মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি কার্যকর হয় ভারতের সংবিধান। দেশের সংবিধান পা দিয়েছে ৭৫ বছরে। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীন হয় ভারত। এদেশের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পরম্পরা, কৃষ্টি সভ্যতা এবং গৌরবময় ইতিহাসের ওপর দাঁড়িয়ে শুর হয় সংবিধানিক ভারত তৈরির কাজ। ভারতীয় মূল্যবোধ, ভারতীয় পরম্পরার প্রতিফলন দেখা যায় সংবিধানজুড়ে। সংবিধানের খসড়া কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে থাকেন, যাতে ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতির সঙ্গে আধুনিক যুগের মেলবন্ধন থাকে। এর প্রভাব দেখা গিয়েছে সংবিধানে।
সংবিধান কমিটির বেশ কিছু সদস্য ভারতীয় মূল্যবোধের কথা তুলে ধরেন
সংবিধান কমিটির বেশ কিছু সদস্য ছিলেন। যাঁরা সংবিধান রচনায় ভারতীয় মূল্যবোধের কথা তুলে ধরেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কেবি কামাত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, গোবিন্দ দাস, ঘনশ্যাম গুপ্তা, কাললুরু সুব্বারাও, রাম সহায় প্রমুখ। এনারাই জোর দেন যে সংবিধানকে দাঁড় করাতে হবে ভারতের ঐতিহাসিক মূল্যবোধ এবং তার সাংস্কৃতিক ভিতের ওপর। এই সময়ে তাঁরা প্রাচীন ভারতীয় ধর্মশাস্ত্র বেদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত- এই সমস্ত কিছুকেই উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।
ঔপনিবেশিক প্রভাব রাখতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস ও বামপন্থী মনোভাবাপন্ন সদস্যরা
জানা যায়, সেসময় সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রতিনিধি ছিলেন মুসলিম লিগের এবং কংগ্রেসের। তাঁরা প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধের ওপর সংবিধান তৈরির ভাবনার বিরোধিতা করেন। ঔপনিবেশিক প্রভাবকেই রাখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে ভারতবর্ষের নিজস্ব সংস্কৃতিকে দূরে সরিয়ে রেখে সংবিধান তৈরির এমন ভাবনাকে রুখে দেন ডঃ বিআর আম্বেদকর। তিনি ভারতের নিজস্ব সংস্কৃতিকে কোনওভাবেই বাদ দিতে চাননি সংবিধান থেকে। এ সময় আম্বেদকরের (Dr Ambedkar) বিবৃতিও আসে। তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান সভা এর কাজ শুরু করার আগে থেকেই, সেই সমস্ত কিছুকে প্রত্যাখ্যান করেছে যেগুলি ব্রিটিশ সংসদ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর একজনও সদস্য এবং এমনকি আমিও এমন কিছু কাজ করতে পারি না, যেখানে আমরা ব্রিটিশদের নির্দেশকে সংবিধানে ঠাঁই দিতে পারি।’’
আম্বেদকরের কারণেই কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হয়নি ভারত
এছাড়াও বিআর আম্বেদকরের (Dr Ambedkar) শক্তিশালী নেতৃত্বের কারণেই ভারতবর্ষের সংবিধান কমিউনিস্ট মডেলে (Communist State) দাঁড়ায়নি। সংবিধান মুক্ত থেকেছে কমিউনিস্ট প্রভাব। ১৯৪৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংবিধান সংশোধন করার প্রস্তাব আনা হয়। এমন প্রস্তাব আনেন আসরাফ আলি। তাঁকে সমর্থন করেন আশরাফ মহানি। এঁরা দুজনেই প্রথমে ছিলেন কংগ্রেস এবং পরবর্তীকালে মুসলিম লিগে যোগদান করেন। তাঁরা দাবি করেন যে সংবিধানে সংশোধন আনতে হবে এবং ভারতকে একটি ‘ইউনিয়ন অফ সোশালিস্ট রিপাবলিক’ বলে ঘোষণা করতে হবে। প্রসঙ্গত, কমিউনিস্ট রাশিয়া এই নামেই পরিচিত ছিল। তবে আম্বেদকর (Dr Ambedkar) এটিও রুখে দেন। প্রসঙ্গত, সংবিধানে ভারতে ‘ইউনিয়ন অফ স্টেটস’-র মর্যাদা কেন দেওয়া হল? এমন প্রশ্নও তোলেন ওই দুই নেতা। এর পরিবর্তে তাঁরা ভারতকে ‘ফেডারেশন অফ রিপাবলিক’ করতে বলেন। তাঁরা এমন দাবিও তেলেন সমাজতন্ত্রকে আঁকড়ে ধরা উচিত ভারতের।
৩৭০ ধারারও বিরোধী ছিলেন আম্বেদকর (Dr Ambedkar)
তবে এই সংশোধন প্রস্তাবগুলিকে বিআর আম্বেদকর প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জোর দেন ভারতের মূল্যবোধের ওপর। আম্বেদকর বলেন, ‘‘আমি সেই সমস্ত কিছুকে অনুমোদন দেব না যেগুলি আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধকে আঘাত করে। যেমন উগ্র সমাজতন্ত্রের কোনওকিছুকেই সংবিধানে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’’ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ডঃ বিআর আম্বেদকরের ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য ৩৭০ ধারার বিরোধ করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, এই ধারা ভারতের ঐক্যের পক্ষে বিপজ্জনক। যা জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছিল। স্বাভাবিকভাবে সংবিধান সভার এই ধরনের বিতর্ক আজও একটি উল্লেখযোগ্য দলিল, ভারতবর্ষকে কীভাবে একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছিল! যার নেপথ্যে ছিলেন কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগের বামপন্থী মনোভাবাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বরা। আম্বেদকর নিজেই তা রুখে দিয়েছিলেন। ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির ওপরেই দেশের সংবিধানকে দাঁড় করিয়েছিলেন বি আর আম্বেদকর। স্বাধীন ভারতের সংবিধানে তাই আজও প্রতিফলিত হচ্ছে ভারতীয় মূল্যবোধ, দেশের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি এবং বৈচিত্রতা।
Leave a Reply