Ayodhya Deepotsav: ২৬ লক্ষ প্রদীপে আলোকিত সরযূ! দীপাবলিতে গিনেস বুকে জোড়া রেকর্ড অযোধ্যার

Deepotsav 2025

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দীপাবলির আলোয় আলোকিত অযোধ্যা (Ayodhya Deepotsav)। উত্তরপ্রদেশের পবিত্র শহর ইতিহাস গড়ল বিশ্বমঞ্চে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে অযোধ্যার দীপোৎসবে তৈরি হল এক নয়, দুটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। সরযূ নদীর দুই তীর সেজে উঠল ২৬ লক্ষ প্রদীপে। একসঙ্গে ২ হাজারেও বেশি মানুষ আরতি করলেন। দীপাবলিতে আগেও রেকর্ড গড়েছে উত্তর প্রদেশ। অযোধ্যায় সরযূ নদীর তীরে ধুমধাম করে পালিত হয় দীপোৎসব। জ্বালানো হয় লাখ লাখ প্রদীপ। গত বছরও গিনেস বুকে নাম তুলেছিল অযোধ্যা। এবার সেই রেকর্ড ভাঙল তারাই।

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ফের অযোধ্যা

প্রতি বছরের মতো এবারও দেশ ও বিশ্বের নজর ছিল সরযূ নদীর তীরে। দীপ উৎসব (Deepotsav 2025) উপলক্ষে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রামকথা পার্কের মঞ্চে রামের প্রতীকী রাজ্যাভিষেক করেন। এরপর, রাম মন্দির পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম তলায় রাম দরবারের সামনে মাথা নত করে আশীর্বাদ গ্রহণ ও রামলালার পুজোর পর, মুখ্যমন্ত্রী যোগী কমপ্লেক্সের প্রধান প্রবেশপথের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপোৎসবের উদ্বোধন করেন। দীপোৎসব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অযোধ্যার মানুষ ৫৬টি ঘাটে ২৬,১৭,২১৫টি প্রদীপ জ্বালিয়ে রেকর্ড গড়া হয়। প্রথম রেকর্ডটি ‘সবচেয়ে বেশি মানুষ একসঙ্গে প্রদীপ ঘোরানোর’ জন্য। দ্বিতীয়টি ‘সবচেয়ে বড় প্রদীপ প্রজ্বলন প্রদর্শনী’র জন্য। মাত্র ১৫ মিনিটে এতগুলি প্রদীপ জ্বালিয়ে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম ওঠে রামভূমির। এই ঐতিহাসিক আয়োজনের দায়িত্বে ছিল উত্তরপ্রদেশ পর্যটন দফতর, অযোধ্যা জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য সরকার।

ভারতের আধ্যাত্মিক ঐক্যের প্রতীক

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর অফিসিয়াল প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে এই অসাধারণ মুহূর্তের সাক্ষী থাকেন। তাঁরা রেকর্ডের প্রমাণ যাচাই করে উত্তরপ্রদেশ সরকারের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি সার্টিফিকেট তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, “অযোধ্যা আজ শুধু আলোয় নয়, ভক্তিতে ও ঐতিহ্যে উজ্জ্বল। এটি ভারতের আধ্যাত্মিক ঐক্যের প্রতীক।” এদিন সরযূ ঘাটে দাঁড়িয়ে লাখো দর্শক দেখেছেন এক অনন্য দৃশ্য যতদূর চোখ যায়, ততদূর পর্যন্ত সারি সারি প্রদীপ। এই দীপোৎসবে অংশ নেয় হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী, স্থানীয় বাসিন্দা, ছাত্রছাত্রী এবং তীর্থযাত্রী।

ড্রোন শো থেকে আতশবাজির প্রদর্শনী, কড়া নিরাপত্তা

সরযূ নদীর তীরে ২,১২৮ জন বেদাচার্যের উপস্থিতিতে মহাআরতির পরই মুখ্যমন্ত্রী যোগীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বিশ্বরেকর্ডের শংসাপত্র। তার আগে, অযোধ্যায় একটি ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১,১০০টি ড্রোনের মাধ্যমে আকাশে রামের প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হয়। রাম কি পৌড়িতে আয়োজিত লেজার এবং ড্রোন শো ছিল দেখার মতো। চলে আতশবাজির প্রদর্শনী। অসাধারণ সেই দৃশ্য উপভোগ করতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান রাস্তায়। রামায়ণ অভিনয় করে দেখানো হয়। রামলীলা অভিনয় করতে ৫টি দেশ থেকে শিল্পীরা এসেছিলেন। কোনওরকম দুর্ঘটনা এড়াতে ছিল কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। অযোধ্যাকে ১৮টি জোন এবং ৪২টি সেক্টরে ভাগ করে ১০ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয় ওই অঞ্চলে। পিএসি, আরএএফ, এটিএস, বিডিএস এবং স্থানীয় পুলিশ ছিল সর্বত্র। রাম কি পৌড়ি এবং রামপথের পাশের বাড়িগুলির ছাদে মোতায়েন করা হয় সশস্ত্র সেনা। অ্যান্টি-মাইন দল, ব্যাগেজ স্ক্যানার এবং ফায়ার ব্রিগেডও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রেও উজ্জ্বল অযোধ্যা

উত্তরপ্রদেশ পর্যটন বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য অযোধ্যাকে বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে আরও উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরা। তাদের মতে, দীপোৎসব আজ শুধুমাত্র এক ধর্মীয় আচার নয় এটি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। বিশেষজ্ঞদের মতে, অযোধ্যার দীপোৎসব এখন কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতের ‘সফট পাওয়ার’-এর প্রতীক যা বিশ্বে ভারতের ঐতিহ্য, ঐক্য ও ভক্তির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন, “রাম রাজ্যের আদর্শে আমরা এগিয়ে চলেছি। এই দীপোৎসব বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, বিশ্বাস ও ঐতিহ্য একসঙ্গে থাকলে ইতিহাস তৈরি হয়।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share