মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাদল অধিবেশনে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিল, ২০২৫ পাশ করল উত্তরাখণ্ড বিধানসভা (Madrasa)। এই বিলটি পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের নীতিগত কাঠামো সংস্কারের একটি প্রচেষ্টা, যেটি মূলত মাদ্রাসাগুলির ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিল এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিকে অগ্রাহ্য করেছিল (Uttarakhands Minority Education Bill)।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আইন (Uttarakhands Minority Education Bill)
১ জুলাই ২০২৬ থেকে এই বিল কার্যকর হয়ে উত্তরাখণ্ড মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০১৬ এবং উত্তরাখণ্ড বেসরকারি আরবি ও ফার্সি মাদ্রাসা স্বীকৃতি বিধিমালা, ২০১৯ বাতিল করবে। যা এই বিলটিকে পূর্ববর্তী আইনগুলির থেকে আলাদা করে তা হল এর অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সংশোধনাত্মক চরিত্র। উত্তরাখণ্ড বিল মুসলিমদের পাশাপাশি অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিকেও স্বীকৃতি দেয় এবং সংখ্যালঘু মর্যাদার সুবিধা দেয়। এখানে শিখ, জৈন, খ্রিস্টান, পার্শি এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কংগ্রেস সরকারের শাসনকালে এগুলিকেই পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিলটির মূল লক্ষ্য হল, উত্তরাখণ্ডের সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে বজায় থাকা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা। পূর্ববর্তী আইনগুলি মাদ্রাসার জন্য একটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যা বিদ্যালয় ব্যবস্থার অনুরূপ হলেও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিকে আইনগত স্বীকৃতি ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখেছিল।
তুষ্টিকরণের রাজনীতি
মাদ্রাসার ঘাটতি এবং অ-মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবহেলার মূল কারণ উত্তরাখণ্ডের পূর্বতন কংগ্রেস সরকার তুষ্টিকরণের রাজনীতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সংস্কার করার পরিবর্তে কংগ্রেস সরকার ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির স্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে অনিয়ম ও অপূর্ণ সম্ভাবনায় ভরপুর একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। ইসলামি মৌলবাদীদের ক্ষোভের ভয়ে কংগ্রেস সরকার শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সমতা প্রতিষ্ঠার প্রতি নজর দেয়নি (Uttarakhands Minority Education Bill)। এরই ফলস্বরূপ মাদ্রাসায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এই সমস্যাগুলির মধ্যে ছিল বৃত্তি বিতরণে অনিয়ম, মিড-ডে মিল কর্মসূচিতে অসঙ্গতি এবং মাদ্রাসা পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাব। এই কারণে সংস্কার অনিবার্য হয়ে উঠেছিল (Madrasa)।
মাদ্রাসার সংখ্যাবৃদ্ধি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্বেগ
সংবেদনশীল সীমান্ত এলাকায় বেআইনি মাদ্রাসার সংখ্যাবৃদ্ধি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেক মাদ্রাসা অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে, অননুমোদিত নির্মাণ হচ্ছে অথবা শিক্ষার আড়ালে উগ্রপন্থী মতবাদ প্রচার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ। এনসিপিসিআর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে মাদ্রাসার কার্যক্রমের মূল সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলি হল, ইসলাম ধর্মের উচ্চতা প্রচারে অতিরিক্ত জোর, শুধুমাত্র প্রতীকীভাবে এনসিইআরটির বই অন্তর্ভুক্তি, প্রায়ই অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার অভাবে পুরনো শিক্ষাদান পদ্ধতি, এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, যা ছাত্রছাত্রীদের মূলধারার সুযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে (Uttarakhands Minority Education Bill)।
উগ্রবাদ প্রতিরোধে বহুবিধ পদক্ষেপ
নয়া এই বিলটি শিক্ষার আড়ালে ছড়িয়ে পড়া উগ্রবাদ প্রতিরোধে বহু দিক থেকে পদক্ষেপ করেছে। প্রথমত, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা প্রচারের জন্য গুরুমুখী ও পালি ভাষা পড়াশোনার বিধান রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সব সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান পরিচালনার তদারকির জন্য উত্তরাখণ্ড স্টেট অথরিটি ফর মাইনরিটি এডুকেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই বিলে ইউএসএমইএ নামে একটি নতুন ১২ সদস্যের সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে ছ’জন করে শিক্ষাবিদ এবং একজন সমাজকর্মীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা (Madrasa)।
উত্তরাখণ্ড স্কুল শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত
শিক্ষার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসেবে এই বিলটি অবশ্যই উত্তরাখণ্ড স্কুল শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিধান দিয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনা পদ্ধতি এবং পাঠ্যক্রমের মান একরকমভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি সরাসরি এনসিপিসিআর রিপোর্টে উল্লিখিত উদ্বেগগুলি মোকাবিলা করে। নয়া কাঠামোর আওতায় ইউএসএমইএ এবং ইউবিএসই দ্বারা প্রণীত নিয়মাবলী সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানগুলির সমস্ত শিক্ষাগত, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে প্রযোজ্য হবে। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, সামঞ্জস্য ও গুণগত মান উন্নত হবে (Uttarakhands Minority Education Bill)।
বিলটিতে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা
বিজেপি সরকারের আনা এই বিলটি ধর্মীয় স্বাধীনতার সংরক্ষণ ও সমন্বিত শিক্ষাগত মান বজায় রাখার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫ ও ২৬ ধর্ম বিশ্বাস প্রকাশ এবং পালন করার অধিকার সুরক্ষিত করেছে। তবে দুটিই যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধের আওতায় থাকে। আনজুম কাদারি বনাম ভারত সংঘ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য করেছে। এটি হল, একদিকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় নির্দেশনা ও প্রবর্তন অনুচ্ছেদ ২৮-এর কারণে সীমিত (Madrasa)।
উত্তরাখণ্ডের এই বিলটি এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এটি ধর্মীয় শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করছে না, বরং এনসিইআরটি এবং রাজ্য বোর্ডের মানদণ্ড মেনে চলার শর্ত দিয়ে তার ক্ষেত্র নির্ধারণ করছে। বিলটি সংখ্যালঘু অধিকার হরণ করছে এমন দাবি থেকে বহু দূরে, বরং এটি (Madrasa) নিশ্চিত করে যে প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় স্বাধীনতা শিক্ষাগত মানের সঙ্গে সুসঙ্গতভাবে বজায় থাকবে (Uttarakhands Minority Education Bill)।
Leave a Reply