধরনের নোটিশ ভাইরাল হওয়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাপা আতঙ্ক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নোটিশ যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে এটি এক ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত বহন করে। এটি দেখায় যে রাজ্য সরকারের সেবায় নিযুক্ত কর্মীরা হয়তো জোর করে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংযুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন। এই ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতায় বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক বলেন, “জাতিগত ভিত্তিতে যদি বাহিনীর উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হয়, তবে তা সরকারি কাঠামোর উপরেই আঘাত। এটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।” সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে যদি কোনও ধরনের ‘সমন্বয়’ হয়, তবে তা রাজ্যের স্থিতিশীলতা ও শান্তি ফেরানোর প্রচেষ্টায় বড়সড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত মণিপুর সরকার কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা ব্যুরো (IB) এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কড়া নজর রাখছে।
Leave a Reply