মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভায় পাশ হল বাংলাদেশ (Bangladesh) ইস্যুতে প্রস্তাব। এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ওই প্রস্তাবে সাফ বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া আক্রমণগুলিকে রাজনৈতিক হামলা বলে চালিয়ে দিলে হবে না। যদি এমনটা হয় সেক্ষেত্রে তা হামলার ধর্মীয় দিকটিকে অস্বীকার করা হয় ও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়।’’ আরএসএসের মতে, ‘‘অশান্ত বাংলাদেশে হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।’’ তাই এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলেও মনে করেছে আরএসএস। এবিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপেরও দাবিও জানিয়েছে আরএসএস।
বাংলাদেশের হিংসা হিন্দু বিরোধী নয়, ভারত বিরোধীও বটে
আরএসএস (RSS) নিজেদের প্রস্তাবে আরও জানিয়েছে, কেবল সরকারকে স্মারকলিপি দিলেই এক্ষেত্রে কাজ মিটবে না। সংঘ সর্বদা সমাজের শক্তিতে বিশ্বাস করে। সমাজে যখনই কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তখন সমগ্র সমাজের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর সমাধান খুঁজে বের করা। সংঘের ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশে যে ধরনের হিংসা চলছে তা কেবল হিন্দু-বিরোধী নয় বরং ভারত-বিরোধীও বটে। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশে হিন্দু ও ভারতীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’’
হিন্দু মঠ-মন্দিরে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ (RSS)
আরএসএসের (RSS) ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশে (Bangladesh) উগ্র ইসলামপন্থীদের হাতে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই ধরনের হামলায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মঠ, মন্দির, দুর্গাপুজো প্যান্ডেল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ, দেবদেবীর মূর্তি ভাঙচুর, হিন্দুদের সম্পত্তি লুটপাট, নারীদের অপহরণ, শ্লীলতাহানি এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার মতো অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। এগুলি রাজনৈতিক হামলা বলে চালিয়ে দিলে হবে না। যদি এমনটা হয় সেক্ষেত্রে তা হামলার ধর্মীয় দিকটিকে অস্বীকার করা হয় ও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়।’’
হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন বাংলাদেশে, বলছে পরিসংখ্যান
সংঘের (RSS) ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে তফশিলি জাতি এবং তফশিলি উপজাতিদের উপর এমন নির্যাতন নতুন কিছু নয়।’’ এপ্রসঙ্গে সংঘের দাবি, ‘‘বাংলাদেশে ১৯৫১ সালে যেখানে ছিল ২২ শতাংশ হিন্দু, সেখানে আজ তা ৭.৯৫ শতাংশে নেমে এসেছে।’’ সংঘের মতে, ‘‘এই ক্রমহ্রাসমান হিন্দু জনসংখ্যাই বলে দিচ্ছে, সনাতনীরা সেদেশে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছেন।’’
সংঘের প্রস্তাবে রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি
সংঘের তরফ থেকে বাংলাদেশ ইস্যুতে জাতি সংঘের হস্তক্ষেপও চাওয়া হয়েছে। আরএসএসের ওই প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, ‘‘রাষ্ট্রসংঘ সমেত বিশ্বজুড়ে থাকা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির উচিত বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া অত্যাচারের ঘটনাগুলিতে গুরুত্ব সহকারে দেখা।’’ এর পাশাপাশি, হিংসা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়া উচিত বলেও মনে করছে সংঘ। একই সঙ্গে আরএসএস বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক চক্র অস্থির করতে চাইছে ভারতকে
সংঘের (RSS) প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চক্র ভারতে অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য চক্রান্ত করছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে অবিশ্বাস ও সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। আরএসএস মনে করে, ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং সামাজিক বন্ধন রয়েছে প্রতিবেশী দেশের। এই কারণে যেকোনও অস্থিরতা সমগ্র অঞ্চলে উদ্বেগ তৈরি করছে।’’
বাংলাদেশ (Bangladesh) ইস্যুতে পদক্ষেপ করেছে মোদি সরকার
আরএসএসের মতে, ‘‘বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ সাহসিকতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, সম্মিলিত এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে হিংসার প্রতিবাদ করছে ও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ঘটনা।’’ আরএসএসের প্রস্তাবে বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদি সরকারের যে ভূমিকা, তার ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ভারত সরকার বাংলাদেশের হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে। ভারত সরকার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বিষয়টি উত্থাপন করেছে। অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা ভারত সরকারকে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা, মর্যাদা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
Leave a Reply