Earthquake: ভয়াবহ ভূমিকম্প আফগানিস্তানে, মৃত অন্তত ২৫০! কাঁপল দিল্লি, কাশ্মীরও

Earthquake hits in Afghanistan After shook Pakistan and Delhi

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রবিবার মধ্যরাতে আফগানিস্তানে (Afghanistan) একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে (Earthquake) অন্তত ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন বহু মানুষ। আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের তরফ থেকে এই খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, নিহত এবং আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আফগানিস্তানের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র সারাফাত জামান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পটি সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে। সেই কারণে আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি আরও জানান, যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর যেমন উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে, তেমনি স্থানীয় নাগরিকরাও এতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।আফগানিস্তানের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৩। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের দাবি, কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬ মাত্রার। দিল্লিতেও অনুভূত হয় আঁচ। অনেকে আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন।

আফটারশক বা পরবর্তী কম্পনে বারবার কেঁপে ওঠে

ভূমিকম্পের (Earthquake) পর আফটারশক বা পরবর্তী কম্পনে বারবার কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান। যার মধ্যে অন্তত দু’টি কম্পনের মাত্রা ছিল ৫ রিখটার স্কেলের কাছাকাছি। মূল কম্পনের মাত্র ২০ মিনিট পরেই প্রথম আফটারশকটি অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ৪.৫ এবং উৎসস্থল ছিল ভূমি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এরপর রাত ১টা ৫৯ মিনিটে ৪.৩ মাত্রার, ভোর ৩টা ৩ মিনিটে এবং ৫টা ১৬ মিনিটে দুটি ৫ মাত্রার কম্পন হয়, যেগুলোর গভীরতা ছিল ১০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

কেন্দ্রস্থল আফগানিস্তানের জালালাবাদের কাছে নানগরহর প্রদেশে

ভূমিকম্পের (Earthquake) কেন্দ্রস্থল আফগানিস্তানের জালালাবাদের কাছে নানগরহর প্রদেশে, ভূমি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে কম্পন শুরু হয়। ভারতের সময় অনুযায়ী রাত পৌনে ১টা। নানগরহর প্রদেশের জনস্বাস্থ্য দফতরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন, যাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আঁচ অনুভূত দিল্লিতেও (Earthquake)

এই ভূকম্পনের প্রভাব শুধু আফগানিস্তানেই নয়, ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর ও রাজধানী দিল্লিতেও। ভূমিকম্পের সময় দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় বহু মানুষ আতঙ্কে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। সমাজমাধ্যমে অনেকে রাতের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের (Afghanistan) নানগরহর প্রদেশটি পাকিস্তান সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল এবং রাজধানী কাবুল থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০২ কিলোমিটার।

ভূকম্পন প্রবণ দেশ আফগানিস্তান

রেড ক্রসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত অঞ্চল ভূতাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয়। এই অঞ্চলে প্রতি বছর একাধিক ভূমিকম্প ঘটে। এর প্রধান কারণ হল, অঞ্চলটি ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এছাড়াও, আফগানিস্তানের হেরাত শহরের নিচ দিয়ে একটি বড় ফল্ট লাইন অতিক্রম করেছে, যা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। মাত্র এক মাস আগেই, অর্থাৎ অগাস্ট মাসে, আফগানিস্তানে একাধিক ভূমিকম্প হয়েছিল। ২ অগাস্ট রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়, এরপর ৬ অগাস্ট আরও একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ৪.২।

২০২২ সালের ভূমিকম্প

শুধু ২০২৫ সালেই নয়, মাত্র তিন বছর আগে, ২০২২ সালে পূর্ব আফগানিস্তানে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। তখন রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৯। এতে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হন।

২০২৩ সালের ভূমিকম্প

এরপর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প (মাপ ৬.৩) আফগানিস্তানকে কাঁপিয়ে দেয়। ওই ভূমিকম্পে দেশের একটি বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বহু বাড়িঘর ধসে পড়ে। তালিবান সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল যে মৃতের সংখ্যা ৪,০০০ ছাড়িয়েছে। যদিও পরে রাষ্ট্রসংঘ তথ্য প্রকাশ করে জানায়, ওই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দেড় হাজারের কিছু বেশি ছিল।

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে হয় ভয়াবহ ভূমিকম্প

ঠিক পাঁচ মাস আগে, অর্থাৎ ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে — আফগানিস্তানে তীব্র ভূমিকম্প হয়। সেই ভূমিকম্পের প্রভাব ভারতেও অনুভূত হয়, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লি ও তার আশপাশের এলাকায়। রয়টার্সের প্রতিবেদনের অনুযায়ী, ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৬। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তানের বাগলান থেকে ১৬৪ কিলোমিটার পূর্বে। ঠিক পাঁচ মাসের মাথায়, ফের এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তান। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যদি ভূমিকম্প ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি গভীরতায় ঘটে, তবে তা আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। কারণ, কম্পনের অভিঘাত খুব দ্রুত ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে যায়, যার ফলে ঘরবাড়ি, অবকাঠামো ও নির্মাণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। স্বাভাবিকভাবেই, প্রাণহানির ঝুঁকিও অনেক গুণ বেড়ে যায়।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share