মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অবশেষে ৯ মাসের অপেক্ষার অবসান। নিরাপদেই পৃথিবীতে ফিরলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাসার মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস (Sunita Williams) এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর। আজ, ১৯ মার্চ বুধবার, ভোর ৩টে ২৭ মিনিট নাগাদ (ভারতীয় সময়) তাঁদের নিয়ে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান ফ্লরিডার সমুদ্রে অবতরণ করে। মহাকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সুনীতাদের এই প্রত্যাবর্তনে কোনও রকম ত্রুটি হয়নি বলেই জানিয়েছে নাসা। সুনীতাদের (Sunita Williams) সঙ্গে একই মহাকাশযানে ফিরেছেন নাসার নিক হগ এবং রুশ নভশ্চর আলেকজান্ডার গর্বুনভ। প্রসঙ্গত, গত বছর জুন মাসে সুনীতারা মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেসময় সফর ছিল ৮ দিনের। পরে মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায়, আটকে পড়েন সুনীতারা। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে (ভারতীয় সময়) সুনীতাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) ছাড়ে স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। পরে বুধবার অতলান্তিক মহাসাগরের ফ্লোরিডা উপকূলে মহাকাশচারীরা নিরাপদে অবতরণ করেন। তাঁদের জন্য আগে থেকেই রাখা ছিল মার্কিন নৌসেনা বাহিনীর বোট।
পরিবারের সঙ্গে এখনই দেখা নয় (Sunita Williams)
এর পরেই মডিউল-সহ সুনীতাদের একেবারে জাহাজের কাছে নিয়ে আসে নৌবাহিনী। মহাকাশচারীদের হাইড্রলিক পদ্ধতিতে তোলা হয় জাহাজের ভিতর। সেখানে ড্রাগন ক্যাপসুলের দরজা খোলা হয়। প্রথমে বেরিয়ে আসেন নিক হগ। তার প্রায় ৫ মিনিট পরে ভারতীয় সময় ভোর ৪টে ২২ নাগাদ হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন সুনীতা উইলিয়ামস। এর পরেই জাহাজ পাড়ি দেয় স্থলভাগের উদ্দেশে। জানা যাচ্ছে, পৃথিবীতে ফিরলেও এখনই নিজেদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না মহাকাশচারীরা। তাঁদের থাকতে হবে ক্রু- কোয়ার্টারে। সেখানেই বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তার পরে সুনীতা (Sunita Williams) ও বুচের সঙ্গে দেখা করার সম্মতি মিলবে পরিবার ও আত্মীয়দের। সুনীতাদের অবতরণের পরেই ভারতের বিভিন্ন জায়গাতেও দেখা দিয়েছে উন্মাদনা।
নাসার সাংবাদিক বৈঠক
মহাকাশচারীদের অবতরণের পরেই এদিন নাসার পক্ষ থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ভারতীয় সময় ভোর ৫টা ৫ মিনিট নাগাদ এই সাংবাদিক বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। নাসার উপ সহযোগী প্রশাসক জোয়েল মনটালবানো ও কার্যক্রম সমন্বয় ব্যবস্থাপক বিল স্পিচ বলেন, ‘‘নাসার গর্বের সঙ্গীরা নিরাপদ ভাবে অবতরণ করেছেন। ৯ মাসে ৯০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ১৫০টি বিষয়ের গবেষণা করা হয়েছে।’’
কীভাবে ফেরত মহাকাশ থেকে
নিরাপদে ফিরে এসেছেন সুনীতারা। প্রথমেই তাঁদের স্পেসক্রাফটের (SpaceX Crew 9) ইঞ্জিন চালু করা হয়। তা পৃথক হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে। এরপর তা ধাপে ধাপে নীচের কক্ষপথে নেমে আসে। এর গতিবেগকে কমিয়ে দেওয়া হয়। তার কারণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে এই যানের গতি এমনিতেই বেশি হয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই এই মহাকাশযানের সর্বোচ্চ গতি হয়ে যায় প্রতি ঘণ্টায় ২৮ হাজার ৮০০ কিলোমিটার। এই বিপুল গতিতে ফিরতে স্বাভাবিকভাবে তীব্র ঘর্ষণ শুরু হয় মহাকাশযানে। এর ফলে এর তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। এই কারণে তাপ প্রতিরোধক ব্যবস্থাও করা হয় যন্ত্রে। এই সময়ে মহাকাশচারীরা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পাঁচগুণ বেশি টান অনুভব করেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপরে মহাকাশযান থেকে ক্যাপসুল ও বড় প্যারাসুটের মাধ্যমে সমুদ্রে সফট ল্যান্ডিং করানো হয় স্পেসএক্স-র যানকে।
রবিবার মহাকাশে পৌঁছায় ইলন মাস্কের যান (SpaceX Crew 9)
প্রসঙ্গত, ৫ জুন সুনীতাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল বোয়িং স্টারলাইনার। কিন্তু পরে এই মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে সেখানেই আটকে পড়েন সুনীতারা। তার পর থেকে একাধিক বার তাঁদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বার বার তা নানা কারণে পিছিয়ে গিয়েছে। আট দিনের সফর দীর্ঘায়িত হয়েছে ন’মাসে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেন গত জানুয়ারিতে। এরপরেই তিনি ইলন মাস্ককে সুনীতাদের বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেছিলেন। তার পর মহাকাশে স্পেসএক্সের যান পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করা হয়। গত শনিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, রবিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রকেটটি মহাকাশ স্টেশনে ডকিং করে। তাতে ছিলেন নাসার অ্যান ম্যাক্লেন, নিকোল আইয়ার্স, জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সার প্রতিনিধি টাকুয়া ওনিশি এবং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের প্রতিনিধি কিরিল পেসকভ। তাঁদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এরপর পৃথিবীতে ফিরে এলেন সুনীতারা (Sunita Williams)।
Leave a Reply