Indian Constitution: ৩০ দিন জেলে থাকলে যাবে মন্ত্রীত্ব, ১৩০তম সংবিধান সংশোধনকে কেন এত ভয় বিরোধীদের?

Indian Constitution 130th Constitution Amendment Bill The ministry will be disqualified if a person is imprisoned for more than 30 days in a criminal case

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে দায়ের মামলায় গ্রেফতার বা আটক হয়ে ৩০ দিন জেলবন্দি থাকলে চলে যাবে মন্ত্রিত্ব। প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে রাজ্যের মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী রেয়াত করা হবে না কাউকেই। ৫ বছরের বেশি কারাবাসের সাজা হতে পারে এমন ফৌজদারি মামলায় ৩০ দিনের বেশি জেলবন্দি থাকলেই যাবে মন্ত্রিত্ব। বুধবার লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি (Indian Constitution) পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। আর ইতিমধ্যেই তা নিয়ে রে রে করে উঠেছে বিরোধীরা। আর সেই তাণ্ডবের পুরভাগে রয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোদি সরকারের এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপে বিরোধীদের তাণ্ডবে প্রশ্ন উঠছে, যাঁদের চুরি, জোচ্চুরি, দুর্নীতি এবং অপরাধের মামলায় জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তারাই বিলের বিরোধিতায় সরব?

অপরাধমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতেই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

অপরাধমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতেই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করেছে মোদি সরকার। সংবিধান (Indian Constitution) সংশোধন করে অপরাধে অভিযুক্ত মন্ত্রীদের পদ থেকে সরানোর ব্যবস্থা করছে তারা। আর তাতেই সবচেয়ে বেশি জ্বালা ধরেছে সেই বিরোধীদের। যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অপরাধের অভিযোগ ভুরি ভুরি। ভেবে দেখুন যে কোনও সরকারি কর্মচারী যদি ২৪ ঘণ্টা জেলবন্দি থাকেন, তাহলে তাঁর পরিণতি ঠিক কী হতে পারে। আইন অনুসারে চাকরি হারাতে হয় সেই সরকারি কর্মীকে। তবে মন্ত্রীরা বাদ যাবেন কেন? নৈতিকতা কি শুধু সাধারণ নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য? ভোটে জিতলে কি নৈতিকতা পকেটে করে নিয়ে ঘোরা যায়? গ্রেফতারির ৩০ দিনের মধ্যে যদি কাউকে আদালত জামিন না দেয় তাহলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পক্ষে ধর্তব্যযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।

সংবিধান নির্মাতাদের কল্পনারও বাইরে ছিল, চুরির দায়ে মন্ত্রীরা জেলে যেতে পারেন

এদেশের সংবিধান তৈরির (Indian Constitution) জন্য গঠিত হয়েছিল গণপরিষদ, যার সভাপতি ছিলেন ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ। খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বাবাসাহেব বি আর আম্বেদকর। ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে, যার সভাপতিত্ব করেন সচ্চিদানন্দ সিনহা। এইভাবে ধাপে ধাপে চলতে থাকে সংবিধানের কাজ। ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন পরে সংবিধান রচনা শেষ হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদের সংবিধান গৃহীত হয়। দেশে সংবিধান লাগু হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। এই এত দীর্ঘ সময় ধরে সংবিধান নির্মাতারা বসে বসে সংবিধানকে নির্মিত করেন। কিন্তু তখনও সংবিধান নির্মাতারা এটা বুঝতে পারেননি যে অত্যাচারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য জেলে যেতে হত নেতাদের স্বাধীনতার আগে, আর স্বাধীনতার পরে দুর্নীতি-অপরাধের দায়ে নেতারা জেলে যাবেন, মন্ত্রীরা জেলে যাবেন, তার পরেও তারা নিজেদের পদ ছাড়বেন না।

অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক

খুব সাম্প্রতিক উদাহরণ দেওয়া যায়— দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারির পরেও ইস্তফা দেননি রাজধানীর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। জেলে বসে দিনের পর দিন রাজ্য শাসন করেছেন তিনি। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ক্ষেত্রে। রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারির পরেও বনমন্ত্রীর পদে বহাল ছিলেন তিনি। গ্রেফতারির প্রায় সাড়ে তিন মাস পর মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে সরান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানেই উঠছে নৈতিকতার প্রশ্ন। দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি দশাতেও কি রাজ্য শাসন করা যায়? চালানো যায় মন্ত্রক বা দফতর? তাছাড়া এই ধরণের নজিরে জনমানসে ধারণা তৈরি হতে পারে যে একবার ভোটে জিতলে জেলে গেলেও ক্ষমতার সুখ যাবে না। এই জায়গাটাতেই আঘাত হেনেছে মোদী সরকার। যে গুরুতর অপরাধ করে কোনও মন্ত্রী জেলে গেলে ৩০ দিনের মধ্যে আদালত তাঁকে জামিন না দিলে চলে যাবে তাঁর মন্ত্রী পদ। হতে পারে তিনি প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী। নতুন এই বিল অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে লেফটেন্যান্ট গভর্নর নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে পদ থেকে সরাতে পারবেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে সরানোর ক্ষমতা থাকছে রাষ্ট্রপতির হাতে। রাজ্যের মন্ত্রীদের সরাবেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাঁদের বিধায়ক ও সাংসদ পদ বহাল থাকবে।

কেন বিলের বিরোধিতায় বিরোধীরা (130th Constitution Amendment Bill)

এই বিলের যাঁরা বিরোধিতা করছে, তাঁরা কি বলতে চাইছে যে তাঁরা অপরাধ করবেন, তারপরেও তাঁরা মন্ত্রী থেকে যাবেন? তাঁরা দুর্নীতি করবেন, তারপরেও তাঁরা মন্ত্রী থেকে যাবেন? তাঁদের এই ভয় যে, অপরাধ এবং দুর্নীতির দায়ে তাদের জেল হতে পারে, এটা তাঁরা জানেন। কিন্তু কোনওভাবে তাঁরা মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন না (Indian Constitution)। ঠিক যেমনটা অরবিন্দ কেজরিওয়াল করেছিলেন। বুধবার, সংসদে যখন বিরোধীদের হট্টগোল চরমে তাখন তাঁদের চুপ করিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বক্তব্য। শাহ বলেন, “আমরা এতটাই নির্লজ্জ হতে পারি না যে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকার পরেও সাংবিধানিক পদ (130th Constitution Amendment Bill)
দখল করে থাকব।”

গর্জে উঠলেন অমিত শাহ

এ নিয়ে আবার কংগ্রেস সাংসদ কে. সি. বেনুগোপালকে অমিত শাহের ইতিহাস টানতে দেখা যায়। অমিত শাহও গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন জেলে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। কে. সি. বেনুগোপাল বলেন, “এই বিল সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলিকে ধ্বংস করছে। আমি কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটা প্রশ্ন করতে পারি? গুজরাটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি কি তখন নৈতিকতার মান রক্ষা করেছিলেন?” এরই পাল্টা হিসেবে গর্জে ওঠেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমার বিরুদ্ধে ভুয়ো অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবুও আমি নৈতিকতা ও আদর্শ মেনে চলেছি। আমি শুধু পদত্যাগই করিনি, বরং আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালতে সম্পূর্ণভাবে খারিজ না হওয়া পর্যন্ত কোনও সাংবিধানিক পদ গ্রহণ করিনি। আর তাঁরা আমাদের নৈতিকতা শেখাতে চাইছেন? আমি পদত্যাগ করেছিলাম। আমি চাই নৈতিকতা দৃঢ় হোক। আমরা এতটা নির্লজ্জ হতে পারি না যে অভিযোগ থাকলেও সাংবিধানিক পদ আঁকড়ে থাকব। আমাকে গ্রেফতার করার আগেই আমি পদত্যাগ করেছিলাম।” প্রসঙ্গত, ওই মামলায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অমিত শাহকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অমিত শাহ যে নজির দেখিয়েছেন, সেই নজির কি ভারতবর্ষের অন্যান্য দলের নেতা-মন্ত্রীরা দেখানোর সাহস, হিম্মত রাখেন? সেই নজির কি দেখাতে পেরেছেন রাজ্যের রেশন কেলেঙ্কারিতে জেলে যাওয়া নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কিংবা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল? এনারা পারেননি। বিজেপির রাজনীতিতে সর্বোপরি থেকেছে মূল্যবোধ। একাত্মমানববাদেই যার উল্লেখ রয়েছে। সেই নীতিরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে মোদি সরকারের নয়া সংবিধান সংশোধনীতে। এতেই আপত্তি বিরোধীদের।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share