Bangladesh Jet Crash: মান্ধাতা আমলের যুদ্ধবিমান কেনার পরিণাম! অধিক চিন-প্রীতির খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ?

bangladesh jet crash dhaka made in china f-7 fighter jet another failure

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কথাতেই রয়েছে, ‘চায়নার মালের কোনও গ্যারান্টি নেই।’ বাজারে সস্তার জিনিসকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বোঝাতেও মানুষজন ‘চাইনিজ মাল’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে থাকে। এই ধারণা যে অমূলক নয়, তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রমাণিত। সাংসারিক হোক বা সামরিক— চিনা জিনিস কোথাও নির্ভরযোগ্য নয়। একে ভরসা করেছে কী মরেছে! ঠিক যেমনটা টের পাচ্ছে ভারতের দুই প্রান্তের দুই প্রতিবেশী। হালে, অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতের বিরুদ্ধে চিনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে একেবারে পর্যুদস্ত হয়েছে পাকিস্তান। এবার বাংলাদেশও টের পেতে শুরু করেছে ‘চাইনিজ মাল’-এর অর্থ। সোমবার, ঢাকার উত্তরায় একটি স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল বাংলাদেশ বায়ুসেনার একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ‘এফ-৭বিজিআই’ বিমানটি চিনের একটি সংস্থা তৈরি করে। সংস্থার নাম চেংডু এয়ারক্র্যাফট কর্পোরেশন। যারা কিনা পাকিস্তানকে জে-১০ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে।

৩৩ বছরে ২৭ যুদ্ধবিমান ধ্বংস

পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক দশকে একাধিক চিনা যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়েছে। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, বাংলাদেশে চিনা যুদ্ধবিমানের দুর্ঘটনার কবলে পড়ার খতিয়ান। সেদেশের সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১৯৯২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের অন্তত ২৭টি যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সেই সব বিমানের বেশিরভাগই চিনের তৈরি। বিশেষ করে এফ-৭, এফটি-৭ এবং পিটি-৬ মডেলের বিমানই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। গত ২০ বছরের সময়সীমা ধরলে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার সংখ্যা ১১। তার মধ্যে ৭টি চিনের তৈরি। আবার, শেষ ১৭ বছরে ভেঙে পড়েছে চিন থেকে কেনা চারটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান। ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলে একটি এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে বিমানটির পাইলট উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ নিহত হন। ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে প্রশিক্ষণের সময় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ বিমান ভেঙে পড়ে। এর আগে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমান ধ্বংস হয়ে তামান্না রহমান নামের এক পাইলট নিহত হন।

রুশ মিগ-২১ বিমানের সস্তা কপি এফ-৭

আদতে, বাংলাদেশের এফ-৭ যুদ্ধবিমানটিকে রাশিয়ার মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের সস্তা কপি-ও বলা যেতে পারে। সাবেক সোভিয়েতের তৈরি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানকে নকল করে ষাটের দশকে লাল ফৌজের জন্য তৈরি করা হয়েছিল জে-৭ নামে এক-ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানটি। পরে বিদেশেও রফতানি হয় এই যুদ্ধবিমানকে। তবে, জে-৭ নামে নয়, এফ-৭ নাম দিয়ে। চিনের তৈরি এফ-৭ যুদ্ধবিমান এক সময় অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য ছিল তুলনামূলক কম খরচে আকাশ প্রতিরক্ষার একটি সমাধান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সমাধান আজ পরিণত হয়েছে বিপদে। মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়ায় নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের চেয়ে এফ-৭ জেটের দুর্ঘটনার হার বেশি। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, ইরানসহ আরও কয়েকটি দেশে ব্যবহার হওয়া এই বিমানটি এখন প্রায়ই শিরোনামে আসে—বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণে। এর প্রধান কারণ, পুরনো নকশার এয়ারফ্রেম, সীমিত নিরাপত্তা, আধুনিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব ইত্যাদি। ইঞ্জিনের ব্যর্থতা থেকে শুরু করে কারিগরি এবং পাইলটের ত্রুটির সঙ্গে জড়িত অসংখ্য কারণ বিভিন্ন সময়ে রিপোর্ট করা হয়েছে। তবে, সোমবারের দুর্ঘটনার কারণ ঠিক কী, এখনও অবধি সবিস্তার তা জানা যায়নি।

বাংলাদেশের মধ্যেই এবার উঠছে প্রশ্ন

বর্তমান বাংলাদেশের কাছে ২০১৩ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া এফ-৭ সংস্করণের ৩৬টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই এফ-৭ বিজিআই ভ্যারিয়েন্ট। তবে এফ-৭ এমবি ও এফটি-৭ ভ্যারিয়েন্টও রয়েছে। একাংশের মতে, চিনের তৈরি এই সব ফাইটার এয়ারক্র্যাফটকে যুদ্ধবিমান না বলে ‘উড়ন্ত কফিন’ বলাই ভালো। সোমবারের দুর্ঘটনার পর থেকেই চিন থেকে সস্তায় সমরাস্ত্র কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। যদিও এই বিষয়ে বাংলাদেশ বায়ুসেনা কিংবা তদারকি সরকারের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে, বাংলাদেশ মুখে কুলুপ আঁটলেও, সময়টা খারাপই চলছে চিনের, বিশেষ করে চেংডুর চিনা যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী সংস্থাগুলির। প্রথমে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে পাক বায়ুসেনার জে-১০ ও জেএফ-১৭ বিমান ভূপতিত। সম্প্রতি, মায়ানমারে বিদ্রোহীদের স্টিঙ্গার মিসাইলে ভূপতিত জুন্টার বায়ুসেনার চিনা যুদ্ধবিমান। এখন বাংলাদেশে দুর্ঘটনার কবলে চিনা যুদ্ধবিমান। গত কয়েক মাসে, চিনা যুদ্ধবিমান সংস্থাগুলির শেয়ারের মূল্যে বিরাট পতন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবারেই চেংডুর শেয়ার দর ২ শতাংশ পড়েছে।

খয়রাতি সাহায্য এবং কম দামের আশায়…

সামান্য কিছু খয়রাতি সাহায্য এবং কম দামের আশায় চিন থেকে একের পর এক মান্ধাতা আমলের যুদ্ধবিমান কিনেই চলেছে বাংলাদেশ। তার ফলে খেসারত দিতে হচ্ছে সেদেশের বায়ুসেনাকেই। তবে, সোমবারের ঘটনার পর চিন থেকে সরে অন্য দেশ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার কথা ভাবনাচিন্তা করছে বাংলাদেশ, এমন খবর সেদেশের সংবাদমাধ্যমের একাংশে প্রকাশিত হয়েছে। এখানেই প্রশ্ন, তাহলে কি অবশেষে চিন থেকে মন উঠল মহম্মদ ইউনূসের? কিছুদিন আগে পর্যন্ত তো চিনে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব তথা সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন তিনি? এবার কি তাহলে ‘চিনা মাল’-এ ভরসা রাখতে পারছেন না মহম্মদ ইউনূস? সেটা অবশ্য সময়ই বলবে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share