মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, দাবি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikary)। দুর্গাপুরে (Durgapur medical student rape) ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছিলেন, ‘মেয়েদের রাতে বাইরে যাওয়া উচিত নয়’। তাঁর এই সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে তীব্র সমালোচনা ও জোর বিতর্ক শুরু হতেই মমতা দাবি করেন, তাঁর কথার বিকৃতি করা হয়েছে। কিন্তু, মমতার সেই দাবি খারিজ করে শুভেন্দু সাফ জানিয়ে দিলেন, এই মন্তব্য কোনওভাবে বিকৃত করা হয়নি। শুভেন্দুর অভিযোগ, এই মন্তব্য আসলে নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আর নারীর নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারের চরম ব্যর্থতা আড়াল করার কৌশল।
প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা
শুক্রবার রাতে দুর্গাপুরের এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এমবিবিএস ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের পিছনের নির্জন এলাকায় তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। ওড়িশার বাসিন্দা ওই ছাত্রী বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর বাবা জানিয়েছেন, মেয়েকে ওড়িশায় নিয়ে যেতে চান, কারণ দুর্গাপুরে আর নিরাপত্তা নেই বলে মনে করছেন। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে ওই ছাত্রী রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরোলেন? তাঁর এই প্রশ্ন নিয়েই সমস্যার সূত্রপাত। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাঁর মন্তব্যকে বিকৃত করা হচ্ছে। যদিও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ভিডিও-প্রমাণ সহ জানিয়ে দেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য কোনওভাবে বিকৃত করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য আসলে তাঁর প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা।
মধ্যযুগীয় মানসিকতার ছাপ
বিজেপি নেতা রবিরার রাতে টুইটে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য ‘মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরিচায়ক। তাঁর মন্তব্যের প্রমাণ সহ ভিডিও আমাদের কাছে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনাকে ঢাকতে এখন ভিকটিম শেমিং-ই রাজ্য সরকারের নীতি হয়ে উঠেছে।’ শুভেন্দুর অভিযোগ, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা প্রায় নেই। মহিলাদের ওপর নারকীয় অত্যাচারের জন্য তাঁদেরকেই দায়ী করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে একের পর এক যৌন হেনস্থার ঘটনা প্রমাণ করছে প্রশাসনের ব্যর্থতা।’ উদাহরণ দিয়ে আর জি কর মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে কসবা ল কলেজ, পাঁশকুড়া হাসপাতাল এবং সাম্প্রতিক দুর্গাপুর মেডিক্যাল কলেজের কথা মনে করিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো মুখ্যমন্ত্রী বলবেন, মেয়েদের দিনের বেলাতেও বাইরে বেরনো উচিত নয়, তারা পড়াশোনা বা চাকরিও করবে না।’
বিজেপি প্রতিনিধি দলকে বাধা পুলিশের
দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ ঘটনায় ইতিমধ্যেই শেখ রিয়াজউদ্দিন, শেখ ফিরদৌস এবং আপ্পুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার তাঁদের আদালতে পেশ করা হলে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার দুর্গাপুরে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। এদিন হাসপাতালে ঢোকার চেষ্টা করতেই গেট বন্ধ করে দেন পুলিশকর্মীরা। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি নেত্রী-সহ দলের অন্যান্য নেতারা। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, কেন হাসপাতালে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, কেন পুলিশ ভিতরে, অথচ সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকেরা বাইরে?
Leave a Reply