North Korea: কিমের দেশে কঠোর নিয়ম, উত্তর কোরিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শোনালেন পর্যটক

Bhuvani Dharan was among 22 outsiders who stepped into North Korea

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় উত্তর কোরিয়া (North Korea), এদেশের শাসকের নাম কিম জং উন। তাঁর নামের সঙ্গে গোটা বিশ্ব পরিচিত। আধুনিক পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম কঠোর শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান উত্তর কোরিয়ায়। করোনা মহামারির সময় থেকে সে দেশে পর্যটন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি উঠে যায়, পরে ফের একবার তা চালু হয়েছে।

কঠোর নির্দেশ ছিল পর্যটকদের ওপর

উত্তর কোরিয়া সফরকারী একটি পর্যটক দলের অংশ ছিলেন ভুবানী ধরন (Bhubani Dharan)। জানা গেছে, ওই দলে মোট ২২ জন সদস্য ছিলেন এবং তাঁরা চলতি বছরের মার্চ মাসে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেন। ৩ মার্চ সেখানে তাঁরা যান, ৬ মার্চ সে দেশ থেকে ফেরত আসেন। তাঁদের দলটি ফিরে আসার পরে আবার একবার কিম জং উনের দেশে পর্যটনের দরজা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

উত্তর কোরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে প্রবেশের সময়ই পর্যটকদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেমন:

সর্বদা কিম জং উন-এর নাম সম্মানের সঙ্গে উল্লেখ করতে হবে।

তাঁকে সম্বোধন করার সময় ‘ক্যাপ্টেন’ বা ‘মার্শাল’ উপাধি যোগ করতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে দুইজন গাইড বরাদ্দ করা হয়, যারা সব সময় পর্যটকদের সঙ্গে থাকেন এবং নির্দেশনা দেন।

একা কোথাও যাওয়া যাবে না।

কোনও কুৎসিত বা অস্বস্তিকর জিনিসের ছবি তোলা যাবে না।

সেনা সদস্য বা কঠোর পরিশ্রমরত কোনো ব্যক্তির ছবি তোলা যাবে না।

‘উত্তর কোরিয়া’ শব্দ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। পরিবর্তে উচ্চারণ করতে হবে ‘DPRK’ — অর্থাৎ ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া।

কী জানালেন ভুবানী ধরণ?

নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ভারতীয় পর্যটক (North Korea) ভুবানী ধরন জানান, তিনি উত্তর কোরিয়ায় চারদিন ও তিন রাত কাটিয়েছেন। এই সময়ে তাঁর মনে কাজ করছিল কৌতূহল, উত্তেজনা এবং একধরনের নার্ভাসনেস। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া পৌঁছানো তাঁদের পক্ষে সহজ ছিল না। তাঁদের গন্তব্য যে শহরে ছিল, সেই রাচন (Rason)-এ কোনও বিমানবন্দর নেই। ফলে তাঁদের প্রথমে পৌঁছাতে হয় চিনের ইয়ানজি শহরে। সেখানে নিরাপত্তা পরীক্ষার পরে তারা উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত পার হওয়ার জন্য একটি বাসে ওঠেন। উত্তর কোরিয়া সীমান্ত পার হওয়ার মুহূর্তে পর্যটকদের উপর শুরু হয় কড়া নজরদারি। তাঁদের সঙ্গে ছিল সরকারের মনোনীত দুই গাইড, যাঁরা প্রতিটি পদক্ষেপে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী তাঁদের জিনিসপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তল্লাশি করে। প্রতিটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের তালিকা পর্যটকদের নিজেই তৈরি করতে বলা হয়।

কোথায় কোথায় পরিদর্শন

ভুবানী ধরন আরও জানান, উত্তর কোরিয়ায় (North Korea) পৌঁছানোর পর তাঁরা প্রথমে কোনও হোটেলে নয়, বরং একটি মিনারেল ওয়াটার কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের দেখানো হয় কীভাবে পানীয় জল তৈরি হয়। তিনি বলেন, পুরো ব্যাপারটি সাজানো মনে হয়েছে, কারণ সেখানে মাত্র দু’জন কর্মী ছিলেন, এবং কেউই তেমনভাবে কাজ করছিলেন না। চারদিনের অবস্থানকালে তাঁদের দলটি বেশ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করে, যার মধ্যে ছিল একটি জাদুঘর, হরিণ পার্ক, একাধিক স্কুল, কয়েকটি কারখানা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,একটি আদালত কক্ষ। এই সফরে প্রথমবারের মতো ভুবানী ধরন সরাসরি উত্তর কোরিয়ার কোনও নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেন, যখন তিনি একটি স্কুলে যান। সেই স্কুলের এক শিশু তাঁকে বলে, “আমি তোমার মতোই ভ্রমণ করতে চাই।”

কোনও নাগরিক তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি

ভুবানী ধরন আরও জানিয়েছেন যে উত্তর কোরিয়ায় ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা পরিবারগুলিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাসতে এবং ছবি তুলতে দেখা গেছে, কিন্তু কেউই পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলতেন না। রাতে শহরের পরিবেশ ছিল ভয়ানক রকমের নিরব। তিনি যে শহরে ছিলেন, সেখানে তাঁর হোটেল কক্ষে একটি ছোট জানালা ছিল, যার মাধ্যমে তিনি কেবল বাইরের একটি নির্দিষ্ট অংশ দেখতে পেতেন। তিনি লক্ষ্য করেন, রাতে শহরের রাস্তায় কেউ থাকত না, যেন পুরো শহর নিস্তব্ধ হয়ে যেত। তবে ভোর পাঁচটা বাজতেই মানুষজন আবার কাজে নেমে পড়ত।

ভারত সম্পর্কে কী জানেন উত্তর কোরিয়ার (North Korea) নাগরিকরা

ভারতের সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে চাইলে উত্তর কোরিয়ার স্থানীয়রা শুধু একটি শব্দ বলতেন — “বাহুবলী”। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, উত্তর কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক সিনেমা, বিশেষত ভারতীয় সিনেমাও কোনও না কোনওভাবে পৌঁছে যাচ্ছে। ভুবানী ধরন জানিয়েছেন, তাঁর পুরো ভ্রমণের খরচ হয়েছে প্রায় চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। তিনি আরও জানান, উত্তর কোরিয়ার একাধিক স্কুলে তিনি এমন ছবি দেখতে পেয়েছেন, যেখানে আমেরিকার সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করা হচ্ছে — যা তাদের সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রের আদর্শ অনুযায়ী শিক্ষাদানের অংশ।

পর্যটকদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনও যোগাযোগের সুযোগ নেই

উত্তর কোরিয়ায় পর্যটকদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনও যোগাযোগের সুযোগ নেই। সেখানে মোবাইল সিগন্যাল নেই, নেই ইন্টারনেট, এমনকি সাধারণ যোগাযোগ মাধ্যমও অপ্রাপ্য। তবে তিনি বলেন, যখন তাঁদের দলটি উত্তর কোরিয়া, চীন এবং রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পরিভ্রমণ করছিল, তখন মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য মোবাইল সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছিল। সেই সময়ই তাঁর মোবাইলে একটি সতর্কবার্তা আসে। এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তর কোরিয়া সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আবার পর্যটন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই পরিস্থিতি দেখে ভুবানী ধরন কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েন। তবে সঙ্গে থাকা গাইডরা তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে, “আপনারাই হচ্ছেন সেই শেষ দল, যারা উত্তর কোরিয়া সফরের সুযোগ পেলেন।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share