Malati Murmu: অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে বিনা পয়সার স্কুল গড়েছেন মালতী মুর্মু, পড়ছে আদিবাসী শিশুরা

Malati Murmu builds mud school Ayodhya hills to educate forgotten tribal children

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের (Ayodhya Hills) কোলে ছোট্ট গ্রাম। নাম জিলিং সেরেং। পাহাড়ের হিলটপ থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরে। নেই আধুনিকতার ছোঁয়া। নেই বিদ্যুৎ, নেই রাস্তা। নেই সুযোগ-সুবিধা। তাতে কি! জনজাতি গ্রামের এক গৃহবধূ, এক মা নিজেই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন শিক্ষার মশাল। নাম মালতী মুর্মু (Malati Murmu)। দুই মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে প্রায় ৪৫ জন শিশুকে পড়াচ্ছেন তিনি। না, কোনও বেতন নেই। নেই সরকারি সার্টিফিকেট। নেই মিড-ডে মিলের সাহায্য। আছে জনজাতি মায়ের এক অদম্য এক ইচ্ছাশক্তি। আছে ভালোবাসা। রয়েছে সংকল্প। সমাজকে বদলাতে হবে। সকাল হলেই মালতী দিদিমণির স্কুল শুরু হয়। একটা নামমাত্র ঘর রয়েছে। আছে কিছু খাতা-কলম, আর অনেকগুলো খুদে মুখ। যাদের চোখে রয়েছে স্বপ্ন। আর দিদিমণির কাছে শেখার আগ্রহ।

করোনার ঢেউয়ে থেমে গিয়েছিল পৃথিবী, তখনই শুরু হয়েছিল মালতীদেবীর পথচলা

২০২০ সালে করোনার প্রথম ঢেউয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা পৃথিবী। লকডাউনের সময় বন্ধ ছিল স্কুল। অনলাইনে পড়াশোনা শুরু হয়, কিন্তু সেই সময় গ্রামের অধিকাংশ ছেলেমেয়ের কাছেই স্মার্টফোন ছিল না। তখনই মালতি মুর্মু (Malati Murmu) নিজে একটি স্কুল গড়ার কথা ভাবেন। তিন-চারজন শিশুকে নিয়ে শুরু পথচলা। এই গ্রামে মোট পরিবার রয়েছে ৯৫টি। তবে অধিকাংশ লোকজনই জানেনা পড়াশোনা। শিক্ষার আলো হাতে মালতীদেবীর এগিয়ে চলা মুছে দিচ্ছে গ্রামের অশিক্ষার আলো।

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন মালতীদেবী

জানা যায়, মালতি মুর্মুর (Malati Murmu) বিয়ে হয় ২০১৯ সালে। তারপর তিনি জিলিং সেরেং গ্রামের এক বাড়িতে আসেন। তখন তাঁর কোনও পরিকল্পনাই ছিল না শিক্ষক হওয়ার। অন্যান্য মহিলাদের মতো তিনিও বাড়ির কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এরপর তিনি লক্ষ্য করেন যে, গ্রামে একটি স্কুল আছে বটে, তবে শুধুমাত্র তার পরিকাঠামোই আছে—সেখানে কেউ পড়াতে আসেন না। এরপরেই তিনি নিজের একটি ঘরে স্কুল শুরু করেন। জানা যায়, তিনি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।

কোন কোন বিষয় পড়ানো হয়?

বর্তমানে ৪৫ জন পড়ুয়া প্রতিদিন মাটিতে বসে মালতি মুর্মুর কাছে ক্লাস নেন। তারা পড়েন ও লেখেন সাঁওতালি ভাষায় এবং অলচিকি অক্ষরে। এর পাশাপাশি সেখানে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক ও বিজ্ঞানও পড়ানো হয়। জানা যাচ্ছে, মালতি মুর্মু (Malati Murmu) নিজেই বলেন, শিক্ষা শুধুমাত্র পরীক্ষা পাশ করার জন্য নয়—শিক্ষা কুসংস্কার দূর করে, শ্রদ্ধাবোধ আনে এবং সমাজে সমতা গড়ে তোলে। প্রথমে যখন মালতি এই স্কুল খুলেছিলেন, তখন অনেকেই এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এখন প্রত্যেকেই তাঁকে বিশ্বাস করেন এবং নিজেদের সন্তানদের তাঁর কাছে পড়তে পাঠান ভবিষ্যৎ নির্মাণের আশায়।

নিজের সংকল্পে অটুট ছিলেন মালতী, শিক্ষিত করতেই হবে শিশুদের

এমন উদ্যোগের কথা মালতীদেবী প্রথম তাঁর স্বামীকে জানান। পেশায় কৃষিজীবী স্বামী প্রথমে সায় দেননি (Ayodhya Hills)। সংসার, সন্তান, খেতের কাজ সব সামলে আবার পড়ানো! কীভাবে সম্ভব! কিন্তু মালতী মুর্মুর অদম্য মনোবলের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি কোনও কিছুই। অবশেষে স্বামীও বুঝলেন। পাশে দাঁড়ালেন স্ত্রীর। একজন গৃহবধূ, একজন মা, নিজে হাতে গড়ছেন ভারতের ভবিষ্যৎ। মালতী মুর্মু যেন এক জীবন্ত প্রতিমা। যিনি আমাদের শেখাচ্ছেন, সমাজ বদলাতে লাগে মনের ইচ্ছা আর সংকল্প। এর সামনে টিকতে পারেনা কোনও বাধা।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share