তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
‘স্মার্ট’ দেখানোর কৌশল কিংবা আর পাঁচ জনের সামনে ‘আধুনিক’ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য অনেকেই প্রথম সুখটান দেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই নিছক আনন্দ, অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আর তার জেরেই বাড়ে বিপদ। ধূমপান বা গুটখার মতো তামাকজাত পণ্য সেবনের জেরে একাধিক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে (Tobacco Health Risks)। অনেকক্ষেত্রে তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। কিন্তু তারপরেও ভারতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তামাক সেবনের প্রবণতা বাড়ছে বলেই জানাচ্ছে একাধিক সমীক্ষার রিপোর্ট। যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
কী বলছে সাম্প্রতিক তথ্য?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বয়ঃসন্ধিকালে থাকা ছেলেমেয়েদের মধ্যে তামাক সেবনের প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, বয়স ১৪ বছরের চৌকাঠ পেরোলেই অধিকাংশ ভারতীয় ছেলেমেয়েরা ধূমপান করছে। ছেলের পাশপাশি মেয়েদের মধ্যেও ধূমপানের অভ্যাস থাকছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই ছেলেমেয়েরা নিয়মিত ধূমপান করছে। দীর্ঘকাল এই অভ্যাস থাকছে। যার ফলে নানান রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে (Tobacco Health Risks)। ধূমপানের পাশপাশি গুটখা, পানমশলার মতো তামাকজাত পণ্যেও তরুণ প্রজন্মের একাংশ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ওই সমীক্ষায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে। তাই প্রশাসনের সর্বস্তরে এবং স্কুলেও এই নিয়ে বাড়তি কর্মশালা জরুরি। ১ জুন ওয়ার্ল্ড নো টোবাকো ডে (World No Tobacco Day)! জুন মাস জুড়ে তাই বিভিন্ন স্তরে চিকিৎসক সংগঠনগুলো তামাক নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি চালানোর পরিকল্পনা করেছে। স্কুলগুলোতে ও নানান কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
কেন তামাক বিপদ বাড়াচ্ছে?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, তামাক সেবনের জেরে দেহের একাধিক রোগের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভারতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। হার্ট অ্যাটাকের ঘটনাও গত এক দশকে উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে। দেখা গিয়েছে, ধূমপান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ তামাক সেবন। ভারতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে (Tobacco Health Risks)। তামাক সেবন তার অন্যতম কারণ বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হৃদরোগের সমস্যা বাড়ছে। তরুণ প্রজন্মের তামাক সেবনের অভ্যাস, তার জন্য দায়ী বলেও মনে করছেন একাংশের চিকিৎসক।
ফুসফুসের সমস্যা এবং সংক্রমণের অন্যতম কারণ তামাক বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত এক দশকে ভারতে উল্লেখযোগ্য ভাবে ফুসফুসের রোগের প্রকোপ বাড়ছে। তরুণ প্রজন্মের একাংশ ফুসফুসের লাগাতার সংক্রমণে ভুগছে। নিউমোনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে। নিউমোনিয়ার জেরে মৃত্যুর সংখ্যাও যথেষ্ট বেড়েছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ধূমপান ফুসফুসের সংক্রমণের অন্যতম কারণ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ধূমপান করলে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যায়। ফুসফুসে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায় (Tobacco Health Risks)। কম বয়স থেকেই ধুমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে ফুসফুসে জটিল রোগ সহজেই বাসা বাঁধে। এমনকি ফুসফুসের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
তামাক ডেকে আনে বন্ধ্যাত্ব থেকে হরমোনের সমস্যা
নিয়মিত তামাক সেবন করলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা হতে পারে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্মের একাংশ বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন। তামাক সেবন তার অন্যতম কারণ বলেই তাঁরা জানাচ্ছেন। তামাক শরীরের নানান হরমোনের নিঃসরণের উপরে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এর ফলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই তামাক সেবন করলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তামাক মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, তামাক সেবন করলে মস্তিষ্কে অসাড়তা তৈরি হয়। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে। স্মৃতিশক্তির উপরেও প্রভাব পড়ে। তাই তামাক সেবন শরীরের পাশপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকারক (Tobacco Health Risks)।
কী পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্কুল স্তর থেকে তামাক নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি প্রয়োজন। তামাক সেবন থেকে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তামাক সেবন হার্ট অ্যাটাক, কিডনির রোগ এবং নানান সংক্রামক রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। এই সম্পর্কে সর্বস্তরে বারবার জানানো দরকার। স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি হলে তবেই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস কমবে। এর পাশপাশি প্রয়োজন কাউন্সেলিং। স্কুলে স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালে থাকা ছেলেমেয়েদের বোঝানো দরকার। তাঁদের পরামর্শ, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করা দরকার। বন্ধু মহলে স্মার্ট দেখানো বা নিজেকে আধুনিক প্রমাণের হাতিয়ার অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। বরং ধূমপান একেবারেই একটি খারাপ অভ্যাস। এর সঙ্গে আধুনিকতার কোনো মেলবন্ধন হয় না। এটা বোঝানো এবং প্রচার জরুরি। তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলোর (Tobacco Health Risks) পাশপাশি এই দিক থেকেও বিষয়টি বারবার কম বয়সিদের সামনে তুলে ধরতে হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবেই তামাক সেবন নিয়ে সচেতনতা (Tobacco awareness) গড়ে উঠবে। এর পাশপাশি তামাকজাত পণ্যও যেন স্কুল পড়ুয়াদের কাছে সহজে না পৌঁছয় সে সম্পর্কে প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Leave a Reply