মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) সঙ্গে পাকিস্তানের গলাগলির সম্পর্ক ক্রমশ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে নয়াদিল্লির। ক্রিপ্টো অংশীদারিত্ব ও তেল সরবরাহ থেকে শুরু করে বিরল খনিজ সহযোগিতা-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপে এটা স্পষ্ট। এই পরিবর্তনটা এসেছে দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাক-সমর্থিত জঙ্গি হামলার জবাবে নয়াদিল্লির অপারেশন সিঁদুরের পর (Pakistan)।
ট্রাম্পের দাবি (Donald Trump)
ট্রাম্প স্বয়ং বারবার নিজেকে কৃতিত্ব দিয়েছেন দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য সংঘাত প্রশমিত করার জন্য। তিনি পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন। সমর্থন করেন পাকিস্তানের বাণিজ্য চুক্তিকেও। এই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তান অপরিশোধিত তেল আমদানি করবে। পাকিস্তান তার কূটনীতিকে সাধুবাদ জানালেও, ভারতের সমালোচকরা এর নেপথ্যে দেখছে কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোগ ও খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার থেকে শুরু করে চিনা প্রভাব মোকাবিলা করা পর্যন্ত সব। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, মার্কিন দেশের এই উৎসাহ তেলের চেয়েও বেশি বিরল খনিজ পাওয়ার প্রবেশাধিকারের বিষয়ে, যা মার্কিন অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবুও, এই সময় পাকিস্তানের জেনারেলদের প্রতি প্রকাশ্য প্রশংসা এবং সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এই দুয়ে মিলে ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্পের নীতিগত পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ।
পাকিস্তান পেতে চলেছে অপরিশোধিত তেলের চালান
জানা গিয়েছে, পাকিস্তান এ বছরের শেষের দিকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের প্রথম অপরিশোধিত তেলের চালান পেতে চলেছে। ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসলামাবাদের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করার পর, এই প্রথম হবে অপরিশোধিত তেলের ব্যবসা (Pakistan)। ইসলামাবাদকে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি, ওয়াশিংটন পাকিস্তানকে বৃহৎ তেল মজুদ উন্নয়নে সাহায্য করবে। আমেরিকা ও পাকিস্তানের এই চুক্তি একাধিক দফা আলোচনার ফল। এই আলোচনা শুরু হয়েছিল এপ্রিলে, যখন ট্রাম্প পাকিস্তানি আমদানির ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিলেন। চুক্তির আওতায় পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রিফাইনারি, সিনার্জিকো, আমেরিকান অপরিশোধিত তেল আমদানির জন্য ভিটল কোম্পানির সঙ্গে এক মিলিয়ন ব্যারেলের চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। এটি পাকিস্তানের প্রথমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল কেনার ঘটনা। ভাইস চেয়ারম্যান উসামা কুরেশি দুই দেশের এই চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তেল পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় আমদানি পণ্য, যার মূল্য ১১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (Donald Trump)।
ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্রিপ্টো চুক্তি
গত এপ্রিলে ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার সময় পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন (ডি-ফাই) প্ল্যাটফর্ম, যার ৬০ শতাংশ মালিকানাই ট্রাম্পের পরিবারের। এই প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিলের সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর লক্ষ্য হল দেশের ব্লকচেইন প্রযুক্তির উন্নয়ন। উল্লেখ্য যে, এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছিল পহেলগাঁওয়ে যেদিন পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা বেছে বেছে হত্যা করেছিল ২৬ জন পর্যটককে, তার মাত্র পাঁচ দিন পরেই (Pakistan)। দ্য ডন নামের সংবাদপত্র জানিয়েছে, ওয়ার্ল্ড লিবার্টির একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সেখানে তারা পাকিস্তান জুড়ে ব্লকচেইন উদ্ভাবন, স্টেবলকয়েন গ্রহণ এবং বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন একীকরণকে ত্বরান্বিত করতে ইন্টেন্ট লেটারে স্বাক্ষর করেছে। ডিটি মার্কস ডি-ফাই এলএলসি যুক্ত ট্রাম্প (Donald Trump) পরিবারের সঙ্গে। এটি ওয়ার্ল্ড লিবার্টির মূল প্রতিষ্ঠানের ৬০ শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং নির্দিষ্ট ক্রিপ্টো রাজস্বের ৭৫ শতাংশ পাওয়ার দাবি করে। উল্লেখ্য যে, ট্রাম্প আছেন ‘চিফ ক্রিপ্টো অ্যাডভোকেট’ পদে, এরিক ও ডোনাল্ড জুনিয়র ‘ওয়েব৩ অ্যাম্বাসাডর’ এবং ব্যারন ট্রাম্প ‘ডি-ফাই ভিশনারি’ হিসেবে যুক্ত এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
আমেরিকার সঙ্গে দোস্তি
আমেরিকার সঙ্গে দোস্তি বজায় রাখতে ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। পাকিস্তানের বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে তাঁর সিদ্ধান্তমূলক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের কৃতিত্বের জন্যই এই পুরস্কার পাওয়া উচিত। আর ট্রাম্প স্বয়ং দাবি করেছেন, “আমার তো চার-পাঁচবার এটা পাওয়া উচিত ছিল। তারা আমাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেবে না। কারণ তারা কেবল এটা উদারপন্থীদেরই দেয়।” পহেলগাঁও হামলার পর যুদ্ধবিরতিতে তাঁর ভূমিকার দাবি প্রথম থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। ট্রাম্প বলেছিলেন, “হ্যাঁ, আমিই যুদ্ধ থামিয়েছি। আমি পাকিস্তানকে ভালোবাসি। আমি মনে করি মোদি একজন অসাধারণ মানুষ। তবে আমিই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছি (Pakistan)।” ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, কিছু মার্কিন আধিকারিক আবার পাকিস্তানের অনাবিষ্কৃত বিরল খনিজ ভাণ্ডারের দিকে শ্যেন দৃষ্টি দিচ্ছেন, যা ইলেকট্রনিকস ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিন এই খনিজের প্রধান সরবরাহকারী। সেই চিনের সঙ্গে বেড়ে চলা উত্তেজনার জেরে ওয়াশিংটনের আগ্রহ বেড়েছে বিকল্প উৎসের প্রতি। মার্কিন আধিকারিকরা এপ্রিলে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান মিনারেলস ইনভেস্টমেন্ট ফোরামেও অংশ নিয়েছিলেন বলে খবর (Donald Trump)।
পরিবহণ নেটওয়ার্ক নির্মাণে চিনের ভূমিকা
চিন ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলকে দক্ষিণের গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করে ২ হাজার মাইল দীর্ঘ পরিবহণ নেটওয়ার্ক নির্মাণ করছে। তবে বালুচিস্তানে স্বাধীনতাকামীদের বিদ্রোহ এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় তালিবানদের তৎপরতা এসব প্রকল্পকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সম্প্রতি বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা খনির ট্রাকে হামলা চালিয়ে সতর্ক করেছে যে, যে কেউ বালুচ জাতীয় সম্পদ লুটে জড়িত থাকবে, তাদেরই টার্গেট করা হবে। এদিকে, সোমবারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA) এবং এর সশস্ত্র শাখা সংগঠন মাজিদ ব্রিগেডকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণাটি ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। তার আগে অবশ্য সমস্ত রীতি ভেঙে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে মধ্যহ্নভোজ সারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, কিছু মার্কিন আধিকারিক পাকিস্তানের অপ্রচলিত রেয়ার আর্থ খনিজ ভান্ডারের দিকে নজর দিচ্ছেন, যা ইলেকট্রনিক্স ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (Donald Trump)।
মুনিরের আমেরিকা সফর
এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের এক প্যানেলের সাক্ষ্যে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলা পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এক অসাধারণ অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি জানান, তারা মার্কিন স্বার্থে হামলা চালানো জঙ্গিদের প্রত্যর্পণে সদিচ্ছা দেখিয়েছে। কুরিলা ভূয়সী প্রশংসা করেন পাক সেনাপ্রধান মুনিরের, যিনি ২০২১ সালের কাবুল বিমানবন্দর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী মোহাম্মদ শরিফুল্লাহকে গ্রেফতার করে প্রত্যর্পণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ওই হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল (Pakistan)। মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের জন্য মুনির আমেরিকা সফর করেন। কিন্তু মুনিরের এই সফর পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্র দমন করার অভিযোগ এনেছেন। ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীরা মুনিরকে “স্বৈরাচারী” ও “প্রতারক” আখ্যা দেন (Donald Trump)।
সমালোচনা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছে। সমালোচকদের মতে, অসামরিক নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে আমেরিকার সরাসরি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব আরও শক্তিশালী করছে (Pakistan)।
Leave a Reply