RSS: “হিন্দুত্ব হল নীতি, আরএসএস হল তার প্রয়োগ”, বললেন মোহন ভাগবত

Rss sarsanghchalk mohan bhagwat

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “সংঘ এবং আরও অনেক মহান নেতা ও চিন্তাবিদ এমন একটি মৌলিক চিন্তাধারার ভিত্তি গড়ে তুলেছেন, যা সম্পূর্ণভাবে ঔপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত। সেটি যেমন আছে, আমাদের তেমনভাবেই তা আত্মস্থ করতে হবে।” চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথাগুলি বললেন সরসংঘচালক মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। আরএসএসের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতকে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা কতদূর এগিয়েছি এবং সামনে পথই বা কী, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন আমি বলি ‘রাষ্ট্র’ পশ্চিমী অর্থে একটি ‘নেশন’ নয়, তখন রাষ্ট্র মানে সংস্কৃতি, ভারতমাতা এবং আমাদের পূর্বজ পরম্পরা। সমস্যা তৈরি হয় তখনই, যখন আমরা ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে পাশ্চাত্য কাঠামোর মাধ্যমে এই ধারণাগুলিকে বোঝার চেষ্টা করি।”

হিন্দুস্থানের চোখে চিন্তা করার অভ্যাস (RSS)

সংঘে একজন স্বয়ংসেবক প্রাথমিক পর্যায়ে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচি, বৌদ্ধিক আলোচনা, সংগীত এবং এমনকি দৈনন্দিন অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনের মাধ্যমে তাঁর মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো হয়। যেখানে যেখানে আমাদের শাখাগুলি কাজ করে, সেখানকার মানুষ ধীরে ধীরে ভিন্নভাবে দেখতে ও ভাবতে শুরু করেন। এটি একটি ধারাবাহিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, “সব কিছু এমনভাবে সঞ্চারিত করা হয় যাতে আমরা হিন্দুস্থানের চোখে চিন্তা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। এটি ধীরগতির কাজ। প্রায় ষাট লাখ স্বয়ংসেবকের মধ্যে কেউ কেউ এই মানসিকতা পুরোপুরি আত্মস্থ করেছেন, আবার অনেকের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য হল, আমরা যেন স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় হিসেবে চিন্তা করি, আমেরিকানকৃত বা ইউরোপীয়কৃত ভারতীয় হিসেবে নয়।”

‘হিন্দু’ পরিচয়টির উদ্ভব

ভাগবত বলেন (Mohan Bhagwat), “‘হিন্দু’ পরিচয়টির উদ্ভব হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাবনা থেকে, এবং সেই ধারাই আজও অব্যাহত রয়েছে। সংবিধান প্রণয়নের আগেও যে সত্তা ছিল, সেই সত্তাই সংবিধানের প্রস্তাবনাকে রূপ দিয়েছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়বিচারের আদর্শ। নানা রকম হিন্দু যখন উপলব্ধি করবেন যে উপাসনার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও তাঁরা সকলেই হিন্দু, হিন্দুস্তানি, তখন সাংবিধানিক স্বীকৃতি আসতে পারে। তবে হিন্দু রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও সমৃদ্ধির জন্য তা অপরিহার্য নয়। সব হিন্দু যদি বলেন, “আমরা হিন্দু”—তাই যথেষ্ট।” প্রশ্ন ওঠে, খ্রিস্টানদের জন্য বাইবেল যেমন সর্বজনীন ধর্মগ্রন্থ, মুসলমানদের কোরান। হিন্দুদের জন্য একটি সর্বজনীন ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে আরএসএসের অবস্থান কী, এবং কেন (RSS)। এদিন তারও উত্তর দেন ভাগবত। তিনি বলেন, “সংঘের অবস্থান আমাদের সভ্যতার অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বভাব থেকেই উৎসারিত। এখানে বহু পথ ও বহু গুরু রয়েছেন। ঐক্য এই উপলব্ধিতে যে লক্ষ্য এক, যদিও সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পদ্ধতি ভিন্ন। হিন্দুত্ব কেবল তথ্যের বিষয় নয়, এটি একটি নীতি, যা কেবল আচরণ ও সাধনার মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পায়। হিন্দুত্ব হল নীতি, আর আরএসএস হল তার প্রয়োগ। এটি কোনও একক সর্বজনীন গ্রন্থের প্রযুক্তিগত দাবি নয়, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আধ্যাত্মিক সভ্যতার স্বীকৃতি ও ঘোষণামাত্র (Mohan Bhagwat)।”

‘গো সংবর্ধন’

আরএসএস প্রধান বলেন, “আমাদের আলাদা ‘গো সংবর্ধন’ বিভাগ রয়েছে। এই বিভাগের দায়িত্ব হল ভারতীয় গরুর দেশি জাতগুলিকে রক্ষা করা, মানুষকে সেগুলি পালনে উৎসাহিত করা এবং স্থানীয় জাতগুলির প্রসার ঘটানো।” তামিলনাড়ুতে সংঘের বিস্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে এবং তাদের জানাতে হবে। আমাদের জীবনযাপন ও আমাদের উদ্দেশ্য তাদের দেখাতে হবে। যখন তারা আমাদের উদ্দেশ্যের পবিত্রতা দেখবেন, তখন আমাদের ওপর বিশ্বাস করতে শুরু করবেন। এখানে কোনও বিশেষ ভুল বোঝাবুঝি নেই, কেবল কিছু সাময়িক দ্বিধা আছে, যা আলাপ-আলোচনা ও যোগাযোগের মাধ্যমে দূর করা যায়।” ভাগবত বলেন, “যুক্তি মানুষকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে, আর জীবন্ত উদাহরণ ভুল ধারণা দূর করে। নাগপুরে আমাদের সর্বভারতীয় শিবিরে মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ভেতর থেকে আমাদের দেখলে সব সংশয় দূর হয়ে যায়। তামিলনাড়ুতে জাতীয় চেতনার অভাব নেই (RSS)। এই অনুভূতি অন্য যে কোনও জায়গার মতোই শক্তিশালী। যা নেই, তা হল এই অনুভূতির পূর্ণ প্রকাশের অনুকূল পরিবেশ। কৃত্রিম বাধা তৈরি করা হয়েছে। যদিও সেগুলি টিকে থাকতে পারে না, কারণ জাতীয় চেতনা যখন সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়, তখন সেই বাধাগুলি ভেঙে পড়ে। সেই পরিবেশ ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে।” তিনি বলেন (Mohan Bhagwat), “অনেকে আনুষ্ঠানিক কোনও যোগাযোগ ছাড়াই সংঘের আদর্শে জীবনযাপন করেন। এর মূল সত্তা হল জীবনাচরণ ও ব্যক্তিগত উদাহরণ। আমরা সমাজের ওপর আস্থা রাখি এবং ঘরে ঘরে পৌঁছনোর মতো পর্যাপ্ত বিস্তার আমাদের রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এমন নাগরিক গড়ে তোলা, যারা সমগ্র ভারতকে একক সত্তা হিসেবে ভাববে (RSS)।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share