মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গত পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের জন্য প্রতিবেশী দেশ চিন সফরে গিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jaishankar)। সোমবার চিনের রাজধানী বেজিংয়ে চিনের (China) উপ-রাষ্ট্রপতি হান ঝেং-এর সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। উল্লেখ করেন ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির বিষয়টি। জয়শঙ্করের আশা, তাঁর সফরের সময় যেসব আলোচনা হবে, তা এই ইতিবাচক ধারাই বজায় রাখবে।
জয়শঙ্করের বার্তা (S Jaishankar)
এবার এসসিও-র (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন) সভাপতিত্ব করেছে চিন। হান ঝেং-এর সঙ্গে বৈঠকে জয়শঙ্কর তাকে সমর্থন জানান। এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে ভারতের বিদেশমন্ত্রী লেখেন, “আজ বেইজিংয়ে পৌঁছানোর পরপরই উপ-রাষ্ট্রপতি হান ঝেং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভালো লাগল। চিনের এসসিও সভাপতিত্বের প্রতি ভারতের সমর্থন জানিয়েছি। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির বিষয়টিও উল্লেখ করেছি এবং আমার সফরের বিভিন্ন আলোচনা এই ইতিবাচক ধারাকে বজায় রাখবে বলেই আশা করছি।”
কী বললেন জয়শঙ্কর
এদিন হান ঝেং-এর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই জয়শঙ্কর জানান যে, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে সফরের আলোচনাগুলি ইতিবাচক ধারার দিকেই যাবে। তিনি বলেন, “কাজানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাক্ষাতের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগোচ্ছে।” তিনি বলেন, “ভারত চিনের সফল এসসিও সভাপতিত্বকে সমর্থন করে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আপনি (চিনের উপরাষ্ট্রপতি) যেমন বলেছেন, তা গত অক্টোবরে কাজানে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর থেকে ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে, আমার এই সফরের আলোচনাগুলি সেই ইতিবাচক ধারাকেই বজায় রাখবে।” ভারতের বিদেশমন্ত্রী বলেন, “ভারত ও চিন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছে। কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা ফের শুরু হওয়ায় ভারতে তা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে (S Jaishankar)।” চিনের (China) উপরাষ্ট্রপতিকে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছি। কৈলাস মানস সরোবর যাত্রার পুনরারম্ভ ভারতে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে। এতে উপকৃত হবে দুই দেশই।”
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে জটিল
বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে জটিল আখ্যা দিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা যখন আজ সাক্ষাৎ করছি, তখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। প্রতিবেশী দেশ এবং প্রধান অর্থনীতি হিসেবে, ভারত ও চিনের মধ্যে মুক্তভাবে মত ও দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় অত্যন্ত জরুরি। আমি এই সফরের সময় এমন আলোচনার প্রত্যাশাই করছি (S Jaishankar)।” প্রসঙ্গত, সিঙ্গাপুর সফর শেষে চিনে গিয়েছেন জয়শঙ্কর। সোমবার সেখানেই চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে পারেন তিনি। জয়শঙ্কর এবং ওয়াং ই শেষবারের মতো গত ফেব্রুয়ারি মাসে জোহানেসবার্গে জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেখানে উভয় পক্ষই পারস্পরিক আস্থা ও সমর্থনের ওপর জোর দেন।
এসসিওর বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক
১৫ জুলাই তিয়েনচিনে অনুষ্ঠিত হবে এসসিওর বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক। মূলত সেই বৈঠকে যোগ দিতেই চিনে গিয়েছেন জয়শঙ্কর। ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিয়েনচিনে অনুষ্ঠিতব্য এসসিও কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টারস বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী চিন সফর করবেন। এছাড়াও, তিনি ওই সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও অংশ নেবেন।” ২০২০ সালে গালওয়ানে ভারত ও চিনের সেনাদের মধ্যে সংঘাত হয়। সেই ঘটনার পর এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। তার পর এই প্রথমবার চিনে গেলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। জয়শঙ্করের আগে শি জিনপিংয়ের দেশে গিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। জুন মাসে এসসিও বৈঠকে অংশ নিতেই সে দেশে গিয়েছিলেন রাজনাথ ও ডোভাল।
ভারতে আসতে পারেন ওয়াং ই
এদিকে, আগামী (S Jaishankar) মাসে ভারত সফরে আসতে পারেন ওয়াং ই। তিনি বৈঠক করবেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে। এটি হবে বিশেষ প্রতিনিধি প্রক্রিয়ার আওতায় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ (China) মেটানোর পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকায় যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি ছিল গত ৪০ বছরের মধ্যে ভারত ও চিনের মধ্যে সব চেয়ে খারাপ সীমান্ত সংঘর্ষ। ওই সংঘর্ষে প্রাণ হারান দুই দেশেরই কয়েকজন করে সেনা। এই ঘটনার পরেই তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ভারত ও চিনের মধ্যে।
দুই দেশের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া সেই উত্তেজনার পারদ কমাতেই সচেষ্ট হয়েছে দুই দেশই। গত অক্টোবরে রাশিয়ার কাজানে এক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে পার্শ্ববৈঠক হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। সেখানেই ঠিক হয় দুই দেশের মধ্যে থেমে যাওয়া আলোচনা ফের শুরু করা হবে। সেই মতোই চলছে (China) সব কিছু। ফের শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে (S Jaishankar) বন্ধ থাকা কৈলাস মানস সরোবর যাত্রাও।
Leave a Reply