মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভুতুড়ে ভোটারদের (Phantom Voters) চিহ্নিত করতে জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (Bengal CEO) মনোজ আগরওয়াল। সোমবার তিনি ওই নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসকদের। গত এক বছরে রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে তাঁদের। জেলাশাসকরা একই সঙ্গে জেলার নির্বাচনী আধিকারিক (DEO) হিসেবেও কাজ করেন। তাই ১৪ অগাস্টের মধ্যে তাঁদের এই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী আধিকারিকদের নির্দেশ (Phantom Voters)
জেলার নির্বাচনী আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা প্রবীণ আধিকারিকদের নিয়ে দল গঠন করে ফর্ম-৬ (যা ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়) নিষ্পত্তির একটি নমুনা সমীক্ষা পরিচালনা করবেন। এই আধিকারিকরাই খতিয়ে দেখবেন এবং রিপোর্ট করবেন যে নির্বাচনী নথিভুক্তি আধিকারিকেরা (ERO) কীভাবে ফর্ম-৬-এর আবেদনের নিষ্পত্তি করছেন। জেলার নির্বাচনী আধিকারিকদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বলেছেন, “অনেক নির্বাচনী কর্মী ১৯৬০ সালের ভোটার নথিভুক্তি আইনের বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করছেন না।” সিইও-র চিঠিটি এমন একটা সময়ে প্রকাশ্যে এল, যখন নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে ২০০২ সালের বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে ১০৯টি বিধানসভা কেন্দ্রজুড়ে ১১টি জেলার ভোটারদের যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সিইওর নজরে ২
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সিইওর নজরে রয়েছেন ময়না ও বারুইপুরের দু’জন ইআরও। কারণ ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেননি (Phantom Voters)। সিইওর (Bengal CEO) চিঠিতে বলা হয়েছে, “ক্রমাগত আপডেটের সময় ইআরওরা যে ফর্ম ৬ জমা দিয়েছেন, তার এক শতাংশেরও কম নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে দু’জন ইআরও ভুতুড়ে ভোটারদের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফর্ম ৬ নিয়েছেন।” চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “এই সব ক্ষেত্রে কোনও জরুরি প্রয়োজন বা বাস্তব প্রয়োজন ছাড়াই বিএলওদের যাচাই করা তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছিল। একই ধরনের নথি বহু সংখ্যক আবেদনপত্র ও তাদের ভেরিফিকেশন রিপোর্টের জন্য নেওয়া হয়েছে।”
অনিয়মের কথা কবুল!
ওই চিঠি থেকেই জানা গিয়েছে, দুই ইআরও স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা অন্যান্য আধিকারিক মায় ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদেরও ইউজার অ্যাক্সেস দিয়েছিলেন। তাঁরা পরে ফর্ম ৬-এর আবেদনগুলি নিষ্পত্তি করে দেন। সূত্রের খবর, সিইও ওই দুই ইআরও-সহ আরও যে সব আধিকারিক এই ধরনের অনিয়মে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন। নির্বাচন কমিশনের (Bengal CEO) এক আধিকারিক বলেন, “যদি কোনও (Phantom Voters) ইআরও, সহকারী ইআরও বা অন্য কেউ ভোটার তালিকা প্রস্তুতি, সংশোধন বা কোনও অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্তব্যে গাফিলতি বা দুর্নীতি করেন, তাহলে তাঁদের ন্যূনতম তিন মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ দু’বছরের জেল ও জরিমানা হতে পারে।”
নতুন ভোটার নয়, উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বয়স্ক ভোটারদের নাম
নির্বাচন কমিশনের নজরে এসেছে, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্ত অঞ্চলে ২৫-৪০ বছর বয়সিদের ভোটার তালিকায় নাম লেখানোর হার বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। অথচ এই হার বেশি থাকার কথা ১৮-২১ বছর বয়সি নতুন ভোটারদেরই। ওই চিঠিতেই বলা হয়েছে, মাত্র এক শতাংশ ফর্ম পরীক্ষা করেই বিস্তর অনিয়ম ধরা পড়েছে। এ ক্ষেত্রে ইআরওকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। তাঁরা ভুয়ো আবেদনপত্র জমা নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিএলওরা কোনও রকম যাচাই না করেই তার অনুমোদনও দিয়েছেন বলে চিঠিতে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (Phantom Voters)।
কী বলেছিল কমিশন?
প্রসঙ্গত, ভোটার (Bengal CEO) তালিকা থেকে ভুয়ো ভোটারদের বাদ দিতে আগেই কমিশনের তরফে জানানো হয়েছিল রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার ডেটাবেস এবার যুক্ত করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। ফলে যখনই কারও জন্ম বা মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন করা হবে, তখন কমিশনের সিস্টেমেও সেই তথ্য নথিভুক্ত হয়ে যাবে। ভোটার তালিকায় কখনও কখনও মৃত ব্যক্তির নামও থাকে, বাদ যান যিনি জীবিত, তাঁর নাম। কমিশন সূত্রে খবর, এহেন বিভ্রান্তি এড়াতেই চালু হচ্ছে এই নয়া ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যের ভিত্তিতেই ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারের নাম দ্রুত ও সহজ পদ্ধতিতে বাদ দেওয়া যাবে। এজন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যার বা সিস্টেমের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ইআরও এবং বিএলওদের যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এবার থেকে জন্ম বা মৃত্যুর রেজিস্ট্রেশন হলেই সেই তথ্য একেবারেই পৌঁছে যাবে ভোটার তালিকা তৈরির কাজে যুক্ত কর্মীদের কাছে। কমিশনের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, ডুপ্লিকেট এপিক (EPIC) নম্বর বরাদ্দের সময় কিছু ভুলের কারণে বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক ব্যক্তিকে একই নম্বর দেওয়া হয়েছে। এবার প্রযুক্তিগত (Bengal CEO) দল ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিটি ভোটারকে একক এপিক নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে (Phantom Voters)।
Leave a Reply