Vitamin B: শরীরে কতখানি জরুরি ভিটামিন বি? কীভাবে ঘাটতি মেটাবেন?

vitamin b deficiency effects remedies health tips

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজ করার শক্তিও থাকছে না। সামান্য কারণেই মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। হাত-পা অসাড়‌! মাঝেমধ্যেই পেটের সমস্যা দেখা দেয়। আবার খাবার ইচ্ছেও থাকে না। সবমিলিয়ে বাড়ছে ক্লান্তি বোধ। একধরনের বিষন্নতা গ্রাস করছে। ক্রমশ এই ধরনের সমস্যা বাড়ছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই সবকিছুর নেপথ্যে রয়েছে একটি ভিটামিনের ঘাটতি। সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভিটামিন বি ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। পুষ্টি সম্পর্কে অসচেতনতাই এই ধরনের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর তার ফলে শরীরে গভীর প্রভাব পড়ছে।

ভিটামিন বি ঘাটতি শরীরে কী সমস্যা তৈরি করে?

রক্তাল্পতা!

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শরীরে ভিটামিন বি ঘাটতি হলে রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভিটামিন বি লোহিত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এই লোহিত কোণিকা রক্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেই উপাদান পর্যাপ্ত তৈরি না হলেই রক্তাল্পতার সমস্যা হয়।

অন্ত্রের একাধিক রোগ!

অন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং কার্যকারিতা বজায় রাখতে ভিটামিন বি খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভিটামিন বি অভাব ঘটলে অন্ত্রের নানান সমস্যা হয়। তাঁরা জানাচ্ছেন, শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। লাগাতার পেটের সমস্যা হতে থাকে। খাওয়ার ইচ্ছে কমতে থাকে। এর ফলে দূর্বলতা, অপুষ্টি আরও বাড়ে।

স্নায়ুর রোগের কারণ!

ভিটামিন বি অভাবে স্নায়ুর একাধিক সমস্যা হয়। এই ভিটামিনের অভাবে ক্লান্তি বোধ বাড়ে। হাত ও পায়ের স্নায়ুর শক্তি কমে। সামান্য হাঁটাহাঁটি করলেই ঝিনঝিন ভাব বাড়ে। অসাড়তা হয়। চলার ভারসাম্য কমে। স্নায়ুর শক্তি কমার জেরেই মস্তিষ্কের ক্ষমতা ও কমে। স্মৃতিশক্তি কমে। ভারসাম্য নষ্ট হয়। জীবনের নানান কাজে এগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করে।

মানসিক স্বাস্থ্যে সমস্যা তৈরি করে!

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শরীরের পাশপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেও এই ভিটামিনের অভাব প্রভাব ফেলে। ভিটামিন বি ঘাটতি হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ক্লান্তি বোধ অতিরিক্ত রাগের কারণ হয়ে ওঠে। অকারণেই রাগ, বিষন্নতা মনকে আচ্ছন্ন করে। যা মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।

ত্বক ও চুলের একাধিক সমস্যার কারণ!

ভিটামিন বি অভাব ত্বকের উপরে গভীরভাবে পড়ে। এমনটাই জানাচ্ছেন‌ চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে ত্বক খসখসে হয়ে যায়। ত্বকের উপরে ঘা হয়। ত্বকের পাশপাশি চুলের সমস্যাও দেখা যায়। চুল পড়ার অন্যতম কারণ ভিটামিন বি ঘাটতি।

গর্ভবতীর জন্য বাড়তি বিপদ!

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, গর্ভবতীর জন্য ভিটামিন বি ঘাটতি খুবই বিপজ্জনক। তাঁরা জানাচ্ছেন, মায়ের ভিটামিন বি অভাব হলে শিশুর স্নায়বিক গঠনে ত্রুটি হতে পারে। যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি।

কীভাবে ভিটামিন বি ঘাটতি মেটাবেন?

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভিটামিন বি ঘাটতি পূরণ করবে খাবার। নিয়মিত কিছু ঘরোয়া খাবার মেনুতে রাখলেই এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সহজ হয়। কিন্তু পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এ দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিয়মিত মেনুতে ডাল থাকা জরুরি। মুগ, মুসুর, মটর কিংবা ছোলা, যেকোনও ডাল নিয়মিত খেলে ভিটামিন বি ঘাটতি মেটানো সহজ হয়। ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে ডাল অবশ্যই খাওয়া প্রয়োজন। তাহলে ভিটামিনের ঘাটতি সহজেই পূরণ হয়।

ডালের পাশপাশি পালং শাক, ব্রোকলির মতো সব্জি নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত সবুজ সব্জি খেলে ভিটামিন বি ঘাটতি সহজেই পূরণ হয়। পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্মের নানান পুষ্টি ঘটিত সমস্যার মূল কারণ পর্যাপ্ত সবুজ সব্জি না খাওয়া। নিয়মিত সবুজ সব্জি খেলে এই ধরনের সমস্যা সহজেই এড়ানো‌ যায়।

নিয়মিত মাছ, মুরগীর মাংস, ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের প্রাণীজ খাবার প্রোটিনের পাশপাশি ভিটামিন বি চাহিদা সহজেই পূরণ করে। তাছাড়া এই ভিটামিনের ঘাটতি মেটাতে রোজ দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত দুধ খেলে শরীরে একাধিক ভিটামিনের চাহিদা পূরণ সহজ হয়।

পুষ্টিবিদদের একাংশের মতে, ঘরের তৈরি রুটি, সব্জি, ডাল কিংবা ডিম সেদ্ধ, চিকেন স্ট্রুর মতো খাবার শরীরের জন্য খুবই উপকারি। এগুলো অতিরিক্ত ওজনের কারণ হয় না। বরং শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত চাহিদা পূরণ করে। নানান রোগ রুখতেও সাহায্য করে। তাই নিয়মিত এই ধরনের পুষ্টিকর খাবার খেলে একাধিক রোগ মোকাবিলাও সহজ হয়ে যায়।

 

 

DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share