মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন (Waqf Act), ২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা পিটিশন খারিজ করার জন্য শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) প্রাথমিক হলফনামা জমা দিয়েছে কেন্দ্র। সরকার ওই হলফনামা জমা দিয়ে জানিয়েছে, ওয়াকফ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণভাবে বৈধ। আরও জানিয়েছে, এই আইনের বিরুদ্ধে যে পিটিশন দাখিল করা হয়েছে তা ভ্রান্ত। এই আইন কখনও ধর্মীয় স্বাধীনতাকে হস্তক্ষেপ করেনি। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে এক সপ্তাহের ভিতরে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলেছিল। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র সরকার হলফনামা জমা দেয়। সেখানে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি উঠে এসেছে। ওয়াকফ আইন নিয়ে ইচ্ছাকৃত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিভ্রান্তিকর বিবরণ দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করে কেন্দ্র। মোদি সরকার আরও জানিয়েছে, সংসদে প্রণোদিত কোনও আইনের উপর এ ভাবে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়, তা হলে তা ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করার সমতুল্য!
কী জানাল কেন্দ্রীয় সরকার (Waqf Act)?
● কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ওয়াকফ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বৈধ এবং দেশের সংসদে আইন মেনেই তা পাশ করানো হয়েছে।
● দেশের সংসদে তৈরি করা সংশোধনী আইন সংবিধান মেনেই পাশ করানো হয়েছে।
● কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ২২ জনের ওয়াকফ কাউন্সিলে সর্বোচ্চ দুইজন অমুসলিম প্রতিনিধি থাকতে পারেন। এটা এমন একটা সংখ্যা যা ওয়াকফ বোর্ডের কোনও সিদ্ধান্তকেই প্রাভাবিত করতে পারবে না।
● দেশের সংসদ তার নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কাজ করেছে, যাতে ওয়াকফ বোর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
● কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, বেশ কিছু মিথ্যাচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে ওয়াকফ সংশোধনীর মাধ্যমে মৌলিক অধিকারকে সংশোধন করা হয়েছে। এটা ঠিক নয়।
● কেন্দ্রের মতে, ওয়াকফ সংশোধনী আইনকে যেভাবে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, তা আসলে এদেশের বিচারবিভাগীয় মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে যায়।
● কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে সরকারি এবং বেসরকারি সম্পত্তির একাধিক অপব্যবহার সামনে এসেছে।
● কেন্দ্র জানিয়েছে, যৌথ সংসদীয় কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনা বিশ্লেষণের মাধ্যমেই এই সংশোধনী আইন আনা হয়েছে।
● কেন্দ্র জানিয়েছে, কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে তা না জেনে, একটা বিধানের (সংসদে পাশ করা আইন) ওপর স্থগিতাদেশ জারি করা অনভিপ্রেত। যদি সংসদে প্রণোদিত কোনও আইনের উপর এ ভাবে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়, তা হলে তা ক্ষমতার ভারসাম্য (Waqf Act) নষ্ট করার সমতুল্য!
১৭ এপ্রিল মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টকে হলফনামা দিতে বলে কেন্দ্র
প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিলই (Waqf Act) এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ১৯৯৫ সালের আইনে নথিভুক্ত রয়েছে এমন ওয়াকফ সম্পত্তিতে কোনওরকমের বদল ঘটানো যাবে না। একইসঙ্গে, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল, নিয়োগ করা যাবে না ওয়াকফ বোর্ড বা পর্ষদেও। তখনই কেন্দ্রকে সাত দিনের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশও দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই মতো শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকার প্রাথমিক হলফনামা জমা করল শীর্ষ আদালতে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব শেরশা সি শেখ মহিউদ্দিন এই হলফনামা জমা দেন শীর্ষ আদালতে।
৩৬ বার যৌথ সংশোধনী কমিটির বৈঠক, ৯৭ লক্ষেরও বেশি অংশীদারের পরামর্শ
প্রসঙ্গত, লোকসভা এবং রাজ্যসভাতে ওয়াকফ সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার আগে যৌথ সংশোধনী কমিটির ৩৬টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানা গিয়েছে, ৯৭ লক্ষেরও বেশি অংশীদার তাঁরা নিজেদের পরামর্শ দিয়েছেন। যৌথ সংসদীয় কমিটি দেশের দশটি বড় শহরে ঘুরে জনসাধারণের মতামত নিয়েই নয়া ওয়াকফ আইনের খসড়া তৈরি করেছে। প্রসঙ্গত, ওয়াকফ সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার আগে পর্যন্ত যেকোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ প্রপার্টি হিসেবে ঘোষণার অধিকার এতদিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। অতীতে বহুবার এদের বিরুদ্ধে গরিব মুসলমানদের সম্পত্তি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের (Waqf Act) ব্যক্তিগত সম্পত্তি হরণের অভিযোগ উঠেছে। তবে নয়া সংশোধনীতে এই অধিকার একেবারে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কোন সম্পত্তি ওয়াকফ হবে এবং কোনটি ওয়াকফ নয় তা বিচার করা চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা দরকার ১৯৫৪ সালে প্রথমবার ওয়াকফ আইন পাশ করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনের সংশোধন এনে ফের ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বাড়িয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।
Leave a Reply