Rana Sanga: ইব্রাহিম লোদি থেকে বাবর, তাঁর হাতেই হন পরাস্ত, জানুন রানা সঙ্গের বীরত্বগাথা

Rana Sanga The braveheart who stood up against Mughal barbarian Babar

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ রামজি লাল সুমন সম্প্রতি রানা সঙ্গ সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সংগ্রাম সিং যিনি রানা সঙ্গ (Rana Sanga) নামে পরিচিত তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে উল্লেখ করেছেন সমাজবাদী পার্টির এই নেতা। এতেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়ও উঠেছে এহেন মন্তব্যের প্রতিবাদে। গত শনিবার রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমাজবাদী পার্টির সাংসদ বলেন, ‘‘রানা সঙ্গ ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করার জন্য বাবরকে ভারতে ডেকেছিলেন।’’ এই কারণে রানা সঙ্গকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ। তবে গবেষকরা বলছেন, ‘‘সমাজবাদী পার্টির সাংসদের এমন দাবি বিকৃত তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং এটা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।’’ বাস্তবতা হল, রানা সঙ্গ নিজেই একাধিকবার ইব্রাহিম লোদিকে পরাস্ত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এর বাইরে গুজরাট এবং মালোয়ার সুলতানের সেনাবাহিনীকে বেশ কয়েকবার পরাস্ত করেন এই ভারতীয় রাজা। শুধু তাই নয়, বায়নার যুদ্ধে রানা সঙ্গের কাছে পরাস্ত হন খোদ বাবরও।

সংগ্রাম সিংয়ের দাপটে পরাস্ত হন বাবরও (Babar)

১৫২৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাবর ও সংগ্রাম সিংয়ের বাহিনী বায়নার যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হয়। এই যুদ্ধে বাবরের বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হয়। স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম এরস্কাইন লিখছেন, সংগ্রাম সিংয়ের বীরত্ব সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন বাবর। কিন্তু বায়নার যুদ্ধে তিনি প্রথমবারের জন্য মুখোমুখি হন এই ভারতীয় রাজার। এরস্কাইনের মতে, মুঘলরা বুঝতে পেরেছিল যে রানা সংগ্রাম সিং (Rana Sanga) আফগানদের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। বায়নার যুদ্ধ সম্পর্কে মুঘল সম্রাট বাবর তাঁর আত্মজীবনী বাবরনামায় লিখছেন, ‘‘কাফেররা এত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করছিল যে মুঘল সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল।’’ ইতিহাসবিদ কৃষ্ণরামের মতে, সংগ্রাম সিং বাবরকে একজন অত্যাচারী এবং বিদেশি আক্রমণকারী হিসেবে বিবেচনা করতেন। তিনি দিল্লি এবং আগ্রা জয় করে এই বিদেশি আক্রমণকারীদের শেষ করতে চেয়েছিলেন। বাবরের সঙ্গে এই যুদ্ধে (বায়নার) রানা সঙ্গকে সমর্থন করেন অনেক ভারতীয় রাজা। মারওয়ারের শাসক রাও গঙ্গার পুত্র মালদেব, চান্দেরির মেদিনী রায়, মের্তার রাইমল রাঠোর, সিরোহির আখেরাজ দুদা, ডুঙ্গারপুরের রাওয়াল উদয় সিং, সালুম্বরের রাওয়াত রত্না সিং, সাদারীর ঝালা আজা প্রমুখরা রানা সঙ্গকে (Rana Sanga) সমর্থন করেন।

একশোটিরও বেশি যুদ্ধ করেছিলেন রানা সঙ্গ (Rana Sanga)

ব্যাপক শক্তিশালী সেনা ছিল রানা সঙ্গের। ইব্রাহিম লোদিকে একাধিকবার পরাস্ত করতে সক্ষম হন এই ভারতীয় রাজা। তাঁর দাপটের সামনে টিকতে পারতেন না অত্যাচারী সুলতানরা। এমন একজন রাজাকে কেন বাইরের কারও সাহায্য নিতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য রানার সঙ্গের বিরোধীরা দিতে পারেননি। এমন প্রসঙ্গ নিয়ে কোনও কথা বলতেও শোনা যায়নি সমাজবাদী পার্টির সাংসদকে। জানা যায়, ১৫০৮ সালেই মেবারের শাসক হয়ে ওঠেন রানা সঙ্গ। নিজের জীবনে ১০০টিরও বেশি তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। এরমধ্যে একমাত্র খানুয়ার যুদ্ধে তিনি পরাস্ত হয়েছিলেন। রানা সঙ্গের এই দাপট এবং বীরত্বের জন্য তাঁকে ‘হিন্দুপত’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল। জানা যায়, যুদ্ধে লড়তে গিয়ে তিনি নিজের একটি চোখ এবং একটি হাতও হারিয়েছিলেন। শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে তাঁর একটি পা নষ্ট হয়ে যায়। রানা সঙ্গের বা সংগ্রাম সিংয়ের শরীরে আশিটিরও বেশি গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানা যায়। তবুও কোনও কিছুতেই তিনি দমেননি।

২ লাখ পদাতিক বাহিনী, ৮০ হাজার ঘোড়া ছিল রানা সঙ্গের

জানা যায়, সংগ্রাম সিংয়ের (Rana Sanga) আমলে মেবারের সীমানা দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময়ে মেবারে সীমানা ছিল পূর্বে আগ্রা, যা বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত এবং দক্ষিণে গুজরাট পর্যন্ত বিস্তৃত। রাজপুতানার ইতিহাসে নিয়ে গবেষণা করেছেন কর্নেল জেমস। তিনি জানাচ্ছেন, রানা সংগ্রাম সিংয়ের ছিল ৮০ হাজার ঘোড়া, ৫০০ হাতি এবং প্রায় দু’লক্ষ পদাতিক সৈন্য। এছাড়াও কর্নেল জেমস নিজের একাধিক লেখায় উল্লেখ করেছেন, সংগ্রাম সিংয়ের অধীনে ছিলেন ৭ জন রাজা, ৯ জন রাও, ১০৪ জন রাওয়াল। গোয়ালিয়র, আজমীর, সিক্রি, চান্দেরী, রামপুরা প্রভৃতি স্থানের রাজারা সংগ্রাম সিং-কে সম্রাট বলে গণ্য করতেন।

একাধিক যুদ্ধে পরাস্ত হন ইব্রাহিম লোদি

জানা যায়, রানা সঙ্গ দিল্লি, মালওয়া, গুজরাটের সুলতানদের সঙ্গে ১৮টি ভয়ঙ্কর যুদ্ধে করেন। প্রত্যেকটি যুদ্ধেই তিনি জিতে যান। ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদির সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয়। যা খাটোলীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে এই রানা সঙ্গ ইব্রাহিম লোদিকে পরাস্ত করেন। ১৫১৮-১৯ সালে ইব্রাহিম লোদি ফের একবার আক্রমণ করে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজস্থানের দোলপুরে ইব্রাহিম লোদি রানা সঙ্গকে ফের একবার পরাস্ত করেন। এরপরে আরও বেশ কয়েকটি যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে রানা সঙ্গ পরাস্ত করতে সক্ষম হন। ক্রমাগত যুদ্ধে পরাস্ত হওয়ার কারণে রাজস্থানে পায়ের তলার জমি হারান ইব্রাহিম লোদি। অন্যদিকে, ১৫২০ সালে রানা সঙ্গ নিজাম খানের সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করেন। এর ফলে সমগ্র উত্তর গুজরাট নিজের দখলে আনতে পারেন রানা সঙ্গ।

বাবরকে ভারতে কারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল?

অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, পাঞ্জাবের গভর্নর দৌলত খান দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদির স্থলাভিষিক্ত হতে চেয়েছিলেন। তিনি জানতেন যে আফগানিস্তান জয়ের পরে বাবর ভারতেই আসবেন। একইসঙ্গে ইব্রাহিম লোদির কাকা আলম খানও মসনদ দখল করতে চেয়েছিলেন। জানা যায়, আলম খান এবং দৌলত খান এই দুইজনে মিলে বাবরকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। জানা যায়, আলম খান বাবরের দরবারে গিয়েছিলেন। সেখানে আলম খান বাবরকে ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা জানান। পরবর্তীকালে বাবর তার দূতকে পাঞ্জাবে পাঠান। সেই দূতের কাছ থেকে যাবতীয় বিষয় জানার পরে বাবর ভারত জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। প্রথমে ১৫০৩, ১৫০৪ এরপর ১৫১৮ এবং তারপরে ১৫১৯ সালে তিনি ভারত আক্রমণ করেন। তবে কোনওবারই সফলতা পাননি। পরে ১৫২৬ সালে বাবর ইব্রাহিম লোদিকে আক্রমণ করেন ও পরাস্ত করেন। ইব্রাহিম লোদি এর আগে একাধিকবার রানা সঙ্গকে হাতে মার খেয়ে ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তাই পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে সহজেই পরাস্ত করেন বাবর (Babar)।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share