Rash Purnima 2025: আজ কার্তিক পূর্ণিমা, দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে রাস উৎসব ও দেব দীপাবলি

Rash Purnima 2025 time significance radha krishna rash utsav bengal guru nanak birthday kartik purnima dev deepavali

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাসযাত্রা (Rash Purnima 2025) মূলত বৈষ্ণবদের উৎসব। জয়দেবের ‘গীতগবিন্দম্‌, চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’, মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যে রাসের কথা বলা হয়েছে। বৃন্দাবন রাস, বসন্ত রাস খুব উল্লেখযোগ্য। এই বৈষ্ণব ভাবনায় শ্রীকৃষ্ণপ্রেম এবং প্রকৃতিস্বরূপ রাধা (Radha-Krishna) সাধনাই হল রাস। এই উৎসবের কথা বিভিন্ন পুরাণেও রয়েছে। শারদ রাস এবং বসন্ত রাস-দুটিই বৈষ্ণবদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

আজ, বুধবার, বাংলা তথা দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে রাসযাত্রা। একইসঙ্গে, এ বছর রাস পূর্ণিমা বা কার্তিক পূর্ণিমার সঙ্গে একইদিনে পড়ছে গুরু নানকের জন্মতিথির (Guru Nanak Birthday) দিন। রাস পূর্ণিমা বাংলার আপামার বাঙালির কাছে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেবের রাস উৎসব পালনের কথা জানা যায়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সময়ের পরবর্তী সময়ে রাস পূর্ণিমা আরও জাঁকজমক ভাবে পালন করা হয়। কার্তিক পূর্ণিমার তিথিতে অন্যদিকে দেশজুড়ে ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে দেব দীপাবলি (Dev Deepavali)। দেবতাদের দীপাবলি উৎসবে সেজে উঠেছে বারাণসী (Varanasi)। সন্ধ্য়ায় কাশীর অর্ধচন্দ্রাকৃতি গঙ্গারঘাটগুলিকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করতে ৫ নভেম্বর ১০ লক্ষের বেশি প্রদীপ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে। কাশীধাম জুড়ে রাতভর পালিত হবে দেব দীপাবলি।

পঞ্জিকা মতে রাস পূর্ণিমার তিথি কখন?

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসারে, পূর্ণিমা লেগেছে ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে, বাংলা ১৮ কার্তিক এবং পূর্ণিমা তিথি শেষ হচ্ছে ৫ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটে। আবার গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে, পূর্ণিমা শুরু হয়েছে ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার রাত রাত ৯টা ২২ মিনিটে। তিথি শেষ হচ্ছে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে। উভয় পঞ্জিকা অনুযায়ী, উদয়া তিথি ধরে আজ, বুধবার, ৫ নভেম্বর, বাংলায় ১৮ কার্তিক শ্রীরাধা-শ্রীকৃষ্ণের প্রেম উৎসব রাসযাত্রা (Rash Purnima 2025) পালিত হবে।

রাসের তাৎপর্য কী (Rash Purnima 2025)?

প্রেমভাব বৈষ্ণব ভাবনার একটি প্রধান ভাব। রাস শব্দ এসেছে রস থেকে। রসের বিরাট ব্যাপ্তি। আনন্দ আস্বাদনই মূল কথা রাসের। বৈষ্ণব রসশাস্ত্রে পঞ্চম রস, শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য মধুর রস সম্পর্কে বিস্তৃত ভাবে বলা হয়েছে। বৃন্দাবনদাসের ‘শ্রীশ্রীচৈতন্যভাগবত’ এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’-কাব্যে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে রস বা লীলা সম্পর্কে। রাস মানেই মিলন (Rash Purnima 2025)। কৃষ্ণ প্রেমের ক্ষুদ্র আত্মা পরমাত্মায় মিলনের বাসনাই রাসের মূল ভরকেন্দ্র। পূর্ণ অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহাভাবের একমাত্র অধিকারিণী শ্রীরাধারানি। কৃষ্ণ হলেন জগতের আসল পুরুষ, বাকি মানবসামজ প্রকৃতিতুল্য। তাই সকল গোপিনী এবং নরনারী রাধাভাব বা মঞ্জরী ভাবনায় ভাবিত হন। এই পরম জ্ঞানের কথা জানানোর জন্যই কৃষ্ণের বৃহৎ লীলা বা রাসের প্রকাশ।

মুক্তির পথ দেখান কৃষ্ণস্বরূপ জ্ঞান

কৃষ্ণপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে গোপিনীরা সংসার ত্যাগ করে বৃন্দাবনে চলে যান। সেখানে গিয়ে সকলে কৃষ্ণপ্রেমে সমবেত হন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের সংসারে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু গোপিনীরা মানতে অস্বীকার করেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের এই ভাবনায় মনে অহংকার ভাব এলে রাধাকে নিয়ে চলে যান। পরে গোপিনীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। অহংকার ভুলে গিয়ে কৃষ্ণপ্রেমে স্তব পাঠ শুরু করেন। এদিকে তাঁদের স্তবে কৃষ্ণ সন্তুষ্ট হলে কৃষ্ণ ফিরে আসেন। এরপর গোপিনীদের জীবন সম্পর্কে গভীর তত্ত্বকথার উপদেশ দেন। প্রত্যক গোপিনীর মনোবাঞ্ছা পূরণ করে জাগতিক দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির পথ দর্শান। এই কৃষ্ণ (Rash Purnima 2025) হলেন প্রকৃত জ্ঞানের আধার। আর জগতস্বরূপ জ্ঞান হলেন স্বয়ং রাধা। সকল গোপিনীরা হলেন রাধা শক্তির প্রকাশ মাত্র।

বাংলাজুড়ে রাস-উৎসব

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাস (Rash Purnima 2025) বাংলা, মথুরা, বৃন্দাবন, ওড়িশা, অসম, মণিপুর, পূর্ববঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় ব্যাপক ভাবে দেখা যায়। তবে মূল আরাধ্য রাধাকৃষ্ণ হলেও অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো করতে দেখা যায়। যেমন-কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে রাস হয় এবং এক মাস মেলা বসে এখানে। এই মেলা বিরাট বিখ্যাত। এখানে রাসে দুর্গাপুজো, কালীপুজোও করতে দেখা যায়। আবার নবদ্বীপ, শান্তিপুর, ফুলিয়া, বর্ধমানের বেশ কিছু বৈষ্ণবপাট বাড়ি, সমাজবাড়ি এবং আখড়ায় মাটির মূর্তিতে রাধাকৃষ্ণের পুজো হয়। গৌর-নিতাই, পঞ্চতত্ত্বের নামে চলে নাম-সংকীর্তন এবং নগর পরিক্রমা। শ্রীচৈতন্যের স্মৃতি বিজড়িত জায়াগায় পালন হয় বিশেষ পুজো। কীর্তন, পদাবলী, পালাগান এবং রাসের সখীদের অষ্টকলা প্রদর্শন মূল আকর্ষণ থাকে। পিছিয়ে নেই পশ্চিমের জেলা পুরুলিয়া। পুরুলিয়ার রাসমেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এবং এটি রাস পূর্ণিমার পাঁচ দিন পর থেকে শুরু হয়।

কার্তিক পূর্ণিমা, দেব দীপাবলি ও ত্রিপুরী পূর্ণিমা

রাস পূর্ণিমাকে (Rash Purnima 2025) অনেকে কার্তিক পূর্ণিমা বলে থাকেন। কার্তিক পুজো ঘিরে কাটোয়া ও তার সংলগ্ন নানান এলাকা খ্যাত। কাটোয়া এবং হুগলি জেলার চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে কার্তিক পুজো খুব বিখ্যাত। এই পুজো ঘিরে বহু মানুষের ভিড় হয় এলাকায়। কার্তিক পুজো পালিত হয় কার্তিক পূর্ণিমায়। এই সময়ে সূর্য ওঠার আগে স্নান করলে শুভকর্ম ফল হয়। অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পুণ্যলাভ হয়। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে দেবলোকে দীপাবলি (Dev Deepavali) পালন করা হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। দেবতাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মর্ত্যেও এ দিন প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা রয়েছে। বিশেষ করে এ দিন বেনারস ও হরিদ্বারের গঙ্গার ঘাট আলোর মালায় সাজিয়ে তোলা হয়। হাজার হাজার মানুষ গঙ্গার ঘাটের শোভা দেখতে বেনারস ও হরিদ্বারে ভিড় করেন। অন্য পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই রাস পূর্ণিমায় ভগবান শিব ত্রিপুরাসুর নামে এক রাক্ষসকে বধ করেছিলেন। তাই এই পূর্ণিমা ত্রিপুরী বা ত্রিপুরারি পূর্ণিমা নামেও অনেক জায়গায় পরিচিত। ভগবান শ্রীবিষ্ণু (Radha-Krishna) এই দিনে মৎস্য অবতার ধারণ করেছিলেন।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share