মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আপনি একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।” বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবর্তনের প্রশ্নে মহম্মদ ইউনূসকে (Md Yunus) নাকি এই ভাষায়ই জবাব দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। ইউনূস চেয়েছিলেন, ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণগুলো যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কী বললেন ইউনূস? (PM Modi)
প্রবল আন্দোলনের জেরে গত বছরের ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। পরে লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে ভাষণ দেওয়ার সময় ইউনূস জানান, ভারত তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় তিনি হতাশ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, “আমি যখন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই, তখন আমি শুধু তাঁকে এটুকুই বলেছিলাম — আপনি যদি ওঁকে আশ্রয় দেন, আমি আপনাকে সেই নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করতে পারি না। কিন্তু দয়া করে আমাদের সহায়তা করুন যাতে উনি যেভাবে বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা বন্ধ করা যায়।” তিনি জানান, এর জবাবেই নাকি মোদি দৃঢ়ভাবে বলেন, “এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম —আপনি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।”
পরিস্থিতিকে বিস্ফোরক আখ্যা
অসন্তুষ্ট ইউনূস এই পরিস্থিতিকে বিস্ফোরক বলে অভিহিত করেন। তাঁর দাবি, হাসিনার বক্তব্যগুলো বাংলাদেশে অস্থিরতা উসকে দিচ্ছে। তবে নয়াদিল্লিকে ডিজিটাল অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণের ডাক দেওয়ায় তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা কর্মী এবং আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইউনূস। তাঁরা এটিকে এমন একটি সরকারের বিপজ্জনক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হিসেবে দেখছেন, যে সরকার ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করেছে এবং একটি অস্থায়ী সরকারের ছদ্মবেশে বিরোধী কণ্ঠ দমন করতে চাইছে (PM Modi)।
মোদির সাফ কথা
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়লেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচার বন্ধে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির দৃঢ় অবস্থান ভারতের সাংবিধানিক স্বাধীনতা এবং ডিজিটাল অধিকার রক্ষায় তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিই তুলে ধরে। যখন বিশ্বের বিভিন্ন কর্তৃত্ববাদী সরকার মতপ্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে প্রতিবাদ দমন করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, তখন ভারতে আশ্রয় নেওয়া এক বিদেশি নেতার রাজনৈতিক বক্তব্য বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত স্পষ্ট বার্তা দেয় – গণতান্ত্রিক নীতিগুলির সঙ্গে কোনওভাবেই আপস করা হবে না (Md Yunus)।
নয়াদিল্লির সন্দেহের তালিকায় ইউনূস
ভারতের অবস্থান ইউনূসের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার সম্পূর্ণ বিপরীত। ক্ষমতায় আসার পর থেকে নোবেলজয়ী থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা ইউনূস একটি ক্রমবর্ধমান দমনমূলক প্রশাসন পরিচালনা করছেন। তাঁর অস্থায়ী সরকার রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, বিরোধীদের বিরুদ্ধে আইনি বিচার শুরু করেছে, এমনকি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে। পুরো ঘটনাপ্রবাহকে সন্দেহের চোখে দেখছে নয়াদিল্লি, বিশেষ করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাজনীতিকরণের পটভূমিতে (PM Modi)।
ইউনূসের চিন প্রীতি
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ইউনূসের আবেদন — হাসিনার ডিজিটাল কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য – ভারতের প্রতি বৃহত্তর শত্রুতার একটি অংশমাত্র। সম্প্রতি চিন সফরে গিয়ে তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে “স্থলবেষ্টিত” আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশকে “সাগরের রক্ষক” ঘোষণা করায় ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। ইউনূস বলেন, “ভারতের পূর্বাঞ্চল, যা সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত, তা স্থলবেষ্টিত। তাদের সাগরে কোনও প্রবেশাধিকার নেই। আমরা এই অঞ্চলের একমাত্র সাগরের রক্ষক।” বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউনূসের এই ধরনের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশ ভূগোলকে কাজে লাগিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বঙ্গোপসাগরীয় প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ইউনূসের এহেন মন্তব্যকে অনেকেই প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবে দেখছেন (Md Yunus)।
ভারতের প্রতি এই প্রচ্ছন্ন হুমকি!
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক নেতারা ইউনূসের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন। তাঁরা একে উসকানিমূলক এবং পড়শি কূটনীতির চেতনার বিরুদ্ধে বলে অভিহিত করেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূসের চিনের প্রতি আকর্ষণ এবং ভারতের প্রতি এই প্রচ্ছন্ন হুমকি একটি বিপজ্জনক কৌশলগত মোড় নির্দেশ করে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বিঘ্নিত করতে পারে (PM Modi)। ইউনূস চাইছেন ভারত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সেন্সরশিপ চালু করুক। যেমনভাবে তাঁর নিজের দেশেই তিনি দমন করেছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে। আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, দমন করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বরকে, সর্বক্ষণ চাপের মধ্যে রয়েছে সে দেশের গণমাধ্যম (PM Modi)।
Leave a Reply