EtherealX: বিশ্বে প্রথম! বেঙ্গালুরুর স্টার্টআপ তৈরি করল পুনর্ব্যবহারযোগ্য মিডিয়াম-লিফট রকেট

etherealx bengaluru start-up builds world’s first reusable mediumlift rocket

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য মিডিয়াম-লিফট লঞ্চ ভেহিকল তৈরি করল বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক স্টার্টআপ ইথেরিয়াল এক্সপ্লোরেশন গিল্ড (EtherealX)। ভারতের প্রযুক্তি নগরীর এই সাফল্য এখনও পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম মহাকাশ সংস্থা ইলন মাস্কের স্পস এক্সও (SpaceX) অর্জন করতে পারেনি। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা ইতিমধ্যেই ভারতের বেসরকারি মহাকাশ শিল্পে এক শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ইসরোর প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার মানু জে. নায়ার, শুভায়ু সরদার এবং প্রশান্ত শর্মার হাত ধরে ভারতের এই সংস্থার পথ চলা শুরু। এই সংস্থার তৈরি প্রধান রকেট রেজর ক্রেস্ট মার্ক-১ (Razor Crest Mk-1), যে কোনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। এই রকেট ইসরোর (ISRO)-এর বর্তমান রকেটগুলোর থেকেও উন্নত, বলে দাবি প্রস্তুতকারকদের।

নতুন প্রযুক্তি, নতুন দিগন্ত

রেজর ক্রেস্ট মার্ক-১ (Razor Crest Mk-1)-এর সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো এর দুটো ধাপ—বুস্টার এবং আপার স্টেজ—উভয়কেই পুনর্ব্যবহারযোগ্যভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যেখানে স্পেস এক্স সহ বহু সংস্থাই উচ্চতাপে পোড়া আপার স্টেজ ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ইথেরিয়াল এক্সপ্লোরেশন একটি বিপরীতমুখী কৌশল নিয়েছে। তারা এই প্রবল তাপকে রকেটের নিজস্ব ইঞ্জিন চালানোর জন্য ব্যবহার করছে। সংস্থার সিইও মানু নায়ার বলেন, “পুনঃপ্রবেশ তাপের সঙ্গে যুদ্ধ না করে, যদি তা দিয়ে ইঞ্জিন চালানো যায়—তবেই তো আসল উদ্ভাবন।” আদতে এই স্টার্টআপটির লক্ষ্য হল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শিল্পে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা, যেখানে রকেটের বুস্টার এবং উপরের স্তর উভয়কেই পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এটি একটি উদ্ভাবনী ধারণা, যা আগে কেউ সফলভাবে করতে পারেনি।

তাপ নয়, শক্তিতে রূপান্তর

রকেটের আপার স্টেজ পুনরুদ্ধারের প্রধান সমস্যা হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় সৃষ্ট তাপ। এই তাপ ঠেকাতে সাধারণত হিট শিল্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বেঙ্গালুরুর এই সংস্থা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। নায়ার বলছেন, “আমরা এই তাপকে ঠেকানোর পরিবর্তে সেটিকে কাজে লাগানোর একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছি। এই তাপ দিয়ে আমরা ইঞ্জিন চালাতে পারি, এটাই আমাদের নতুন ফিড সাইকেল।” এর ফলে, এই রকেট প্রতি কেজি উৎক্ষেপণে খরচ হবে মাত্র ৩৪০ থেকে ২০০০ মার্কিন ডলার— যা স্পেস এক্স-এর আটভাগের এক ভাগ। অতএব কম খরচেই রকেট লঞ্চ সম্ভব হবে।

ভারতের স্পেস রেনেসাঁয় বেঙ্গালুরুর নেতৃত্ব

ভারতের মহাকাশ প্রযুক্তিতে যে নবজাগরণ ঘটছে, তার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বেঙ্গালুরু। ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এস. সোমনাথ বলেছিলেন, “আজ ছোট স্যাটেলাইট বানানো হয় ঠিকই, কিন্তু আমি আশা করি একদিন ৪-৬ টন ওজনের কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটও ভারতেই তৈরি ও উৎক্ষেপণ হবে।” এই দিক দিয়ে বেঙ্গালুরু এখন ভারতের স্পেস হাব হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে ইউরোপ, জাপানসহ একাধিক দেশের সংস্থার সঙ্গে ১১০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইথেরিয়াল এক্সপ্লোরেশন (EtherealX)। বর্তমানে প্রতিরক্ষা ও বৈজ্ঞানিক দিক থেকে বিশ্বের বহু দেশ এখন চিন ও রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প খুঁজছে। এক্ষেত্রে ভারত হয়ে উঠছে সেই বিকল্প। ইন্দো-ইউএস স্পেস অ্যান্ড ডিফেন্স প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত ইথেরিয়াল এক্সপ্লোরেশন, মহাকাশ প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা লজিস্টিক্সের নতুন বিশ্বজোটেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।

২০২৭-এর দিকে নজর

রেজর ক্রেস্ট মার্ক-১ (Razor Crest Mk-1)-এর প্রযুক্তিগত ডেমো লঞ্চ হতে চলেছে ২০২৬ সালে। এই রকেটটির পূর্ণাঙ্গ লঞ্চ অনুষ্ঠিত হবে ২০২৭ সালের মার্চে। ইতিমধ্যে তারা ১.২ মেগা-নিউটন ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন তৈরি করছে, যা ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী বেসরকারি রকেট ইঞ্জিন হতে চলেছে। সরকারি ও বেসরকারি তহবিল থেকে প্রাথমিক ৫ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে তারা। আগামী দিনে আরও বিনিয়োগের প্রত্যাশা করছে সংস্থাটি।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র বিশ্ব জয়

ইথেরিয়াল এক্সপ্লোরেশন (EtherealX)-এর প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ মডেলে তৈরি হচ্ছে। প্রায় সব যন্ত্রাংশই ভারতেই উৎপাদিত, কিছু বড় ও জটিল উপাদান বর্তমানে আউটসোর্স করা হলেও ভবিষ্যতে তা ভারতেই উৎপন্ন করার কথা জানিয়েছেন সংস্থার সিইও। নায়ার মনে করেন, স্পেস এক্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে গেলে মূল বাধা শুধু পুঁজি। তবে বর্তমানে মোদি সরকারের আমলে মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ছে। সরকার নিজেও সেক্টর-ফোকাসড ভেঞ্চার ফান্ড তৈরি করেছে। ইথেরিয়াল এক্সপ্লোরেশন দেখিয়ে দিচ্ছে, শুধুমাত্র লঞ্চ সাইট হিসেবে নয়, একটি লঞ্চ শক্তি হিসেবেও বিশ্ব মানচিত্রে ভারতের উঠে আসা সম্ভব।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share