Cyclone Montha: ভিজল কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা! মন্থার প্রভাবে বিপর্যস্ত অন্ধ্র-ওড়িশা

cyclone montha in kolkata

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় মন্থার (Cyclone Montha) প্রভাবে জগদ্ধাত্রী পুজোর আগেই কলকাতার আকাশে কালো মেঘ। তবে যতটা অন্ধ্র উপকূলে শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ার পর রাত পোহাতেই প্রবল ঘূর্ণিঝড় মন্থা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। বুধবার ভোর থেকেই তার পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে রাজ্যে। আকাশ মেঘলা, সঙ্গে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি। যদিও ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাবে অন্ধ্র ও ওড়িশায় ব্যাহত জনজীবন৷ প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অন্ধ্রের কমপক্ষে ১৫ জেলা। ওড়িশার একাধিক জেলাতেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্য়েই অন্ধ্রে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে গাছ পড়ে।

কলকাতায় শুরু বৃষ্টি

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শক্তি ক্ষয় হলেও মন্থা এখনও পুরোপুরি থামেনি। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আজও ঝিরঝিরে থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়ছে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের বেশকিছু জেলায়। কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৩১ ডিগ্রি, সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করবে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের মাত্র ৪০ শতাংশ ভূমিভাগে প্রবেশ করেছে। বাকী ৬০ শতাংশ উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে থেকে গিয়েছে সমুদ্রেপৃষ্ঠেই। ল্যান্ডফল হওয়ার সময় মান্থার গতি ধরা হয়েছিল ১১০ কিলোমিার প্রতি ঘণ্টা। কিন্তু অন্ধ্রের কাকিনাড়ায় যখন এটি ল্যান্ডফল করে তখন এটির গতি দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৭৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ঘূর্ণিঝড়ের যে অংশ সুমদ্রপৃষ্টে রয়ে গিয়েছে সেটি জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করতে করতে ওড়িশা হয়ে বাংলা উপকূলে আসতে পারে।

বাংলায় মন্থার প্রভাব

সমুদ্র এখনও অশান্ত, ভাঁজ তুলছে ঢেউ। তাই ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ বহাল রয়েছে। আজ বুধবার বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, দিনের শুরু থেকেই আকাশে ঘন মেঘের ছাপ থাকবে। আজ দক্ষিণবঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৩০ থেকে ৩১ অক্টোবর পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি এই দুদিন উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের যে অংশ ইতিমধ্যেই ল্যান্ডফল করেছে সেটিও স্থলভাগ দিয়ে ছত্তিশগড়ের দিকে যাচ্ছে। আগামিকাল ঝাড়খণ্ড, বিহার হয়ে সেটি উত্তরবঙ্গে ঢুকবে। আগামিকাল অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। ল্যান্ডফল না করা অংশ যেটি সমুদ্রপৃষ্টে রয়েছে সেটির অভিমুখ ওড়িশা উপকূল। আজ দুপুরের পরে এর জেরে কলকাতায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। ইতিমধ্যেই কলকাতায় টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এই বৃষ্টি আরও বাড়বে। পাশাপাশি যে গুমোট গরম অনুভূত হচ্ছে তা কাটতে সময় লাগবে।

অন্ধ্রপ্রদেশে মন্থার প্রভাব

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ স্থলভাগে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় মন্থা। বুধবার গভীর রাত আড়াইটে নাগাদ, তীব্র ঘূর্ণিঝড় থেকে দুর্বল হয়ে মন্থা উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশের উপর দিয়ে বয়ে যায়। তারপর এটি আরও দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়, বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অন্ধ্রপ্রদেশের কোনাসিমা জেলার মাকানাগুডেম গ্রামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাজ্যের ৩৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস হয়েছে এবং ১.৩৮ লক্ষ হেক্টর বাগানের ফসল নষ্ট হয়েছে। মন্থার প্রভাবে, অন্ধ্রের নেলোর জেলায় মঙ্গলবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অন্তত ৭৬ হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, অন্ধ্র সরকার বিভিন্ন স্থানে ২১৯ টি চিকিৎসা শিবিরের ব্যবস্থা করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাথায় রেখে ৮৬৫ টন পশুখাদ্যের ব্যবস্থাও করেছে। সরকার মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় কবলিত জেলা কৃষ্ণা, এলুরু এবং কাকিনাড়ায় রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।

ওড়িশায় মন্থার প্রভাব

প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন, উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ওড়িশায় ভূমিধস এবং ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ পাশাপাশি উপড়ে গিয়েছে বহু গাছ ৷ দক্ষিণ ওড়িশার আটটি জেলা – মালকানগিরি, কোরাপুট, রায়গড়া, গজপতি, গঞ্জাম, কন্ধমাল, কালাহান্ডি এবং নবরঙ্গপুর থেকে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে । তবে, এই অঞ্চলের মোট ১৫টি জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। গজপতি জেলার আনাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, কাছাকাছি পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর পড়ে পাঁচটি গ্রামের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জায়গাটি আগে ভূমিধস-প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাই, অবরোধ দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ এছাড়াও রায়গড়া জেলার গুণুপুর, গুড়ারি এবং রামনাগুড়া এলাকায় গাছ উপড়ে পড়েছে। খ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি ঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় রাজ্যের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের থাকার জন্য ২০০০-টিরও বেশি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং কোনও হতাহতের খবর নেই৷ এনডিআরএফ, ওডিআরএএফ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সমন্বয়ে ১৫৩টি উদ্ধারকারী দল (৬০০০ জনেরও বেশি কর্মী) দক্ষিণের আটটি জেলার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রয়েছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। পর্যটক এবং স্থানীয় মানুষ যাতে উপকূলে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রশাসন সমস্ত সৈকত সিল করে দিয়েছে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share