India Bangladesh Relations: ভারত-বিরোধিতার মাশুল! বাংলাদেশকে মোক্ষম শিক্ষা দিল দিল্লি, মাথায় হাত ইউনূসের

india bangladesh relation yunus pay for his northeast remark delhi withdraws transshipment facility for dhaka

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করতে তৎপর ইউনূসের বাংলাদেশ। ভারত-বিরোধিতা (India Bangladesh Relations) এখন পদ্মাপাড়ের মূলমন্ত্র। যে মানচিত্র ভারতের হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছিল, সেই মানচিত্রের গ্রাফটাই এখন বদলে গিয়েছে। হাসিনা পরবর্তী যুগে সোনার বাংলাদেশ এখন ছারখার। জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চল। তাই চুপ করে কতদিন থাকা যায়! কয়েকদিন আগেই চিনে গিয়ে ভারতের নিন্দা করে এসেছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। বলেছিলেন, ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি ‘ল্যান্ড লকড’। তাদের সমুদ্রপথের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। ওই এলাকার সমুদ্রপথের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ। ইউনূসের ওই মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি ভারত। এবার সহজে বাংলাদেশের বাণিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দিল দিল্লি। তৃতীয় কোনও দেশে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি করতে ব্যবহার করা যাবে না ভারতের কোনও বন্দর বা বিমানবন্দরের শুল্ককেন্দ্র। সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। তবে, ছাড় দেওয়া হয়েছে ভুটান ও নেপালের ক্ষেত্রে। ভারতের ভূখণ্ড হয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহণে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে দিল্লি। অর্থাৎ, ভারত দিয়ে এই দুই দেশে আগের মতোই রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা, ইউরোপ বা অন্য বাকি দেশে পণ্য পাঠাতে পারবে না ঢাকা।

ভারতের সিদ্ধান্ত

কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৮ এপ্রিলের পর থেকে ভারতের উপর দিয়ে ভুটান ও নেপাল বাদ দিয়ে আর কোনও দেশে পণ্য রফতানির জন্য ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন (LCS) বা শুল্ক কেন্দ্র ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ (India Bangladesh Relations)। এতদিন এই সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজস্ব পণ্য ভারতে নিয়ে এসে এখানকার বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পাঠাতে পারত। এটি দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। বাংলাদেশের সামগ্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশে রফতানির জন্য এই ‘‘ট্রান্স-শিপমেন্ট’’ সুবিধা প্রত্যাহার করা হল। এর জন্য কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (সিবিআইসি) ২০২০ সালের জুন মাসের একটি নিয়ম বাতিল করল, যা বাংলাদেশের পণ্য ভিনদেশে রফতানির জন্য ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরের ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন ব্যবহার করতে দিত। এতে বিভিন্ন দেশে পণ্য পাঠাতে ভারতের পরিকাঠামোকে ব্যবহার করে এক ছাদের নিচে সব সুযোগ সুবিধা পেত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ফলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এবার থেকে ওই সব দেশে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়বে। সময়ও বেশি লাগবে। খরচও বেশি হবে।

কেন এই নির্দেশ

পড়শি দেশকে (India Bangladesh Relations) এই সুবিধা দেওয়া বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছিল ভারতীয় রফতানিকারক সংস্থাগুলি। বিশেষ করে বস্ত্র রফতানি সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে এই অনুরোধ করা হয়েছিল। ২০২০ সালের জুন মাস থেকে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিয়ে আসছিল ভারত। ভিন দেশে পণ্য রফতানির জন্য এই সুবিধা ব্যবহার করত বাংলাদেশ। ৮ এপ্রিলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই সংক্রান্ত পূর্ববর্তী নির্দেশিকা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে যে সব পণ্য ইতিমধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছে, সেগুলিকে পূর্বের নির্দেশিকা অনুসারে ভারত থেকে বেরোতে দেওয়া হবে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, বাংলাদেশকে ওই সুবিধা দেওয়ার ফলে এ দেশের বন্দর এবং বিমানবন্দরগুলিতে ভিড় বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এর ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলির রফতানিতে সমস্যা হচ্ছিল। সেই কারণে বাংলাদেশকে ওই সুবিধা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। তবে বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, নেপাল এবং ভুটানে পণ্য রফতানি করতে বাংলাদেশের কোনও সমস্যা হবে না।

ভারতের সুবিধা

সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতীয় বিমানবন্দর এবং বন্দরগুলির এলসিএস-গুলিতে বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক-শিপমেন্ট এসে ভিড় জমাত। এতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত সময় ও টাকা খরচ হচ্ছিল। অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (AEPC) চেয়ারম্যান সুধীর শেখরি বলেছেন, “ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের নিষ্পত্তি হল। প্রতিদিন ২০-৩০ বাংলাদেশি পণ্য বোঝাই ট্রাক দিল্লিতে এসে অপেক্ষা করত ভিনদেশে যাওয়ার জন্য। এতে আমাদের এক্সপোর্টাররা সমস্যার পড়ছিলেন। কার্গোতে আমাদের পণ্যের পর্যাপ্ত জায়গা হচ্ছিল না।” এই সিদ্ধান্তের ফলে বস্ত্র, জুতো, মূল্যবান পাথর এবং গয়নার ক্ষেত্রে ভারতীয় রফতানিকারক সংস্থাগুলির সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, বস্ত্র রফতানি ক্ষেত্রে ভারতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হল বাংলাদেশ। ভারতীয় রফতানি সংস্থাগুলির সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন’ (এফআইইও)-এর মহাপরিচালক অজয় সহায় বলেন, “এর ফলে ভারতীয় রফতানি পণ্যের জন্য বিমানে আরও বেশি জায়গা পাওয়া যাবে। অতীতে রফতানিকারক সংস্থাগুলি প্রায়শই অভিযোগ করত, বাংলাদেশি পণ্যের জন্য তারা কম জায়গা পাচ্ছে।”

কূটনীতিকদের অভিমত

সম্প্রতি চিনে গিয়ে নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মেরে এসেছিলেন ইউনূস। নিজেদের সমুদ্রের অভিভাবক বলে চিনকে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশে (India Bangladesh Relations) এসে ব্যবসার জন্য, প্রচুর জিনিস বানাতে। বিক্রির জন্য বাংলাদেশের বাজার উন্মুক্ত। চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের এই বন্ধুত্ব ভারত ভালো চোখে দেখেনি। তার ওপর যখন শিলিগুড়ির চিকেনস্ নেকের কাছে বাংলাদেশের মাটিতে চিনকে বিমানঘাঁটি তৈরির আহ্বান জানিয়ে বসেন ইউনূস, তখন ভারত আর চুপ করে বসে থাকেনি, বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। চিন সফরে গিয়ে ইউনূসকে বলতে শোনা যায়, “ভারতের পূর্ব প্রান্তের সাতটি রাজ্য, যাদের সেভেন সিস্টার্স বলা হয়। ওই বিরাট অঞ্চল কিন্তু পাহাড় আর স্থলভাগে ঘেরা। সমুদ্রপথে যোগাযোগ করার উপায়ই নেই তাদের। বাংলাদেশই হল সমুদ্রপথের রাজা। তাই ওই এলাকায় চিনা অর্থনীতির বিস্তার ঘটতেই পারে।” এই মন্তব্যের ইঙ্গিত অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ভারতের ৭ রাজ্য (সেভেন সিস্টার)কে ভেঙে ফেলতে চায় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এই একই ইচ্ছা চিনের। যদিও সেই চৈনিক চাল বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এবার বাংলাদেশের মুখে এমন মন্তব্যে দুয়ে দুয়ে চার করতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না ভারতের। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের কফিনের অন্যতম পেরেক ইউনূসের এই মন্তব্য। তাই এবার ব্যবসার রাস্তা বন্ধ করে ঢাকাকে বার্তা দিল দিল্লি।

বিপদে বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের মতে, ভারতের এই এক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি ও ব্যবসায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে। বিশেষত ঢাকার বস্ত্র রফতানি এতে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হবে। এতদিন ধরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচুর পণ্য পাঠাত বাংলাদেশ, বিশেষত জামাকাপড়। ভারতের মাটি, বায়ুপথ ও বন্দরের শুল্ককেন্দ্র ব্যবহার করে অনেক কম খরচ ও কম সময়ে ভিনদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পাঠাত বাংলাদেশ। কিন্তু এবার সেই সুযোগ বন্ধ হল। এখন থেকে বাংলাদেশকে সমুদ্রপথ বা আকাশপথে রফতানির বিকল্প ভাবতে হবে, যা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। লজিস্টিক সমস্যা ও সময়ে পণ্য পৌঁছতে দেরি হবে। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে ঢাকা। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলছেন, “বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের রফতানি এবার মার খাবে। এতদিন ভারত যে সুবিধা দিত তাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের শুধু অনেক টাকাই বাঁচত না, সময়ও বাঁচত।” তিনি আরও জানান, গত ২০ বছর ধরে বাংলাদেশকে সন্তানসুলভ প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে ভারত। পণ্যের উপর শূন্য শুল্ক থেকে অগ্রাধিকার— কী না দেওয়া হয়নি। মদ ও সিগারেট ছাড়া নেপাল, ভুটানের মতো দেশে বাংলাদেশ সব পণ্য বিনা শুল্কে এতদিন পাঠিয়ে এসেছে। তাও ভারত-বিরোধিতা (India Bangladesh Relations) করতে পিছপা হননি ইউনূস। তাই পরিবর্তিত বাংলাদেশকে শিক্ষা দিতেই এই পদক্ষেপ ভারতের।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share