Alzheimers-Dementia: প্রৌঢ় বয়সে একাকিত্ব বাড়াচ্ছে বিপদ! কী পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল?

Loneliness in aged persons causes health consequences alzheimers dementia coping strategies

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

বদলে যাচ্ছে পরিবার! কাজের জন্য অধিকাংশ পরিবারেই সন্তান আর বাবা-মায়ের বাসস্থানের ঠিকানা এখন আলাদা! পড়াশোনা কিংবা কর্মসূত্রে অধিকাংশ পরিবারের তরুণ প্রজন্মকে আলাদা শহরে কিংবা ভিনদেশে থাকতে হচ্ছে। বাড়িতে থাকছেন প্রৌঢ় বাবা-মা। আর তার প্রভাব পড়ছে মস্তিষ্কে! সম্প্রতি অ্যালজাইমার নিয়ে এক কর্মশালায় চিকিৎসকদের একাংশ জানালেন, একাকিত্ব সমস্যা বাড়াচ্ছে। বিশেষত স্নায়ু ও মস্তিষ্ক সংক্রান্ত একাধিক সমস্যার কারণ একাকিত্ব (Loneliness)!

কী বলছে সাম্প্রতিক তথ্য?

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত দুই দশকে দেশ জুড়ে বেড়েছে ডিমেনশিয়া, অ্যালজাইমার (Alzheimers-Dementia) মতো রোগ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের সমস্যা বাড়ছে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। প্রৌঢ় বয়সেই অনেকে খুব সাধারণ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসের বিষয়ে মনে রাখতে পারছেন না। এর ফলে বয়স্কদের স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হচ্ছে। স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বয়স পঞ্চাশের চৌকাঠ পেরনোর পরেই ‘ব্রেন ফগ’-র মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অর্থাৎ, স্বাভাবিক কাজ করার সময়েই হঠাৎ কী কাজ করা হচ্ছিল, কীভাবে করতে হবে, সে সম্পর্কে সবকিছু কিছু সময়ের জন্য সম্পূর্ণ ভুলে যাওয়া। এই সমস্যা বারবার দেখা দিলে যথেষ্ট আশঙ্কার বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত ব্যবহারের ছোটো ছোটো জিনিস মনে রাখতে না পারা, ডিমেনশিয়া বা অ্যালজাইমারের (Alzheimers-Dementia) মতো সমস্যার প্রাথমিক উপসর্গ। একাধিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয়দের মধ্যে ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যা বাড়ছে। তাই আগাম সচেতনতা জরুরি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

কেন একাকিত্ব (Loneliness) বিপদ বাড়াচ্ছে?

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত দুই দশকে সমাজ ও পরিবারের কাঠামো অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আধুনিক জীবন যাপনে ব্যস্ততা বেড়েছে। তাই অনেক সময়েই পরিবারের তরুণ প্রজন্মদের সঙ্গে বয়স্কদের সময় কাটানোর বিশেষ সুযোগ হয় না। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দিনের বেশিরভাগ সময় একা থাকলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে। কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারলে, অনেক সময়েই মানসিক চাপ ও অবসাদ তৈরি হয়। এর প্রভাব মস্তিষ্কে পড়ে। স্নায়ুর সক্রিয়তা ও কমে যায়। বয়স বাড়লে স্বাভাবিক কারণেই স্নায়ুর ক্ষমতা কমে। কিন্তু তার উপরে মানসিক চাপ বাড়তি প্রভাব ফেলে। পাশপাশি, বাড়িতে দীর্ঘ সময় একা থাকলে সক্রিয় থাকার সুযোগ কম হয়। স্থির জীবনে মস্তিষ্কের কাজ করার সুযোগ ও কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে স্মৃতিশক্তির উপরে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও কমতে থাকে‌। তাই অ্যালজাইমার কিংবা ডিমেনশিয়ার (Alzheimers-Dementia) মতো রোগের প্রকোপ বাড়ার পিছনে একাকিত্ব সবচেয়ে বড় কারণ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

কী পরামর্শ বিশেষজ্ঞ মহলের?

ডিমেনশিয়া কিংবা অ্যালজাইমারের মতো রোগের দাপট কমাতে সচেতনতা জরুরি। পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। পরিবারের কাঠামো ও বদলে যাচ্ছে। তাই এই সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকাও দরকার। প্রৌঢ় বয়সে নিজের মতো জীবন যাপন জরুরি। সে সম্পর্কে অবগত থাকাও প্রয়োজন। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকলেই ডিমেনশিয়া কিংবা অ্যালজাইমারের (Alzheimers-Dementia) মতো রোগের ঝুঁকি কমবে‌। মানসিক চাপ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত সক্রিয় জীবন যাপন, সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। তাই সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার।

বই পড়া, হাঁটা জরুরি

চিকিৎসকদের একাংশের পরামর্শ, নিয়মিত বই পড়া জরুরি। তাঁরা জানাচ্ছেন, বয়স্কদের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস একাকিত্ব (Loneliness) কাটাতে সাহায্য করবে। মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখবে। স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতেও সাহায্য করবে‌‌। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত কয়েক ঘণ্টা বা পড়লে মস্তিষ্কের কাজ হয়। আবার একাকিত্ব কমে‌। এর ফলে মানসিক অবসাদ দূর হয়।
এর পাশপাশি নিয়মিত হাঁটাচলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত সকাল ও বিকেলে অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটা জরুরি। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাইরে বেরোলে অবসাদ কমে। মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়া, প্রতিবেশির সঙ্গে কথা বলা এগুলো একাকিত্ব কমাতে সাহায্য করে। আবার নিয়মিত আধ ঘণ্টা হাঁটলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিক মতো হয়‌। পেশি ও স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও ঠিক থাকে।

আড্ডায় অনেক উপকার

বিভিন্ন ধরনের মেন্টাল অ্যাক্টিভিটির পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ঘরে বসেই ক্রশওয়ার্ড বা পাজেল গেম জাতীয় অ্যাক্টিভিটির অভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। এতে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে‌। বন্ধু তৈরি সবচেয়ে জরুরি বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে কোনও বয়সেই স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য বন্ধু প্রয়োজন। একাকিত্ব কাটাতে এবং প্রৌঢ় বয়সের রোগের ঝুঁকি কমাতেও জরুরি বন্ধু। তাই এলাকার ও আশপাশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দরকার। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এলাকার সম বয়সিদের সঙ্গে কিছুটা সময় গল্প করার অভ্যাস থাকা জরুরি। তাহলে একাকিত্ব (Loneliness) জটিল আকার নিতে পারবে না। ডিমেনশিয়া কিংবা অ্যালজাইমারের (Alzheimers-Dementia) মতো রোগের ঝুঁকিও অনেকটা কমবে।

DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share