মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর থেকেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি (Bangladesh Crisis) যেন ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে দেশের দখল নিয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু তাতে অবস্থার যে খুব একটা উন্নতি হয়েছে এমনটা নয়। দেশজুড়ে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে। এমনকী, বর্বরোচিত অত্যাচারের হাত থেকে বাদ যাননি হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলারাও (Hindu women in Bangladesh)। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের হিন্দু নারীদের ওপর ব্যপক অত্যাচার চলছে। শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মত অভিযোগও উঠেছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলাদের ওপর অত্যাচার (Bangladesh Crisis)
এই চরম অস্থিরতার সময় বাংলাদেশি হিন্দু নারীদের ওপর যেভাবে অত্যাচার চলেছে এবার সেই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন নির্যাতিতারা। ৮ অগাস্ট স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি ভিডিওতে বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন হিন্দু মহিলা (Hindu women in Bangladesh) তাঁদের দুর্দশার কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী বলেন, ''ওরা তলোয়ার ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। বাড়ি থেকে সব নিয়ে গেছে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য, আমাদের কাছে যা ছিল সবই দিয়েছি।'' আরেক মহিলা বলেন, ''রাতে, ওরা এসেছিল। আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। আমি লুকিয়ে ছিলাম। কিন্তু ওরা আমার ভাইয়ের স্ত্রীকে ধরে অন্য ঘরে নিয়ে যায়। তাঁকে ধর্ষণ করে। পরে আমরা তাঁকে উদ্ধার করি। সে সময় তাঁর মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। ওরা তাঁর গলা কেটে ফেলতে চেয়েছিল। ওকে বাঁচানোর জন্য আমরা আমাদের সব সোনার গয়না দিয়ে দিয়েছি।''
অন্যদিকে, তৃতীয় আরেক মহিলা (Hindu women in Bangladesh) অনুরূপ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ''আমরা রাতে ঘুমাচ্ছিলাম। তখনই ওরা এসেছিল। ওদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র ছিল। ওরা আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছিল, 'আমাদের পঞ্চাশ জন লোক তোমার বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে, তোমার পালানোর কোনও পথ নেই।' এরপর ওরা সবকিছু লুট করেছে। আমাকে ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। আমি তাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম যে হয় আমাকে রেহাই দাও অথবা আমাকে মেরে ফেলো। এরপর ওরা আমাকে কান্না থামানোর জন্য হুমকি দিতে থাকে। আমাদের কাছে যা কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল সব দিতে বলেছিল ওরা। নিজের প্রাণ বাঁচাতে তাই আমি বাধ্য হয়ে আমার সমস্ত গয়না ওদের দিয়ে দিয়েছিলাম। সেসব নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায় ওরা।''
হিন্দুদের ওপর হামলা অব্যাহত, ভাঙচুর মন্দিরে (Bangladesh Crisis)
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। অশান্তির সঙ্গে সঙ্গে এবার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের অভিযোগ ও উঠতে শুরু করেছে। হিন্দু মহিলাদের নির্যাতনের পাশাপাশি জলছে সংখ্যালঘুদের ঘর। একাধিক মন্দিরে ও হামলা চালানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করে, সেদেশের ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। অরাজনৈতিক সাধারণ মানুষের বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। ভাঙা হয়েছে মন্দিরও।
জানা গিয়েছে, নাটোর, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালির কলাপাড়া, শরিয়তপুর ও ফরিদপুরের একাধিক মন্দিরে ভাঙচুর (Bangladesh Crisis) করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফেনি শহরের দুর্গামন্দির, দিনাজপুরের পার্বতীপুর কালীমন্দির সহ আরও পাঁচটি মন্দির, যেখানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের ২ নম্বর ইউনিয়নের শ্মশান মন্দিরে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং নেত্রকোনা শহরে রামকৃষ্ণ মিশন এবং ইস্কন মন্দিরে ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। পুড়িয়ে ছাই হয়ে যায় জগন্নাথ বিগ্রহ। একইসঙ্গে যশোর, নোয়াখালি, মেহেরপুর, চাঁদপুর ও খুলনার একাধিক বাড়িঘরে হামলা চলেছে।
এমনকী, দিনাজপুরে হিন্দুদের ৪০টি দোকান ভাঙচুর করা হয়। যশোরে অন্তত ৫০টি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। ভাঙচুর, লুটপাট, ডাকাতির মতো ঘটনার পর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বাড়িগুলিতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দোকানে ভাঙচুর করে মালপত্র লুট করা হয়। এহেন পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করতে জেলায়-জেলায় হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে বাংলাদেশ সেনা।
ভারত আসতে চাইছেন বাংলাদেশি হিন্দুরা
এদিকে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার (Bangladesh Crisis) পরেই আতঙ্কে ভারত বাংলাদেশ বর্ডারের কাছে বহু বাংলাদেশি জড়ো হয়েছিলেন বলে খবর। বুধবার দুপুর ১ টা নাগাদ প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি ভারতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করেন। তবে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার আগেই তাদের আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে বিএসএফ। শরণার্থীদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে অনুরোধ করলে শরণার্থীরা জানান, বিএসএফ পারলে গুলি করে তাঁদের মেরে দিক, কিন্তু তাঁরা দেশে ফিরে যাবেন না। এ প্রসঙ্গে, হলদিবাড়ি ছিটমহলের বাসিন্দা জয়প্রকাশ রায় বলেন, ‘‘মহিলারা আর্তনাদ করছেন। বাঁচান বাঁচান বলে চিৎকার করছেন। একটু আশ্রয় চাইছেন। এ দৃশ্য দেখা যায় না!’’
আরও পড়ুন: ‘‘বাঁচান, আশ্রয় দিন...’’! ভারত-সীমান্তে ভিড় বাংলাদেশি শরণার্থীদের, রুখল বিএসএফ
কী জানাল ভারতের বিদেশমন্ত্রক?
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার (Bangladesh Crisis)প্রসঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে যে, গোটা বিষয়গুলি সম্পর্কে কেন্দ্র অবগত। একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোটা না ফেরা পর্যন্ত উদ্বেগ রয়েছে। আইন ও সরকারের দায়িত্ব হল সমস্ত নাগরিকদের সুরক্ষা যাতে বজায় থাকে। এটা সেই দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য দরকার। বৃহত্তরক্ষেত্রে এটা দরকার।
বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করে বলেন, ''কোনও ইসলামিক দেশে গণতন্ত্র সফল হয় না, এটা তার প্রমাণ। কিছু গণ্ডগোল হলেই ওখানে হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার হয়। তারা পালিয়ে আসেন। আবার সেটা হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের হয়ে কেউ কথা বলছে না। কেউ জামাতিদের কথা বলছে, কেউ স্বৈরতন্ত্রের কথা বলছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হলে এখানে তার প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের সেখানে সরকার বদলের অধিকার রয়েছে। কিন্তু তা বলে প্রতিবার সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।''
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours