মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাত পোহালেই মৌনী অমাবস্যা। ২৯ জানুয়ারির এই পুণ্য দিনে প্রয়াগরাজে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে অমৃতস্নান (Mauni Amavasya) করবেন (Mahakumbh 2025) ১০ কোটিরও বেশি ভক্ত। যেহেতু এদিন কয়েক কোটি ভক্তের সমাগম হবে, তাই ব্যবস্থা নিয়েছে উত্তরপ্রদেশের যোগী প্রশাসন। ভিড় ও যানবাহন ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষ একটি অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা চালু করেছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভক্তদের জন্য নির্দিষ্ট পথ ও স্নানের ঘাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিজয় কিরণ আনন্দ বলেন, “সবচেয়ে বড় স্নান উৎসবের জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা যে সেক্টর বা অঞ্চলে স্নান করেছেন, সেখান থেকেই ফিরে যাবেন, এবং কঠোর নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
সুরক্ষা ব্যবস্থা
ভিড় কমাতে তীর্থযাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট ঘাটে স্নান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কানপুরের তীর্থযাত্রীরা স্নান করবেন সংঘম নোজ ঘাটে। লখনউ ও অযোধ্যার তীর্থযাত্রীরা স্নান করবেন দশাশ্বমেধ ঘাটে। ভিড়ের পরিমাণ বাড়লে পুণ্যার্থীদের পাঠানো হবে নাগবাসুকি, রাসূলাবাদ এবং ফাফামাউ ঘাটে। বারাণসী, জৌনপুর, আজমগড় এবং গোরখপুরের তীর্থযাত্রীরা অমৃতস্নান করবেন ঐরাবত ও ত্রিবেণী ঘাটে। মির্জাপুর এবং মধ্যপ্রদেশের তীর্থযাত্রীরা ডুব দেবেন আরাইল ত্রিবেণী পুষ্পের কাছাকাছি ঘাটে। এখানে সংঘমের দিকে যাওয়ার জন্য গতিবিধি সীমাবদ্ধ থাকবে। স্নান শেষে ভক্তরা (Mauni Amavasya) যাতে তাদের নির্ধারিত অঞ্চলে ফিরে যেতে পারেন, তাই সংঘম নোজের কাছাকাছি আন্তঃঅঞ্চল ভ্রমণ বন্ধ রাখা হবে (Mahakumbh 2025)।
আখড়ার সাধু-সন্ন্যাসীদের জন্য ব্যবস্থা
কেবল পুণ্যার্থী নন, মহাকুম্ভের বিভিন্ন আখড়ার সাধু-সন্ন্যাসীদের জন্যও নির্ধারিত হয়েছে স্নানের ঘাট। ১৩টি আখড়ার অমৃতস্নানের পথও নির্ধারণ করা হয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী ত্রিবেণী পন্টুন ব্রিজ অতিক্রম করবে আখড়াগুলি। আখড়াগুলির সাধুসন্তরা যাতে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে চলাচল করতে পারেন, তাই ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের জন্য আলাদা করিডরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
পুণ্যার্থীদের জন্য স্নানের ঘাটের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি আরও কিছু সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জল পুলিশ, এনডিআরএফ, এবং এসডিআরএফের উদ্ধার অভিযানের নৌকা ছাড়া অন্য কোনও নৌকার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাত্রীদের সুরক্ষায় বসানো হয়েছে স্টিলের ব্যারিকেড। নিরাপত্তা জাল সহ মজবুত ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে অস্থায়ী আবাসন এবং হোল্ডিং এরিয়া স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজনে কাউশাম্বী, প্রতাপগড় বা ভদোহিতে ভ্রমণ আপাতত বন্ধ করা হতে পারে (Mauni Amavasya)।
উন্নত পরিকাঠামো
তীর্থযাত্রীদের জন্য উন্নত পরিকাঠামোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ১২ কিমি দীর্ঘ স্নানের ঘাট উন্নত আলো, পরিচ্ছন্ন টয়লেট এবং পোশাক পরিবর্তনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার পাশাপাশি জরুরি অবস্থার জন্য খড় ও চটের বস্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মেলা কর্তৃপক্ষ মৌনী অমাবস্যায় অমৃতস্নানের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্নানের ক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে। মহানির্বাণী এবং অতল আখড়াগুলি প্রথমে স্নান প্রক্রিয়া শুরু করবে। প্রতিটি আখড়া নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে স্নান করবে। এই ক্রমটি শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ভক্তদের সুষ্ঠুভাবে স্নান করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য করা হয়েছে। এই সময়সূচির জন্য সমস্ত আখড়ার সদস্যরা পবিত্র আচার-অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট সময় এবং জায়গা পাবেন। বৃহত্তর ভক্ত সমাবেশের নিরাপত্তা এবং সুবিধাও বজায় রাখা হবে। এই ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে প্রয়াগরাজ একটি সুসজ্জিত এবং সুসংগঠিত মহাকুম্ভ স্নান উৎসব আয়োজন করতে প্রস্তুত (Mahakumbh 2025)।
পূর্ণকুম্ভের যোগ
প্রতি ১২ বছর অন্তর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে হয় পূর্ণকুম্ভ। ১২টি পূর্ণ কুম্ভ শেষে হয় একটি মহাকুম্ভ। অর্থাৎ মহাকুম্ভের এই যোগ আবার আসবে ১৪৪ বছর পরে। সেই কারণেই এবার কুম্ভস্নান করবেন অন্তত ৪০ কোটি মানুষ। দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও ভক্তরা আসছেন ত্রিবেণী সঙ্গমে পবিত্র ডুব দিতে। এবার প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা শুরু হয়েছে ১৩ জানুয়ারি। চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর মধ্যে অমৃতস্নানের যোগ মোট ৬টি। এর মধ্যে হয়ে গিয়েছে তিনটি স্নান। বুধবার হবে মৌনী অমাবস্যার স্নান। ৩ ফেব্রুয়ারি হবে বসন্ত পঞ্চমীর স্নান। আর এবারের মতো শেষ স্নান হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি, মহা শিবরাত্রির দিন। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের আশা, এবার সব মিলিয়ে কুম্ভস্নান করবেন অন্তত ৪০ কোটি পুণ্যার্থী। ইতিমধ্যেই প্রায় ১২ কোটি পুণ্যার্থী সেরে নিয়েছেন পুণ্যস্নান। বিজেপির বহু নেতা-মন্ত্রীও ডুব দিয়েছেন প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে (Mauni Amavasya)। হিন্দু ভোট কুড়োতে দেরিতে হলেও দিন দুই আগে কুম্ভস্নান করেছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। ৫ ফেব্রুয়ারি কুম্ভে ডুব দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর ১০ ফেব্রুয়ারি অমৃতস্নান (Mahakumbh 2025) করবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়।
Leave a Reply