তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশের পছন্দের খাবারের তালিকায় থাকছে মাশরুম! কম বয়সিদের স্বাদের খবর পেয়েই শহরের নানান নামীদামী রেস্তোরাঁয় মাশরুমের হরেক পদ তৈরি হচ্ছে। ইতালি-চিন-জাপানের পদ থেকে ভারতীয়, নানান মশলা আর রান্নার ধরনে তৈরি হচ্ছে মাশরুম। তবে পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুধু স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যের জন্য ও এই খাবার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মাশরুম নিয়ম মাফিক রান্না করে খেলে, তা শরীরে গভীর প্রভাব ফেলে। একাধিক অঙ্গের সুস্থতার সঙ্গে মাশরুম খাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
মাশরুম কেন খাওয়া দরকার?
পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, মাশরুম এক ধরনের উদ্ভিদ জাতীয় খাবার। কিন্তু এই খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও থাকে নানান খনিজ পদার্থ। যা শরীরে গভীর প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে শরীরের সহজেই ভিটামিন এবং প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়। পাশপাশি পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়ামের মতো একাধিক প্রয়োজনীয় উপাদানের জোগান ও হয়। বিশেষত যারা প্রাণীজ প্রোটিন খেতে চান না, তাদের জন্য বিকল্প খাবার হিসাবে মাশরুম খুবই উপকারি। ক্যান্সার থেকে হৃদরোগ, একাধিক জটিল অসুখের ঝুঁকি কমাবে মাশরুম। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
শরীরের কোন রোগ রুখতে সাহায্য করে মাশরুম?
ক্যান্সার রুখতে পারে!
সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকায় চিকিৎসক-গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সপ্তাহে দুই থেকে তিন কাপ মাশরুম খেলে ক্যান্সারের ঝুকি ৪৫ শতাংশ কমে। তাঁরা জানাচ্ছেন, জাপান সহ পৃথিবীর একাধিক দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় মাশরুম ব্যবহার করা হয়। এমন কিছু ওষুধ দেওয়া হয়, যাতে মাশরুমের উপাদান ক্যান্সার রোগীর শরীরে পৌঁছয়। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাশরুমে থাকে গ্লুটাথিওয়ান এবং এরগোথিওয়ানাইন নামে দুই ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এই দুই উপাদান ক্যান্সারের কোষ নষ্ট করতে বিশেষ সাহায্য করে। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এই দুই উপাদানের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সপ্তাহে অন্তত দু-তিনদিন মাশরুম খেলে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগকেও দূরে রাখা যাবে বলেই মনে করছেন পুষ্টিবিদদের একাংশ।
অ্যালজাইমারের ঝুঁকি কমাতে পারে!
বয়স পঞ্চাশ কিংবা ষাটের চৌকাঠে পৌঁছলেই স্মৃতিশক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আধুনিক জীবনে প্রৌঢ়কালের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অ্যালজাইমারের মতো রোগ। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমছে। স্মৃতিশক্তি থাকছে না। ফলে স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমাতে পারে মাশরুম। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই দুই উপাদান মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে বিশেষ সাহায্য করে। মস্তিষ্কের স্নায়ুর উপরেও প্রভাব ফেলে। এর ফলে অ্যালজাইমারের মতো রোগের ঝুঁকি কমে। আবার স্মৃতিশক্তিও ভালো থাকে। গবেষক-চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সপ্তাহে দু’কাপ পরিমাণ মাশরুম খেলে মস্তিষ্কের বিকাশ বেশি হয়। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমার ঝুঁকিও অর্ধেক হয়ে যায়।
হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়!
পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ব্যালেন্স রাখতে মাশরুম বিশেষ সাহায্য করে। তাই এই খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেশ জুড়ে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই মাশরুম খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হবে। হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান সহজেই পেয়ে যাবে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে।
হাড়ের ক্ষয় রোগ রুখতে পারে!
হাড় ক্ষয়ের রোগ বাড়ছে। বিশেষত ভারতে মহিলাদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা আরও বেশি দেখা যাচ্ছে। হাড়ের দুর্বলতা ও ক্ষয়রোগের জেরে হাঁটাচলা এমনকি বসে থাকাও কষ্টকর হয়ে উঠছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভিটামিন ডি-র অভাবেই এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের একাংশ ও ভিটামিন ডি-র অভাবে ভুগছেন। যার জেরে অনেকেই কোমড় ও হাঁটুর যন্ত্রণায় কাবু হচ্ছে। পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, খুব কম খাবারেই পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি থাকে। যে কয়েকটি খাবার থেকে শরীর সহজেই ভিটামিন ডি-র চাহিদা পূরণ করতে পারে, তাদের মধ্যে রয়েছে মাশরুম। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিয়মিত মাশরুম খেলে শরীরে ভিটামিন ডি-র চাহিদা পূরণ হয়। এতে হাড় ক্ষয়ের মতো রোগ সহজেই আটকানো যায়।
অন্ত্রের জন্য উপকারি!
ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজের পাশপাশি মাশরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই মাশরুম নিয়মিত খেলে হজম শক্তি বাড়ে। অন্ত্রের জন্য ও এই খাবার বিশেষ উপকারি।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Leave a Reply