Operation Sindoor:’৮৮ ঘণ্টায় পাকিস্তানের অস্ত্রবিরতির আবেদন’, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বহু অজানা তথ্য প্রকাশ্যে

india pakistan relation their casualties greater than 100 in operation sindoor said dgmo lt gen rajiv ghai

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অপারেশন সিঁদুরের পরবর্তী সংঘর্ষে ১০০-এর বেশি পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। সম্প্রতি এমনই অভিমত প্রকাশ করলেন ভারতের ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ (স্ট্র্যাটেজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই। তিনি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ পোস্টহিউমাস পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তা নির্দেশ করে যে তাদের সেনা বাহিনীর প্রাণহানি লাইন অব কন্ট্রোলে (LoC) ১০০-এর বেশি ছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই দাবি করেন, পাকিস্তান নিজেরাই তাদের ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেছে ১৪ আগস্টের ‘পোস্টহিউমাস অ্যাওয়ার্ড’ তালিকার মাধ্যমে। তিনি বলেন, “পাকিস্তান নিহত সেনাদের সংখ্যা শতাধিক ছিল, যা তারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি, কিন্তু পুরস্কারের মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গিয়েছে।”

প্রতিক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল

জেনারেল ঘাই বলেন, “এপ্রিল ২২-এ জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হওয়ার পর পাল্টা একটি প্রতিক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল। এপ্রিল ২২ থেকে মে ৬-৭-এর রাত পর্যন্ত আমাদের অভিযান ক্রমশ এগোচ্ছিল। আমরা আমাদের লক্ষ্যগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। শত্রুকে বিরত রাখার জন্য সীমান্তে কিছু সতর্কমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। সেনা, অন্যান্য সরকারী সংস্থা ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় ছিল।” তিনি আরও বলেন, “চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য আমরা বহু সম্ভাব্য লক্ষ্য যাচাই করেছি। এ সময়ই তথ্যযুদ্ধেও আমরা সক্রিয় ছিলাম। পাকিস্তানি ড্রোনগুলো বারবার ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় ভারতীয় বিমানবাহিনী (IAF) ব্যবস্থা নেয়।” মে ৯-১০ তারিখের রাতের রণকৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা তাদের ১১টি বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করেছি। আটটি ঘাঁটি, তিনটি হ্যাংগার এবং চারটি রাডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানের বিমান সম্পদ ধ্বংস হয়েছে।”

ভারতীয় নৌবাহিনীও তখন সম্পূর্ণ সক্রিয়

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (DGMO) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই মঙ্গলবার এক বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করে জানান, গত মে মাসে চার দিনের সামরিক সংঘর্ষের সময় পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার আগে ভারতীয় নৌবাহিনী আরব সাগরে প্রবেশ করে সম্পূর্ণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই রাষ্ট্রসঙ্ঘের ট্রুপ কনট্রিবিউটিং কান্ট্রিজ (UNTCC)-এর চিফস’ কনক্লেভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “ভারতীয় নৌবাহিনীও তখন সম্পূর্ণ সক্রিয় ছিল—এটি হয়তো অনেকের জানা নেই। নৌবাহিনী আরব সাগরে প্রবেশ করেছিল এবং সেই মুহূর্তে আমাদের অবস্থান ছিল কৌশলগতভাবে অনুকূল। ডিজিএমও কথা বলার আগেই আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “যদি পাকিস্তান তখন পিছু না হটত, তাহলে ফলাফল তাদের জন্য ভয়াবহ হতে পারত—শুধু সমুদ্রপথেই নয়, অন্য দিক থেকেও।”

ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই আরও উল্লেখ করেন, ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলে এখন এক “নীতিগত পরিবর্তন” এসেছে। তাঁর কথায়, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই এবিষয়ে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন। তিনটি মূলনীতি তিনি তুলে ধরেছেন—প্রথমত, সন্ত্রাসী হামলাকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা কখনও পারমাণবিক হুমকিতে মাথা নত করব না। তৃতীয়ত, সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হবে না।” এর আগে, জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে জানান যে, পহেলগাঁওতে নাগরিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন সন্ত্রাসীকে নিরাপত্তা বাহিনী ‘অপারেশন মহাদেব’-এর সময় হত্যা করেছে। ঘাই বলেন, “যে দোষীরা পাহালগাঁও হামলায় জড়িত ছিল, তাদের ভারতীয় সেনা নরকের গভীরতায় গিয়ে হলেও খুঁজে বের করবে—আমরা সেটাই করেছি। আমাদের ৯৬ দিন লেগেছিল, কিন্তু আমরা তাদের বিশ্রাম নিতে দিইনি। শেষ পর্যন্ত যখন তাদের খুঁজে বের করে নির্মূল করা হয়, তখন দেখা যায় তারা পলায়ন ও অনাহারে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সংসদে এটি উল্লেখ করেছেন—তাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

রক্তপাতের উৎস গোপন নয়

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাইয়ের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, ভারত এখন সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সম্পূর্ণ নতুন রণনীতি গ্রহণ করেছে—যেখানে আক্রমণের জবাব কেবল সীমান্তে নয়, তথ্যযুদ্ধ ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও সমানভাবে দেওয়া হচ্ছে।ভারতের পক্ষ থেকে তিনি বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন, “১৯৮০-এর দশক থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে ২৮,০০০-এর বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। ৬০ হাজারেরও বেশি সংখ্যালঘু পরিবার — প্রায় ১ লক্ষ মানুষ — ঘরছাড়া হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ হাজার নিরীহ নাগরিক ও ৩ হাজার নিরাপত্তারক্ষী। এই রক্তপাতের উৎস গোপন নয়।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share