মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে মুর্শিদাবাদ জেলায় তাণ্ডব। ব্যাপক হিংসার ঘটনায় মমতা সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে সরব হয়েছে দেশের একাধিক মহল। জেলার হিংসার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। তাঁদেরই শ্রদ্ধা জানাতে পূর্ব ঘোষণা মতো আজ বুধবার বিজেপির তরফে পালন করা হল হিন্দু শহিদ দিবস (Hindu Martyrs Day)। দলীয়ভাবে রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে এই কর্মসূচি। একইভাবে বিধানসভার বাইরেও এই কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেল বিজেপি বিধায়কদলকে। উপস্থিত ছিলেন শঙ্কর ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) সহ অন্যান্য বিজেপির বিধায়করা। এরপরই বিরোধী দলনেতা রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেন, ‘‘চোখের জল ফেলুন। চোখের জলে শপথ নিন হিন্দু বিরোধী সরকারকে ফেলবেন, খুনীদের জেলে পুড়বেন। রাজ্যজুড়ে হিন্দুরা বাঁচার লড়াই করছে। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। মমতা খুনী।’’
হাতে কালো পতাকা নিয়ে বিজেপি বিধায়করা সামিল হন বিক্ষোভে
এদিন হাতে কালো পতাকা নিয়ে গোটা ঘটনার প্রতিবাদ জানান বিজেপির বিধায়করা। মমতা সরকারের বিরুদ্ধে এদিন সুর চড়ান গেরুয়া শিবিরের বিধায়করা। ওঠে ‘হায় হায়’ স্লোগান। একইসঙ্গে, মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনায় নিহত পিতা-পুত্র হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের মৃত্যুতে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) এদিন কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রসঙ্গত, ওয়াকফের প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। এরপরেই সামনে আসে সামশেরগঞ্জে পিতা-পুত্রকে খুন করার ঘটনা। এই আবহে বিজেপি জানিয়ে দেয়, ১৬ এপ্রিল রাজ্যজুড়ে পালিত হবে শহিদ দিবস।
বিজেপি বিধায়করা স্লোগান তোলেন খুনীদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা হায় হায়
এদিন বুধবার বিধানসভার বাইরে প্রথমে একটি কৃত্রিম বেদী বানানো হয়। সেখানেই হিংসায় নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বিরোধী দলনেতা। তারপরই নন্দীগ্রামের বিধায়ক (Suvendu Adhikari) বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার দাবি, এই মৃত্যুর ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজে। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘মিথ্যাবাদী মমতা। আপনার ফরাক্কার এমএলের দাদা, কিষানগঞ্জের এমএলএ, আপনার ধুলিয়ানের চেয়ারম্যান, এরাই খুনের নায়ক।’’ গোটা বিধানসভা চত্বর এদিন সরগরম হয়ে ওঠে বিজেপির শহিদ দিবসকে (Hindu Martyrs Day) ঘিরে। বিজেপি বিধায়করা ঘন ঘন স্লোগান তুলতে থাকেন, ‘‘দুনিয়ার হিন্দু এক হও, বাংলার হিন্দু এক হও, চোর মমতা হায় হায়, খুনীদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা হায় হায়, খুনী মমতা বিরুদ্ধে লড়তে হবে একসাথে, পুলিশ মন্ত্রী হায় হায়।’’
২০২১ সালের পরে যেখানেই হিন্দু আক্রান্ত, সেখানেই পৌঁছেছেন তাঁরা, দাবি শুভেন্দুর
এদিন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) সাংবাদিকদের সামনে হিন্দু নিরাপত্তা ও হিন্দুদের হিন্দুদের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশে বার্তা দেন।তিনি জানান, ২০২১ থেকে এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে হিন্দুরা আক্রান্ত হলে তাঁরা যাননি। এরপরেই তিনি ঘোষণা করেন মুর্শিদাবাদেও যাবেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীর আরও দাবি, জেলা পুলিশকে তিনবার মেইল করেছেন তিনি, কিন্তু কোনও উত্তর পাননি তাই কোর্টে যেতে হয়েছে তাঁকে। যেদিন অনুমতি পাবেন সেদিন তিনি মুর্শিদাবাদ যাবেন বলে জানান তিনি। বিধানসভার বাইরে এদিন ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই’ স্লোগানও শোনা যায়। মুর্শিদাবাদ হিংসায় নিহত হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাসের ছবি দেওয়া পোস্টার হাতেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা। হিন্দু শহিদ দিবস লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে মুর্শিদাবাদ হিংসার জন্য মমতা সরকারকেই দায়ী করেন বিরোধী দলনেতা।
টাকা দিয়ে ইট ছুড়িয়েছে বিএসএফ, বিতর্কিত মন্তব্য মমতার, পাল্টা শুভেন্দু
অন্যদিকে, এদিনই আবার বিধানসভায় বিজেপির বিক্ষোভের সময় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমামদের নিয়ে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যজুড়ে মৌলবাদীরা তাণ্ডব চালালেও ওয়াকফ অশান্তির জন্যই কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, যে কেন্দ্রীয় এজেন্সি মুর্শিদাবাদে শান্তি ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে, এদিন তাদেরও নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, টাকার বিনিময়ে ইট ছুড়িয়েছে বিএসএফ। মমতার এমন মন্তব্যে ছড়িয়েছে বিতর্ক। মমতার এমন মন্তব্যে পাল্টা এনআইএ তদন্তের দাবি করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) সাফ কথা, এনআইএ তদন্ত হলেই আসল রহস্য সামনে চলে আসবে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘এই জন্যই তো এনআইএ চাই। প্রমাণ হয়ে যাবে কে করেছে। ধুলিয়ানের চেয়ারম্যান, সামশেরগঞ্জের বিধায়ক, ফারাক্কার বিধায়কের দাদা, এরা কী করেছে আমরা ভিডিও দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছি।’’
প্রসঙ্গত, মৌলবাদীদের তাণ্ডবের চেয়ে এদিন বিএসএফ-কেই বেশি আক্রমণ করেন মমতা। বিএসএফের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে তদন্ত হবে বলেও জানান তিনি। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীকে এই নিয়ে তুলোধনা করেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘বিএসএফ দেশের গর্ব। তারা সীমান্তে প্রাণ বাজি রেখে কাজ করে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী বারবার বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এটা শুধু অপমান নয়, দেশের নিরাপত্তাকে দুর্বল করার চক্রান্ত। রাজ্য পুলিশ যেখানে ব্যর্থ, সেখানে বিএসএফ সামনে থেকে মানুষকে নিরাপত্তা দিয়েছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লাগাতার আক্রমণ করছেন। ১১ এপ্রিল শমসেরগঞ্জ ও ফারাক্কার হিংসাত্মক পরিস্থিতিতে যখন রাজ্য পুলিশ কার্যত ব্যর্থ, তখন বিএসএফই সাধারণ মানুষকে রক্ষা করেছে।’’
Leave a Reply