Rafale-M Jets: ২৬টি রাফাল-মেরিন জেট কিনছে ভারত, সীমান্তে অশান্তির মধ্যেই ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর

rafale-m jets india get by 2030 under Rs 63,887 crore deal inked with france

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েই ছিল। ২৬টি ‘রাফাল মেরিন’ (Rafale-M Jets) যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে ফ্রান্সের সঙ্গে অবশেষে চুক্তি সই করে ফেলল ভারত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, সোমবার ফ্রান্সের সঙ্গে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে ২৬টি রাফাল-এম যুদ্ধবিমানের চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে মহার্ঘ প্রতিরক্ষা চুক্তি (India France Deal)। দুই দেশের সরকারের মধ্যে হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী, ২২টি এক আসনের নৌ-সংস্করণ এবং চারটি দুই আসনের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ২০৩০ সালের মধ্যেই ভারতে সরবরাহ করা হবে। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণ, লজিস্টিক সহায়তা, কর্মীদের প্রশিক্ষণও চুক্তির আওতায় রয়েছে।

সেনাবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি

রাফাল-এম (Rafale-M Jets)  বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত নৌ-যুদ্ধবিমান, যা শুধু এখন ফ্রান্সের কাছেই রয়েছে। এ বার তা ভারতও পেতে চলেছে। পহেলগাঁও কাণ্ড নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েই চলেছে। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করায় যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। এই রাফাল বিমানগুলি বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত থেকে পরিচালিত হবে। সেখানে বর্তমানে থাকা মিগ-২৯কে বিমানগুলিকে অবসরে পাঠানো হবে। এই যুদ্ধবিমানগুলি নৌসেনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ২৬টি ‘রাফাল-এম’ যুদ্ধবিমান এলে জলপথ থেকেই আক্রমণ শানাতে পারবে ভারত। এই ২৬টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে ২২টিতে এক জন পাইলট বসার জায়গা থাকছে। বাকি চারটি বিমানে দু’জন করে পাইলট বসতে পারবেন। দুই আসন বিশিষ্ট জেটগুলি কেবলমাত্র প্রশিক্ষণের জন্য। এগুলি বিমানবাহী রণতরী থেকে ওঠানামা করতে পারবে না।

কবে আসছে নতুন রাফাল এম

এর আগে ২০১৬ সালে ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতে আনার চুক্তি হয়। সেগুলি ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য। রাফালের প্রথম ব্যাচটি এসে পৌঁছায় ২০২০ সালের জুলাই মাসে। এ বার দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে বায়ুসেনার পাশাপাশি নৌসেনার হাতেও রাফাল শ্রেণির যুদ্ধবিমান তুলে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, রাফাল-এম ভারতে আসা শুরু করবে ২০২৮ সাল থেকে ২৯ সালের মধ্যে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হবে গোটা ডেলিভারির কাজ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সূত্রে জানা গেছে, ২০২৮ সালে ৯টি, ২০২৯ সালে ১২টি এবং ২০৩০ সালে বাকি ৫টি রাফাল-এম ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে আসবে। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “রাফাল-এম একটি ক্যারিয়ার-নির্ভর বহুমুখী যুদ্ধবিমান, যার প্রমাণিত অভিযানক্ষমতা রয়েছে। এটি সমুদ্রে ভারতের আকাশক্ষমতা অনেকগুণ বাড়াবে।” ভারতের স্টোবার-প্রযুক্তির বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ থেকেই উড়ান কিংবা অবতরণ করতে পারবে রাফাল-এম।

চুক্তির অধীনে কী কী

সোমবার সাউথ ব্লকে প্রতিরক্ষামন্ত্রকের দফতরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং। অন্যদিকে, ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত থিয়েরি ম্যাতু। উপস্থিত ছিলেন নৌসেনার উপপ্রধান এবং বিমান ও অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থা যথাক্রমে দাসো ও এমবিডিএ- কর্তারা। ডিজিটালি উপস্থিত ছিলেন রাজনাথ সিং ও ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এই চুক্তিতে ইতিমধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনায় থাকা ৩৬টি রাফালের জন্যও অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত। যদিও এই চুক্তিতে মোট প্রযুক্তি স্থানান্তরের কথা নেই, তবে ভবিষ্যতে ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র যেমন ‘অস্ত্র’ মিসাইল এবং ডিআরডিও-র তৈরি নৌবাহিনীর এনএসএম ক্ষেপণাস্ত্র রাফাল-এম যুদ্ধবিমানে সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চুক্তির আওতায় ভারতে একটি বিমানের ফিউসেলাজ উৎপাদন কেন্দ্র এবং ইঞ্জিন, সেন্সর ও অস্ত্রের এমআরও (মেইনটেন্যান্স, রিপেয়ার ও ওভারহল) কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থাও থাকবে।

‘রাফাল-এম’ যুদ্ধবিমান ছাড়াও ফ্রান্সের ডুবোজাহাজ!

ইতিমধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনা শুরু করেছে এক বিরাট সামরিক মহড়া। যার নাম ‘আক্রমণ’। বিমানবাহিনী পাহাড় এবং স্থলে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণের ড্রিল সারছে। দেশের মূলধারার যুদ্ধবিমানগুলি সেখানে আকাশ দাপাচ্ছে। রয়েছে সুখোই স্কোয়াড্রন। বায়ুসেনা রাফাল যুদ্ধবিমানগুলি বর্তমানে হরিয়ানার অম্বালা এবং আলিপুরদুয়ারের হাসিমারা— এই দুই ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হয়। ‘রাফাল-এম’ যুদ্ধবিমান ছাড়াও ফ্রান্সের থেকে স্করপিন শ্রেণির ডুবোজাহাজ কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে ভারতের। ওই ডুবোজাহাজগুলির জন্যও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি এখনও তাতে অনুমোদন দেয়নি। এছাড়া, এমআরএফে চুক্তির আওতায় ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য আরও ১১৪টি রাফাল কেনার প্রাথমিক কথাবার্তাও চলছে বলে জানা গিয়েছে।

কোথায় অন্য যুদ্ধবিমানদের মাত দেয় রাফাল

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গোটা বিশ্বজুড়ে এক নামে পরিচিতি রাফালের। মাল্টি রোলিং ক্ষমতা সঙ্গে শত্রু নিক্ষেপে ধুরন্ধর। সব মিলিয়ে রাফালের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তার সঙ্গে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তৈরি অস্ত্র। যত দূরেই থাকুক শত্রু, রাফালের স্ক্যাল্প (SCALP) ক্রুজ মিসাইল তাকে নিমিষে ধ্বংস করতে সক্ষম। এছাড়াও, রাফাল কিন্তু নিজের মধ্যে বইতে পারে পরমাণু বোমাও। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ঘণ্টায় ২ হাজার ২২২ কিলোমিটার গতিবেগে আকাশকে চিরে দিয়ে ছুটে যেতে পারে রাফাল। যা মিনিটে পার করে দেবে পাকিস্তানকে। বুঝে উঠতেও পারবে না তারা। যখন একদিকে মাথার উপর বসে সর্বক্ষণ হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে চিন। তাদের আবার দোসর হচ্ছে পাকিস্তানও। সেই আবহে এদের মুখ বন্ধ করতেই রাফালকেই মোক্ষম জবাব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share