মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অযোধ্যার প্রাচীন মন্দিরনগরী ফের একবার ভক্তির সুরে মুখর হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রাম লালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র (Ram Mandir Ayodhya) পর, এবার আসছে আরও এক মহার্ঘ মুহূর্ত—‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা ২.০’। আগামী ৫ জুন, গঙ্গা দশহরার দিন এই নতুন ধর্মীয় অধ্যায় শুরু হচ্ছে, যেখানে প্রথম তলায় রাজারূপে রামচন্দ্রের প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে। বালক রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছিল ১৫ মাস আগে। এবার অযোধ্যায় হবে রামলালার রাজ্যাভিষেক পর্ব। মন্দিরের প্রথম তলায় রামদরবার বা রাজদরবার স্থাপনের পরে, রাজা রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
রামমন্দির নির্মাণের কাজ শেষের পথে
রাজদরবার স্থাপনের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিক ভাবে অযোধ্যার রামমন্দির (Ram Mandir Ayodhya) নির্মাণের কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু ৩ দিনের এই প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান (Pran Pratistha)। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাম দরবার’। ৮টি মন্দিরে আট বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। অনুষ্ঠানে কোনও রাজনৈতিক নেতা এবং ভিআইপি-কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শুধু থাকবেন ধর্মগুরুরা। বিতর্ক এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে। রামমন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র আগেই জানিয়েছিলেন, নির্মাণকাজ ৫ জুনের মধ্যে শেষ হলেও, মন্দিরের নীচের অংশে ভগবান রামের কাহিনী খোদিত দেওয়ালচিত্রগুলি স্থাপন করার কাজ বাকি থাকবে। ৫ জুন প্রাণ প্রতিষ্ঠার এক সপ্তাহ পর, মন্দিরের নবনির্মিত অংশগুলি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
রাজা রাম-এর আরাধনায় দ্বিতীয় দফার উৎসব
শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে, তিন দিনের অনুষ্ঠানে (৩-৫ জুন) থাকছে বৈদিক যজ্ঞ, পুজো, শোভাযাত্রা, ও মহা আরতি। শহরজুড়ে রং-বেরঙের পতাকা, গাঁদাফুলের মালা ও রঙ্গোলিতে সেজে উঠেছে পথঘাট। তবে ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই জানিয়েছেন, “এই অনুষ্ঠান কোনও জনসমাগম বা রাজনৈতিক জমায়েত নয়, বরং একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুষঙ্গ। তাই অযথা ভিড় না করে, কেবল রাম লালার দর্শনে ইচ্ছুকরাই আসুন।” রাজা রাম-এর ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’—৫ জুন বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে সম্পন্ন হবে। সেই দিন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের জন্মদিনও, তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
বালক রাম থেকে রাজা রাম
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রামচন্দ্রের বালক রূপের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মন্দিরের নিচতলায় গর্ভগৃহে। এবার মন্দিরের প্রথম তলায় রাজা রূপে রামের প্রতিষ্ঠা হবে। তাঁর সঙ্গে থাকবে দেবী সীতা, লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন ও ভক্ত হনুমান—যিনি সেবা ও ভক্তির চিহ্ন হয়ে থাকবেন। মূল দেবমূর্তির পাশাপাশি, মন্দিরের পরিধিতে (পরিকোটায়) সাতটি প্রধান মন্দিরে বিভিন্ন দেব-দেবীর ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ হবে। বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, দেবতাদের অবস্থান ঠিক করা হয়েছে। ঈশান কোণে শিব, অগ্নি কোণে গণেশ, দক্ষিণে হনুমান, নৈঋতে সূর্যদেব, ব্যায়ব্য কোণে ভগবতী, উত্তরে অন্নপূর্ণা, দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে শেশাবতার লক্ষ্মণ-এর মন্দির প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়াও, বাল্মীকি, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, অহল্যা, শবরী ও নিশাদ রাজের নামে সাতটি মন্দিরে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ সম্পন্ন হবে।
সোনার শিখর: ভক্তির শিরমণি
নতুন এই পর্বে সবচেয়ে নজরকাড়া স্থাপত্যিক সংযোজন হল ‘স্বর্ণ শিখর’—রাম মন্দিরের (Ram Mandir Ayodhya) সোনায় মোড়া চূড়া। নগর শৈলীর ঐতিহ্য মেনে নির্মিত এই শিখরটি মন্দিরের আধ্যাত্মিক চূড়া বা ‘মেরু’র প্রতীক। এটি মাইলের পর মাইল দূর থেকে দৃশ্যমান, ভক্তির দীপ্ত প্রতীক।
নিরাপত্তার চূড়ান্ত ব্যবস্থা
উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ১০,০০০-এরও বেশি পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ড্রোন, সিসিটিভি ক্যামেরা ও মাল্টি-লেভেল চেকপোস্টের সাহায্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। অযোধ্যার জেলা শাসক নিখিল তিকরাম ফুন্ডে জানিয়েছেন, “যাত্রী ও দর্শনার্থীদের জন্য যথাযথ স্থান ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে কোনও ভক্তর কোনও অসুবিধা না হয়।”
২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে সম্পূর্ণ মন্দির
২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর, ২০২০ সালের ৫ অগাস্ট ভূমি পূজনের মাধ্যমে রাম মন্দির (Ram Mandir Ayodhya) নির্মাণের সূচনা হয়। এরপর থেকে দ্রুতগতিতে মন্দির নির্মাণ চলছে। ৩৮০ ফুট দীর্ঘ, ২৫০ ফুট প্রস্থ ও ১৬১ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন মন্দিরটি সম্পূর্ণভাবে গোলাপি বেলেপাথরে নির্মিত হচ্ছে। ৩৯২টি খোদাইকৃত স্তম্ভ ও ৪৪টি অলঙ্কৃত দরজা রয়েছে এই মন্দিরে। ২০২৫ সালের অক্টোবর নাগাদ পুরোপুরি মন্দিরের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র বলেন, “এই নির্মাণ শুধুই আধ্যাত্মিক না, এটি আমাদের জাতীয় গর্ব এবং সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক।”
Leave a Reply