মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) বাঙালিদের চিরকালীন সম্প্রীতির উত্সব। বাঙালির ঘরে ঘরে ভাই-বোনদের ভিতর এই মিষ্টি-মধুর মঙ্গলময় উৎসব, যার নাম ভাইফোঁটা, সেটিকেই মহারাষ্ট্র, গুজরাটের মতো পশ্চিম ভারতে বলা হয় ‘ভাই দুজ’। আবার কর্নাটক, গোয়ায় ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাই বিজ’। উত্তরবঙ্গেই ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাই টিকা’। হিন্দুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উত্সব ঘিরে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী (Mythological Stories)।
যম-যমুনার গল্প (Yama-Yamuna)
কথিত, সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার ছিল যমুনা নামে এক কন্যা ও যম নামে এক পুত্র। পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সহ্য করতে না পেরে প্রতিলিপি ছায়ার কাছে রেখে চলে যান। সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়ায় কেউ ছায়াকে চিনতে পারে না। ছায়ার কাছে ওই দুই সন্তান কখনও মায়ের মমতা, ভালবাসা পায়নি। দিনের পর দিন ধরে অত্যাচার করতে থাকে। অন্য দিকে, সংজ্ঞার প্রতিলিপি ছায়াকে বুঝতে না পেরে সূর্যদেবও কোনও দিন কিছু বলেননি। ছায়ার ছলে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হন যমুনা। এক সময় যমুনার বিয়েও হয়। বিয়ে হয়ে যমের থেকে অনেক দূরে সংসার করতেন যমুনা। দীর্ঘ কাল ধরে দিদিকে দেখতে না পেয়ে মন কাঁদে যমের। মন শান্ত করতে এক দিন দিদির বাড়ি চলে যান যমরাজ। প্রিয় ভাইয়ের আগমনে হাসি ফোটে দিদির মুখেও। দিদির আতিথেয়তা ও স্নেহে মুগ্ধ হয়ে ফেরত যাওয়ার সময় যম একটি বর চাইতে বলেন যমুনাকে। তখন যমুনা বলেছিলেন, এই দিনটি ভাইদের মঙ্গল কামনা চেয়ে প্রত্যেক বোন যেন ভ্রাতৃদ্বিতীয়া (Bhai Phonta 2025) হিসেবে পালন করে। সেই বর দান করে যম পিতৃগৃহে চলে যান। যমের মঙ্গল কামনায় এ দিনটি পালন করায় যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন।
কৃষ্ণ-সুভদ্রার কাহিনী (Lord Krishna-Subhadra)
আরও এক পৌরাণিক কাহিনিতে (Mythological Stories) বলা হয়েছে, একসময় বালির হাতে পাতালে বন্দি ছিলেন বিষ্ণু। সেইকারণে চরম বিপদের মুখে পড়লেন স্বর্গের সব দেবতারা। কোনও ভাবেই যখন বিষ্ণুকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না, ঠিক সেই সময় লক্ষ্মীর উপর সকলে ভরসা করতে শুরু করেন। নারায়ণকে উদ্ধার করার জন্য় লক্ষ্মী বালিকে ভাই পাতিয়ে ফেলেন। তাকে ফোঁটাও দেন লক্ষ্মী। সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয় তিথি। ফোঁটা পেয়ে লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী তখন বিষ্ণুর মুক্তি চেয়ে উপহার চেয়ে নেন। ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার উপাখ্যানও শোনা যায়। কথিত রয়েছে, ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন কৃষ্ণ। তারপর দ্বারকায় ফিরে আসলে বোন সুভদ্রার আনন্দের সীমা থাকে না। কৃষ্ণের আদরের বোন হল সুভদ্রা। কৃষ্ণকে অনেকদিন পর দেখতে পেয়ে তার কপালে বিজয়তিলক পরিয়ে দেন। কপালে ফোঁটা দিয়ে দাদাকে মিষ্টিও খেতে দেন। সেই থেকে নাকি ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) উত্সব পালন করা হয়।
জৈন ধর্মের কাহিনী
চতুর্দশ শতাব্দীর পুঁথি অনুসারে, জৈন ধর্মের অন্যতম প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পরে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। সেই সময়ে তাঁর বোন অনসূয়া নন্দীবর্ধনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে। সেখানে অনেক প্রার্থনার পরে নন্দীবর্ধন বোনের কাছে অনশন ভঙ্গ করেন। এই কাহিনি সত্যি হলে ভাইফোঁটা উৎসবের বয়স আড়াই হাজার বছরের বেশি। কারণ, মহাবীরের প্রয়াণে হয়েছিলেন ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ছোট-বড় এরকম নানা গল্প কহিনিকে মনে রেখে কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, কালীপুজোর পরের পরের দিন ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) উৎসবটি পালিত হয়। এদিন বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় উপবাস রেখে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে।
Leave a Reply