মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ব্রিটিশ কবলমুক্ত হয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট। এরও দু’মাসেরও বেশি সময় পরে জম্মু-কাশ্মীর যুক্ত (JK Accession) হয়েছিল ভারতের সঙ্গে। দিনটি ছিল ২৬ অক্টোবর, ১৯৪৭।
ভারত-ভঙ্গ (JK Accession)
ভারতের স্বাধীনতা লাভ, দেশভাগ এবং পাকিস্তান সৃষ্টির ঘটনা এত দ্রুত ঘটে গিয়েছিল যে, এর সঙ্গে যুক্ত কারও জন্যই সময়টি সহজ ছিল না (Guruji Golwalkar)। ব্রিটিশদের জন্য তো নয়ই, নয় দেশপ্রেমিক ভারতীয়দের জন্যও, যাঁরা স্বাধীনতা লাভ করতে জান-প্রাণ এক করেছিলেন। কারণ দেশপ্রেমিক ভারতীয়দের জন্য এই ভারত-ভঙ্গ ছিল এমন এক গভীর আঘাত, যা এর আগে কখনও অনুভব করেননি তামাম ভারতবাসী। দেশভাগ, যার ফলে জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানের, তা আজও ভারতের জন্য এক দগদগে ঘায়ের মতো। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে এটি ছিল একটি তাজা ও গভীর ক্ষত, বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে। সেই সময় দেশীয় রাজ্য ছিল ভূস্বর্গ। এর অর্ধেকেরও বেশি ভূখণ্ড পাকিস্তানের হাতে চলে গিয়েছিল এক বিশ্বাসঘাতক হামলার মাধ্যমে। পাকিস্তান মহারাজা হরি সিংকে ধোঁকা দিয়ে বিশ্বাস করিয়েছিল যে তাদের উদ্দেশ্য সম্মানজনক ও সৎ। অগাস্ট ১৯৪৭-এ যখন মহারাজা স্ট্যান্ডস্টিল চুক্তিতে সই করেছিলেন, পাকিস্তান তখন সেই কথাই বলেছিল।
সংঘচালক বদ্রী দাস
পাঞ্জাব ও বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অস্থিরতা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পণ্ডিত প্রেম নাথ ডোগরা মহারাজাকে পরামর্শ দেন যাতে তিনি দ্রুত তাঁর রাজ্যকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি জনমত গঠন করেন এবং বহু রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মহারাজার কাছে পেশ করেন। প্রতিবেশী পাঞ্জাবের সংঘচালক বদ্রী দাস স্বয়ং মহারাজার সঙ্গে দেখা করেন। তার পরেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন মহারাজা হরি সিং।
হরি সিংয়ের প্রতি বৈরিতা
কী কারণে মহারাজার এই দশা? এর উত্তর হল স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মহারাজা হরি সিংয়ের প্রতি বৈরিতা। সেই কারণেই মহারাজা দ্রুত স্বাধীন ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখাননি। এই হিংসার শেকড় মেলে ১৯৪৬ সালের গ্রীষ্মকালের কোহালা ঘটনায়। সেই সময় নেহরু, তাঁর বন্ধু (দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত) শেখ মহম্মদ আবদুল্লাকে রক্ষা করতে শ্রীনগরে যাওয়ার (Guruji Golwalkar) চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় আবদুল্লা ছিলেন গারদে। পথে বাধা দেওয়া হয় নেহরুকে। তাঁকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, হরি সিংয়ের রাজ্যে আর এগোতে পারবেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এই ঘটনাই নেহরুর মানসিকতায় গভীর ছাপ ফেলেছিল। এর পর থেকে তিনি হরি সিংকে শত্রু হিসেবেই বিবেচনা করতে শুরু করেন (JK Accession)।
জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাসে স্মরণীয় দিন
১৭ অক্টোবর, জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। কারণ ১৯৪৭ সালের এই দিনেই শ্রী গুরুজি গোলওয়ালকর শ্রীনগরে মহারাজা হরি সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এজন্য গুরুজি দিল্লি থেকে বিমানে শ্রীনগর গিয়েছিলেন এবং মহারাজাকে তৎক্ষণাৎ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি করিয়েছিলেন। গুরুজি তিন দিন শ্রীনগরে থেকে দিল্লিতে ফেরেন ১৯ অক্টোবর। এর পর তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অসংখ্য কর্মীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতে ৫৬০টিরও বেশি দেশীয় রাজ্য ছিল। এই দেশীয় রাজ্যগুলির নিজ নিজ ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার ছিল। তারা চাইলে ভারত কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমাও ছিল না। তা সত্ত্বেও হরি সিংয়ের প্রতি নেহরুর বৈরী মনোভাবের কারণেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন ভূস্বর্গের মহারাজা। অথচ, ১৯৩০-৩১ সালেই লন্ডনে অনুষ্ঠিত দেশীয় রাজ্যগুলির গোলটেবিল বৈঠকে মহারাজা স্পষ্টভাবে ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন (JK Accession)।
নেহরুর চালাকি!
মনে রাখতে হবে, নেহরু মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল তাঁর ওপরই। অথচ, জম্মু-কাশ্মীর ছিল এমন এক দেশীয় রাজ্য, যেটির ব্যাপারে নেহরু নিজেই সিদ্ধান্ত নেন যে এটি তিনি তাঁর নিজের হাতে রাখবেন (Guruji Golwalkar)। নেহরু সরাসরি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। কারণ তিনি তাঁর বন্ধু শেখ আবদুল্লাকে একটি সুবিধাজনক চুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। নেহরুর এই ব্যক্তিগত ইচ্ছাই জম্মু-কাশ্মীর সমস্যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দেয়। নেহরু চেয়েছিলেন হরি সিংহকে জব্দ করতে। ইচ্ছে পূরণে তিনি যেসব পদক্ষেপ করেছিলেন, তার জেরেই জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কিত বহু জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়, যার মোকাবিলা আজও করতে হচ্ছে ভারতকে। হরি সিং জানতেন, পাকিস্তানে যোগ দিলে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হবেন। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে চাননি তিনি।
গুরুজির হাতযশ
ক্রান্তিকাল। এহেন পরিস্থিতিতে গুরুজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ১০ দিনের মধ্যেই হরি সিং স্বাক্ষর করেন ভারতভুক্তির দলিলে। তাঁর পুরো রাজ্য একীভূত হয়ে যায় ভারতের সঙ্গে (Guruji Golwalkar)। তবে বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি, এ রাজ্যের বিরাট একটা অংশ, যেমন গিলগিট-বালতিস্তান, পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর (PoJK) এবং আরও কিছু অঞ্চল তৎকালীন সরকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই অঞ্চলগুলি জোর করে দখল করে ফেলেছিল পাকিস্তান। যার মাশুল ভারতীয়দের গুণতে হচ্ছে আজও (JK Accession)।
Leave a Reply