মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাক অধিকৃত গিলগিট-বালটিস্তানে (POK) নজিরবিহীন গণবিপ্লব। বিপাকে ইসলামাবাদ ও বেজিং। টানা তিনদিন ধরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারাকোরাম হাইওয়ে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা (Gilgit Baltistan)। ফলে সীমান্তপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যান চলাচল। সমস্যার মুখে চিনের বিপুল বিনিয়োগ (CPEC)।
আন্দোলনের মূল কারণ (CPEC)
এই হাইওয়েটি পাকিস্তানকে চিনের জিনজিয়াং প্রদেশের সঙ্গে খুনজেরাব পাস হয়ে যুক্ত করে এবং এটি এখন বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দমননীতি, প্রশাসনিক অবহেলা এবং সেনাবাহিনীর শোষণের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। এটি শুরু হয়েছিল সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার প্রতিবাদে। বর্তমানে তা পরিণত হয়েছে পাকিস্তানের অঞ্চল দখলের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহে। এই আন্দোলনের মূল কারণ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে খুনজেরাব পাস দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া। এর ফলে গিলগিট-বালটিস্তানের শত শত ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২০০টি পণ্যবাহী কনটেনার সাস্ট ড্রাই পোর্টে পচে যাচ্ছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা। কর্মহীনতার হার বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে, আর সেই সঙ্গে বেড়েছে জনরোষও।
অর্থনীতি ধ্বংস
এলাকার অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য বিক্ষোভকারীরা সরাসরি পাকিস্তানের ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ এবং কাস্টমস বিভাগকে দায়ী করেছে। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “মূলভূমি পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা কর ছাড় পায়, অথচ গিলগিট-বালটিস্তানে আমাদের ওপর কর চাপানো হয়, আমাদের উপেক্ষা করা হয়, শোষণ করা হয়, সংসদে কোনও প্রতিনিধিত্ব না থাকা সত্ত্বেও (CPEC)।” ওয়াকিবহাল মহলের মতে, জিনজিয়াং থেকে গওদর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য করিডর তৈরির যে স্বপ্ন চিন দেখত, তা যেন অতিকায় এক প্রশ্নের মুখে। কারাকোরাম হাইওয়ে, যেটিকে চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর বা সিপিইসির “মেরুদণ্ড” বলা হয়, এখন পরিণত হয়েছে এক চাপে থাকা জায়গায়। এই বিক্ষোভ যদি চলতে থাকে, তাহলে বহু বিলিয়ন ডলারের সিপিইসি প্রকল্প এক মারাত্মক লজিস্টিক সংকটে পড়বে। বালুচিস্তানে বিদ্রোহীদের হামলার জেরে চিনা বিনিয়োগ এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
অস্থিরতায় অস্থির চিন
এই অস্থিরতা চিনের কাছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা পাওয়ার সামর্থ্য নিয়ে বড় ধরনের সন্দেহ তৈরি করতে পারে। যদিও চিন এখনও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে, তবে নিঃসন্দেহে তারা পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে (Gilgit Baltistan)। জানা গিয়েছে, গিলগিট-বাল্টিস্তানের গুলমাত নগরে অবস্থান বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ। বিক্ষোভকারীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান ও চিনের সংযোগকারী হাইওয়েটি যান চলাচলের জন্য বন্ধ থাকবে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন হুনজা, গিলগিট এবং অন্যান্য সংলগ্ন শহর থেকে আসা ব্যবসায়ী, পণ্ডিত এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা (CPEC)।
ব্যাপক বিক্ষোভ
গিলগিট-বালটিস্তানে প্রস্তাবিত একটি বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হওয়ার এক মাস পরেই এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তাঁদের জমির অবৈধ দখলের বিরোধিতা করে ‘কাবজে পার কাবজা নামঞ্জুর’ (আমরা বারবার দখল প্রত্যাখ্যান করি) স্লোগান দেন। শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে কারাকোরাম হাইওয়েতে আটকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী এবং পর্যটক। রাস্তার দু’পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে যানবাহন। বিক্ষোভকারীরা বলেন, “ফেডারেল বোর্ড অফ রেভিনিউ এবং কাস্টমস বিভাগের নীতি স্থানীয়দের অর্থনৈতিকভাবে হত্যা করেছে, যার ফলে পরিবহণকারী, দোকানদার, শ্রমিক, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এজেন্ট, হোটেল মালিক এবং ছোট ব্যবসায়ীরা মাসের পর মাস বেকার হয়ে পড়েছেন। কারণ তাঁরা চিনের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল।”
কোনওভাবেই বাণিজ্য পুনরায় শুরু হবে না
বিক্ষোভকারীদের সাফ কথা, কোনওভাবেই বাণিজ্য পুনরায় শুরু হবে না। আটকে থাকা পণ্যবাহী যানও ছাড়া হবে না। হাইওয়ে খোলা হবে না। তাঁদের একমাত্র দাবি, অ্যামনেস্টি স্কিমের মাধ্যমে পণ্য ছাড় এবং আইনসম্মত বাণিজ্য পুনরায় চালু করতে দিতে হবে। এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ (CPEC)। গিলগিট-বালটিস্তান সরকার এই দাবিগুলির বৈধতা স্বীকার করলেও দায় চাপিয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদের কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন ফেডারেল সরকার রহস্যজনকভাবে চুপ করে রয়েছে, যা ক্ষোভ আরও উসকে দিচ্ছে (Gilgit Baltistan)।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই হাইওয়ে অবরোধ কোনও হঠাৎ ঘটনার ফল নয়। এটা বহু বছরের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্বিচারে জমি দখল, প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট এবং জনকল্যাণ উপেক্ষা করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও এপ্রিল মাসের আগের বিক্ষোভগুলিতে গমের ভর্তুকি কমানো, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পৈতৃক জমি দখলের ইস্যু তুলেও কোনও গুরুত্ব পায়নি (Gilgit Baltistan)। তাই এবার হাইওয়ে অবরোধ (CPEC)।
Leave a Reply